নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
কেউ কি নাই নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের দূর্ণীতি বন্ধ করার জন্য ? জেলা প্রশাসন, কারাগারের শীর্ষ কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের কেউ তো দেখি না কারাগারের ভিতরে আসলে অপরাধ কি পরিমাণ হচ্ছে । তা বন্ধ করতে কোন উদ্দ্যেগ কেন নেয়া হয় না ? তবে কি সকলেই ম্যানেজ ! এক কেজি গরুর মাংশ রান্না করার পর ওজনে তা কয়েক কেজি হয়ে যায় । ঝোলসহ গরুর রান্না করা মাংশ বিক্রে হচ্ছে ১৭ শ টাকা কেজিতে । সিদ্ধ আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০/৮০ টাকা কেজি । এ যেন দূর্ণীতিরহাট বাজারে পরিণত হয়েছে ।
সকল খাবার কিনে খেতে হলে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে তা কয়েদীদের কাছে বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের চিহ্নিত একটি সিন্ডিকেট । এমন লুটপাটের ঘটনা সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জানা থাকলেও প্রতিমাসে দপ্তরে দপ্তরে মাসোয়ারা পাঠানোর কারণে বহাল তবিয়্যতেই আছে লুটপাটকারী চক্রটি । তাদের থামানো অত্যান্ত কঠিন । এভাবেই নারায়ণগঞ্জ কারাগারে বন্দি কয়েকজন কয়েদী/আসামীদের কেউ কেউ অনর্গল বলতে থাকে কারাগারের দুঃসহ যন্ত্রণার কথা । টাকা থাকলে সব মিলে, টাকা না থাকলে কিছুই মিলে না বলেও মন্তব্য করেন কয়েদীরা।
জানা যায়, ট্রেন থেকে মাদকসহ বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদানের পর গত বছর সারাদেশের সকল কারাগারের ন্যয় নড়েচড়ে বসে নারায়ণগঞ্জ কারাগারের মহা দূর্ণীতিবাজ সিন্ডিকেটের সকলেই । এরপর নারায়ণগঞ্জ কারাগারে কিছুদিন দূর্ণীতির মাত্রা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আবার “যেই লাউ সেই কদু”র মতো অবস্থা হয়ে দাড়িয়েছে । নারায়ণগঞ্জ কারাগরের চরম দূর্ণীতির কারণে ২ হাজার বন্দি/ বন্দিদের স্বজন এবং প্রতিদিন জামিন প্রাপ্ত অসংখ্য ভূক্তভোগিদের তিক্ত অভিজ্ঞাতার খবর সকলের জানা থােকলেও কেউ যেন এমন দূর্ণীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখা যায় নাই ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে একজন কারারক্ষি বলেন, নারায়ণগঞ্জ কারাগারে প্রতি মাস প্রায় তিন কোটি টাকার লক্ষমাত্রা নিয়ে নানাভাবে বন্দি/আসামী/ কয়েদীদের স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা । এ যেন লাগামহীণ দূর্ণীতির ঘোড়া । নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে লূটপাটের ভিডিও চিত্র অসংখ্যবার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজড়ে আনা হলেও দূর্ণীতির লাঘামহীন ঘোড়া কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নাই ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাধারনত বন্দীদের সাথে দেখা করার জন্য বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ওপেন ভাবে টিকিট প্রতি ১৫০/২০০ টাকা করে দিতে হয় কারা কর্তৃপক্ষকে। এরপর টোকেন নিয়ে দেখা করতে হয় বিশাল জ্বালের এপাশ থেকে ওইপাশে।
অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই টিকিট টি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। দেশের কোথাও কয়েদীদের সাথে দেখা করার জন্য কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেনের নিয়ম নেই সরকারি ভাবে। অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ জেলা কারা কতৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে টিকিট ছাপিয়ে এনে দেখিয়ে সাধারন মানুষের থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে অত্যন্ত নিঁপুন ভাবে।
এছাড়া গেটে ঢোকার শুরুতেই হাতের মোবাইল ফোনটি জমা রাখার জন্য জনসাধারনকে দিতে হয় ৫/১০ টাকা করে। অথচ এই অর্থ আদায়েরও নেই কোনো সরকারি নিয়ম। বছর বছর পদ বদল হলেও বদলায় না এ বিশাল দুর্নীতি।
একইভাবে বন্দীদের সাথে আলাদা করে দেখা করার জন্য জনসাধারনকে গুণতে হয় ১৩০০ থেকে ১৭০০ টাকা। দায়িত্বরত জেলারের নির্দেশে এই মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে অফিস রুমেই দুই পক্ষের দেখা করার ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে নিয়মিতই, এবং এর জন্য কয়েদীর আত্মীয়কে দেয়া হয়না কোনো টোকেন বা মানি রিসিট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী থেকে আসা এক কয়েদীর আত্মীয় জানান, জমি-জমা নিয়ে বিরোধের কারণে শত্রুপক্ষের দেয়া মিথ্যে মামলায় ২ বছর ধরে আমার ছেলে হাজতবাস করছে। এই ২ বছরে কোনোদিনই টাকা ছাড়া ছেলের সাথে দেখা করতে পারিনি। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে দেখা করতে পারলেও জালের এপাশ থেকে ওইপাশে ছেলেকে অন্ধকারে ঠিকমতো দেখতে পারিনা, কথাও ঠিকমতো বলতে পারিনা। তাই অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়ে মাসে অন্তত ১/২ বার হলেও ১৩০০-১৭০০ টাকা খরচ করে জেলা সুপারের অনুমতি নিয়ে অফিস রুমে ছেলেকে ডেকে এনে দেখা করি।
একই অভিযোগ রূপগঞ্জ থেকে থেকে আসা এক আসামীর স্ত্রীর । তিনি বলেন, যতবারই জেলখানায় আসি স্বামীর সাথে দেখা করতে, ততবারই টাকা নিয়ে আসতে হয়। মেইন গেট দিয়ে ঢোকা থেকে শুরু করে স্বামীর সাথে কোনোমতে দেখা করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পর্যন্ত সবখানে টাকা দিতে হয়। যেদিন স্বামীর সাথে দেখা করতে আসি, সেদিন বাড়ি ফিরে গিয়ে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয় টাকার অভাবে।
এদিকে এসব অর্থ নেয়ার সরকারি কোনো নিয়ম নেই, তার পরও কেনো তারা আসামীর সাথে দেখা করার জন্য অর্থ খরচ করছে জানতে চাইলে অবাক হয়ে এ প্রতিবেদককে জানান, ‘আমরা তো জানি বন্দীদের সাথে কারাগারে দেখা করতে এলেই টাকা দিতে হয় এবং এটাই নিয়ম। কখনো এই নিয়মের বন্ধ হতে দেখিনি’।
অসংখ্য অভিযোগের ভিত্তিতে আবোরো ২১ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগরে উপস্থিত থেকে দেখা যায়, কারাগারের প্রধান ফটকে দাড়িয়ে থাকা কাররক্ষি ( সেন্ট্রি ) যে কোন আসামীর স্বজনকে জিজ্ঞেস করছে ভিআইপিতে দেখা করবেন নাকি ? ভিআইপিতে সাক্ষাতে রাজি হলেই বন্দির স্বজনদের নেয়া হচ্ছে অনুসন্ধান কক্ষ নামক টাকা গ্রহণকারীর কক্ষে । এই কক্ষে টাকা ১৫ শত টাকা জ,মা দেয়ার পর দেয়ার একটি বিশেষ টোকেন হাতে দিয়ে পাঠানো হচ্ছে কারাগারের মূল ফটকে। ৩/৪ জনের দল দেখা করতে গিয়ে আবার দিতে হচ্ছে ২/৩ শত টাকা ।
নারায়ণগঞ্জের ভূক্তভোগি অনেকের দাবী একটি সিন্ডিকেট ও জেলার প্রভাবশালী রাজনৈতিক চক্রের সহায়তায় সুভাষ ঘোষ প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে নানা ছলছাতুরী করে ও বন্দি আসামী কয়েদীদের জিম্মি করে । এমন লুটপাট যেন সকলকে নিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে সুভাষ সাহা ।
এমন প্রকাশ্যে লুটপাট দূর্ণীতির ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষের সাথে যোগাযোগ করা হলে. সাংবাদিক পরিচয় জানার পরই কোন কথা না শুনে জেরা কারাগারের আমূল পরিবর্তন, সরবারের সুণামের ফিরিস্তি জেলা প্রশাসনের সিুণামের ফিরিস্তির এক পর্যায়েজাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামও বিক্রি করতে সুভাষ সাহা কুণ্ঠাবোধ করে নাই । ৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের মুঠোফোনের আলোচনায় কারাগারের সুপার সুভাস ঘোষ অনর্গল নিজের সাফাই গাইতেও ব্যস্ত হয়ে পরেন । প্রতিবেদকের কোন প্রশ্নের উত্তরও দিতে চান নাই ।
Discussion about this post