নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
জেলা ডিবি পুলিশের অভিযানের পর মাত্র দুই / চারদিন জ্বালানী তেল চুরি বন্ধ থাকলেও আবারো জোড়েশোরেই চলছে চুরির মহোৎসব । স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার নাম ব্যবহার করে মাথার উপর মামলার খড়গ নিয়েও থেমে নেই তেল চুরি।
ট্যাংক মালিক সমিতির সভাপতি টোকাই থেকে কোটিপতি রহমত উল্লাহ ভান্ডারী (যার বাবা মায়ের কোন পরিচয় নাই), সেক্রেটারী সালাউদিন (আফসুর ছোট ভাই), মেঘনার ডিপোর ট্যাংক লড়ি মালিক সমিতির সভাপতি চোরদের হোতা আফসু, মোকলেস, পল্টি দেলু, ফরহাদ, কামাল, শাহিন, হিরু, ডলফিন দেলু, পাগলার মেয়ের জামাই ইব্রাহীম, সাবেক এমপি কবরীর ক্যাডার ও পঞ্চবটি ডালডা রোডের হাবিবুর রহমান মুন্সীর ছেলে পাভেল, পঞ্চবটির কোটিপতি বাবু, নূরা সেক্রেটারীর ভাই আবু সালাম, যমুনা ডিপো সংলগ্ন তিতাস মার্কেটের দোকানি ও আলেকের ছেলে রুবেল, একই এলাকার সরদার বাড়ির সাবেক যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম হিরোসহ পুলিশের মামলার আসামীদের পুরো চক্র সকাল ৯ টা থেকে পালাক্রমে ভোর রাত ৫টা পর্যন্ত অবিরাম জ্বালানী তেল চুরির কারবার চালিয়ে যাচ্ছে কয়েক অবিরাম গতিতে ।
কোথায় হচ্ছে না তেল চুরি ? এমন প্রশ্ন সামনে রেখে ফতুল্লার মেঘনা ও যমুনা ডিপোর বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে গত কয়েকদিন অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে ভীতিকর পরিস্থিতি । অচেনা কোন ব্যাক্তিকে দেখলেই সারাদিন ও সারা রাত লোক বসিয়ে পর্যবেক্ষনের ব্যবস্থাও করেছে তেলচোরদের গডফাদার রিপন, রহমত উল্লাহ ভান্ডারী, সালাউদিন, হাবিবুর রহমান মুন্সীর ছেলে পাভেলসহ পুরো চক্রের সদস্যরা । মামলার আসামী হওয়ায় নিজেদেরকে লুকিয়ে রেখে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচালনা করে যাচ্ছে জ্বালানী তেলের চোরাই কারবার । একেবারেই প্রকাশ্যেই দেখা যায় এই চুরির কর্মকান্ড ।
প্রকাশ্য এমন চুরির ঘটনা ছাড়াও প্রতিদিন প্রায় ৫০টি ট্যাংক লড়ি জ্বালানী তেল নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রওয়ানা হওয়ার আগেই ডিপোর ভিতরেই প্রতি গাড়ী থেকে ৩শ/৪শ/৫শ লিটার তেল ওজনে কম দেয় । এই তেল দিন শেষে ডিপোর কার্যক্রম বন্ধ হলে তেলচোরদের গডফাদার রিপন, রহমত উল্লাহ ভান্ডারী, সালাউদ্দিন ও আফসুর ইঙ্গিতে ভিন্ন ট্যাংক লড়ি পাঠিয়ে ডিপো কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে সারাদিনের ওজনে কম দেয়া প্রায় ১০ লাখ টাকার জ্বালানী বাইরে বিক্রি করে নিজেদেরে মধ্যে বাগবাটোয়ারা করে নেয়। প্রতিদিন এভাবেই চলছে চুরির কারবার । এরপর সন্ধ্যার মধ্যেই ডিপোতে তেলের মজুদের হিসাব মিলিয়ে সিলগালা করে দেয়া হয় ডিপো । প্রতিদিন চুরির এই মহোৎসব চালাতে নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করে চোর চক্র ।
জানা যায়, জ্বালানী তেল নিয়ে নারায়ণগঞ্জের প্রায় দেড় শতাধিক চোরাকারবারীর নানা তেলেসমাতির পর মাত্র একটি গোডাউনে হানা দিলে জেলা ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে তেল চোর চক্ররা তেলে বেগুণে জ্বলে উঠে । প্রথমে তিন তেল চোর গ্রেফতার হলে নানা তদ্বির করে ছাড়াতে না পেরে তেল চোরদের হোতা ইকবাল চৌধুরী তেল চুরির মামলার আসামী হয়েও উল্টো আদালতে ডিবি পুলিশের দুই দারোগা ও সোর্স আনোয়ার ও ক্যাশিয়ার নূরুর বিরুদ্ধে মামলা করে । এই ঘটনায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয় সর্বত্র । কয়েকদিন এমন তোলপাড় থাকলেও আবারো চালু রয়েছে চুরি ঘটনা ।
পলাতক থাকা অবস্থায় তেলচোর ইকবাল দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানার অজো পাড়াগাঁ মোল্লার হাট থেকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জের আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করলে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করে পলাতক রয়েছে চোরচক্রের সকল সদস্যরা । ইকবালের স্বীকারোক্তিতে বেড়িয়ে আসে কারা কারা তেল চুরিতে সাবিক সহায়তা দেয় এবং নেপথ্যে থাকা গডফাদার কারা । ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে গডফাদাররা নিয়মিত মাসোয়ারা নিলেও বর্তমানে সকলেই যেন মুখে কুলুপ এঁটেছেন । তেলচোরদের কে কোন নেতাদের কেউ ঠিক মতো চিনেন না বলেও দাবী করেছেন নিজস্ব আলোচনায় । এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের গণমাধ্যমকর্মীরাও গডফাদারদের নাম লেখার ক্ষেত্রে এবং প্রশ্ন করতেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছে ।
এই পুরো চক্রটিকে ফতুল্রার কিং মেকার হিসেবে পরিচিত শিল্পপতি মোহাম্মদ আলীর ভাতিজা রিপন ও অপর এক রাজনৈতিক স্থানীয় নেতা নানাভাবে শেল্টার দিয়ে যাচ্ছে বলেও জোড় অভিযোগ রয়েছে। এলাকার অনেকের অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, তেলচুরির রমরমা টাকায় এই চক্রটির সকলেই মদ, নারী, জুয়াসহ সকল ধরণের অপরাধের সাথে জড়ি থেকে পুরো ফতুল্লার পরিবেশ কলুষিদ করে তুলেছে ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে একজন তেল চোর ব্যবসায়ী বলেন, (যার অডিও ও ভিডিও রেকর্ড সংরক্ষনে রয়েছে) ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের প্রায় দেড় শতাধিক ব্যাক্তি সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তেল চুরির সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে । কোটি কোটি টাকার তেল চুরি করে পুরো চক্রের সকলেই বিশাল অট্টালিকার মালিক । এই তেল চুরির সাথে জড়িত রহমত উল্লাহ ভান্ডারীর ছেলে রনি, রকি ও মেয়ে সোানিয়া নিজেও নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ । সম্প্রতি এই সোনিয়া মাদক সহ ফতুল্লা পুলিশের হাতে আটক হলে মোটা অংকের টাকায় তাকে ছাড়িয়ে নেয় এলাকার প্রভাবশালীরা । এই তেল চুরির বিশাল একটি অংশ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে পৌছে যায় । মধ্যম সারির এক নেতা ১২ লাখ টাকা মানসায়ারা নেয শুধু সালাউদ্দিনের কাছ থেকে । পুরো তেল চোর চক্রের হোতারা পুলিশের অভিযানের ভয়ে এবং ইকবালের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তির কারণে সকলেই পালিয়ে থাকলেও আবার জামিন নিয়ে ভান্ডারী, আফসু, সালাউদ্দিন চক্র নতুন করে নানা পরিকল্পনা করে যাচ্ছে ।
এতো প্রকাশ্য অপরাধের ঘটনায় জেলায় দায়িত্বরত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা আসলে করছে টা কি ? এমন প্রশ্ন সকলের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে ।
Discussion about this post