নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নব বর্ষ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা শামীম ওসমান জেলা পুলিশ সুপারের আমন্ত্রণে সরকারী বাসভবনে আজ রোববার দুপুর মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেয়ায় আবারো তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বত্র । যা এখন টক অব দ্যা টাউন ।
জেলা সকল রাজনেতিক অঙ্গণ ছাড়াও সকলের মাঝে একই আলোচনা তাহলে সাংসদ শামীম ওসমান ইসদাইরের বাংলা ভবন কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে নেতা-কর্মীদের নিয়ে জরুরি কর্মীসভায় কে এতা কথা বলতে গেলেন ? তিনি তো আইন প্রণেতা । একজন সংসদ সদস্য ।
জানা যায়, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ যোগদানের পর ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর পুলিশের ব্যবহৃত ওয়্যারলেস সেট (বেতারবার্তা) দিয়ে গোপন নির্দেশনা ও তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে সাংসদ শামীম ওসমানের দেহরক্ষী কনস্টেবল মামুন ফকিরের কাছ থেকে ওয়্যারলেস সেট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। চলতি বছরের মার্চে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সাংসদের ছেলে অয়ন ওসমানের সঙ্গে কক্সবাজারে থাকার দায়ে দেহরক্ষী মামুন ফকিরকে কিশোরগঞ্জে বদলি করা হয়। এরপর শামীম ওসমানকে দেহরক্ষী দেওয়া হলেও তিনি তা এখনো নেননি।
পরবর্তিতে ১ এপ্রিল ফতুল্লার মেরী এন্ডারসনে (ভাসমান রেস্তোরা) সাড়াসী অভিযান চালিয়ে ৭০ জনকে গ্রেফতার করে । এই ঘটনায় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের শ্যালক তারভীর আহমেদ টিটুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় এই মেরী এন্ডারসনের শেল্টরদাতা হিসেবে । একই সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামের বিরুদ্ধে জিডি করে পুলিশ ।
এতো ঘটনার পর ৬ এপ্রিল নগরের ইসদাইরে অবস্থিত বাংলা ভবন কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে নেতা-কর্মীদের নিয়ে জরুরি কর্মীসভায় শামীম ওসমান এসপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘শাহ নিজামের (নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক) বিরুদ্ধে জিডি করবেন। টিটুর (শামীম ওসমানের শ্যালক) বিরুদ্ধে মদ স্লাপাইয়ের মামলা দিয়েছেন বলে আমি ভয় পেয়ে গেছি। মানুষ পোশাকধারী সন্ত্রাসীকে দেখতে চায় না। মশা মারতে কামান দাগাতে চাই না। আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে টের পাইবেন। এটা কিশোরগঞ্জ না এটা নারায়ণগহ্জ । চারা নাড়ায়ে দেবো বলে দীর্ঘ বক্তব্য দেন শামীম ওসমান ।
একই দিন ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় এসপি হারুন পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি দেন, ‘মাদক, সন্ত্রাস ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। অপরাধী যত বড় আর শক্তিশালী হোক না কেন, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
সংসদ সদস্য ও পুলিশ সুপারের এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের ৮ দিনের মধ্যেই এসপির বাংলোয় কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গেলেন সাংসদ শামীম ওসমান।
নানা বিষয়ে পাল্টাপাল্টি হুমকি আর হুঁশিয়ারিতে সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের উদ্যোগে আয়োজিত পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন আওয়ামী লীগের সাংসদ শামীম ওসমান। আজ রোববার দুপুরে তাঁরা এক টেবিলে বসে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেয়ার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবি ও ভিডিওসহ প্রচারের পর চাউর হয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন । যা এখন টক অব দ্য টাউন।
নারায়ণগঞ্জের এসপির বাংলোয় সাংসদ ও এসপির সঙ্গে ওই টেবিলে বসে খাবার খান নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামীলীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যার আনোয়ার হোসেন, নারায়ণগঞ্জের সরকারি কৌঁসুলি ওয়াজেদ আলী খোকন ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল প্রমুখ। সরকারী বাসভবনে আয়োজিত বৈশাখী উৎসবে আগত সকল অতিথিদের পাশাপাশি এসপি হারুন সাংসদ শামীম ওসমানকে স্বাগত জানানএবং এক সাথে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন । আজকের এই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পয়লা বৈশাখ ১৪২৬ উপলক্ষে জেলা পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ষবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বাঙালি খাবারের আয়োজন করা হয়। যেখানে ছিল পান্তাভাত, মাছ ভাজা, বিভিন্ন রকম ভর্তা, ফল, চটপটি ও কফির আয়োজন।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জে পুলিশ প্রশাসন ও ওসমান পরিবারের দ্বন্দ্বের বিষয়টি সকলের জানা । এসপি হারুন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও চাউর রয়েছে জেলাজুড়ে।
Discussion about this post