এনএনইউ রিপোর্ট :
সরকারের নির্দেশনা, দূদকের কঠোর হুসিয়ারী এবং আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের আহবানের পরও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে বিদ্যালয়ের অসাধু ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকরা। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অভিভাবক মহল প্রতিবাদে মূখর হয়ে উঠলেও আইনপ্রয়োককারী সংস্থা এখনো পর্যন্ত মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে বলে জোড়ালো অভিযোগ করেছে অভিভাবকদের অনেকেই।
এমন জোড়ালো অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যাপক অনুসন্ধানের বেড়িয়ে আসে নারায়ণগঞ্জের একজন শিক্ষা ব্যবসায়ী প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তার সাথে গোপন আতাঁত করে ঘটনা ধামাচাপা দিতে সমর্থ হন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সারাদেশের সকল বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ১৫৬৫ টাকা, মানবিক ও ব্যবসায়ী শিক্ষা বিভাগের জন্য ১৪৪৫ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকদের যোগসাজসে তা কয়েকগুণ ফি আদায় করছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে। বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি এর বাইরে এমন গলা কাটা ফি আদায়ের বিষয়ে যে কোন অভিভাবক প্রতিবাদ করলেই শিক্ষার্থীদের লাল মার্ক করে রেখে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছে শিক্ষা ব্যবসায়ীদের অনেকেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের একটি শিক্ষা ব্যবসায়ীর শিক্ষা প্রতিস্টানে অধ্যায়নরত একজন শিক্ষার্থীর বাবা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ”আমার সন্তানের ভর্তির সময় ৬০ হাজার টাকা ডোনেশন দিয়ে ভর্তি করিয়েছি এরপর প্রতিবছর নানাভাবে আমার কাছ থেকে ল্যাপটপ, বইসহ নানা উপঠৌকন হিসেবে টাকা আদায় করছে এই প্রতিস্টানটি । এখন এসএসসি পরীক্ষা সামনে রেখে আমার সন্তানের ফরম ফিলাপ করতে এসে দেখি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি এর বাইরে কয়েক গুণ ফি জমা দিতে হবে । বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলার পর তিনি আমার সন্তানের নামের পাশে লাল মার্ক করে রাখেন আমার সামনেই । এতেই বুঝতে পারি আমার সন্তানের শিক্ষার ক্ষেত্রে তারা ক্ষতি করতে পারে । তাই কোন প্রতিবাদ আর না করে ৯ (নয়) হাজার টাকা জমা দিতে বাধ্য হয়েছি। এমন বিষয়টি নিয়ে গত রোববার বিকেল ৩টায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে দেখি ওই কর্মকর্তার তিন তলাস্থ খাস কামড়া থেকে বের হয়ে আসছেন ঘৃন্য এই শিক্ষা ব্যবসায়ী। তখন চিন্তা করি আর কার কাছে বিচার দেবো এই অনিয়মের ?”
অভিভাবকদের অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, মডেল টেস্ট, জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত বেতনসহ নানা অজুহাতে নারায়ণগঞ্জের প্রায় সকল বিদ্যালয়ে নিম্নে সাড়ে ৪ হাজার আর উর্দ্ধে ১০ হাজার টাকা করে প্রতিটি এসএসসি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে বাড়তি ফি আদায় করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের গণবিদ্যা নিকেতন ৬ হাজার ৩০০ টাকা, আমলাপাড়া গার্লস স্কুল ৪৮০০ থেকে ৫৬০০টাকা, বন্দর বিএম স্কুল ৪০০ থেকে ৪৫০০টাকা, জয়গোবিন্দ হাই স্কুল ৪৫০০ থেকে ৫৩০০ টাকা, সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও আইইটি উচ্চ বিদ্যালয় ২৩০০ টাকা, হাজীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা বিদ্যা নিকেতন ৫৫০০ থেকে ৬৩০০ টাকা, হাজী উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪৫০০ থেকে ৫৬০০ টাকা, মর্গ্যাণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ৪৩০০ টাকা থেকে ৫৩০০ টাকা করে প্রতিটি শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে।
অভিভাবকদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার ক্ষেত্রে এমন অপকর্ম হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষা ব্যবসায়ী সকল দূর্ণীতিবাজদের উৎসাহিত করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলছে। আর এই শিক্ষা ব্যবসায়ীরা যখন দেখি আইনপ্রয়োগকারী শীর্ষ কর্মকর্তাদের খাস কামরা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন তখন আর কি বলার থাকে ? এতেই বোঝা যায় শিক্ষার্থীদের কারণে অভিভাবকরা জিম্মি হয়ে পরেছে ।
Discussion about this post