বিশেষ প্রতিনিধি :
মাত্র এক মাসের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জে আবারো গ্যাসের চূলার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে অগ্নিকান্ড ঘটেছে।
শনিবার ভোরে সোনরাগাঁ উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের সোনাপুর এলাকায় একটি বাড়িতে অগ্নিদূর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী দগ্ধ হন। আশংকাজনক অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। দগ্ধ দম্পতি দুজনই শ্রমজীবি মানুষ।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছেন, তাদের অসাবধনতার কারণেই এই অগ্নিদূর্ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়রা জানান, সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরের সোনাপুর এলাকায় গুলজার হোসেনের এক তলা বাড়ির এক রুমের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে কয়েক বছর যাবত বসবাস করছেন জেলার বন্দর উপজেলার মদনপুরে অবস্থিত ইপিলিয়ন গ্রুপের নিরাপত্তা কর্মী আশরাফুল ইসলাম (৪১) ও তার স্ত্রী রোজিনা (৩০)।রোজিনা সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডের পোশাক কারখানা উর্মি গ্রুপের শ্রমিক।।
শুক্রবার রাতে রান্নাঘরের চূলার বার্ণার বন্ধ না করেই তারা ঘুমিয়ে পড়েন। ফলে সারারাত গ্যাস বের হয়ে পুরো ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে পড়ে জমাট বেঁধে থাকে। শনিবার ভোরে রোজিনা সকালের নাশতা তৈরি করতে রান্নাঘরে গিয়ে চূলায় আগুন ধরালে বিকট শব্দে জমাট গ্যাসের বিস্ফোরণ ঘটে। পুরো ঘরে আগুন ধরে যায়। এসময় রোজিনা ও তার স্বামী আশরাফ গুরুতরভাবে দগ্ধ হন। বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন ও এলাকাবাসী এসে দগ্ধ দম্পতিকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। আগুনে তাদের দুইজনের গায়ের পোশাক ও বিছানাপত্রসহ ঘরের সমস্ত আববাপত্র পুঁড়ে গেছে। কোন কিছুই আর ব্যবহারের উপযোগি নেই। এছাড়া বিস্ফোরণে রান্নাঘরের জানালা ও টয়লেটের দরজা ভেঙ্গে চূর্ণ হয়ে যায়। বিস্ফোরণের শব্দ এতোটাই প্রকট ছিলো আশপাশের প্রায় সবগুলোর বাড়ির মানুষ ঘুম থেকে জেগে উঠে আতংকিত হয়ে পড়েন।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো: বাচ্চু মিয়া জানান, দগ্ধ আশরাফুলের শরীরের ৭৩ শতাংশ ও রোজিনার ৬৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের অবস্থা অত্যন্ত আশংকাজনক। বার্ণ ইউনিটে পর্যবেক্ষণে রেখে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
দগ্ধ দম্পতি আশরাফুল ও তার স্ত্রীর রোজিনার গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলার কোতোয়ালি থানা এলাকায়। গত বছর এস.এস.সি পাশ করা তাদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বাড়িতেই থাকে। মাঝে মাঝে এই বাসায় এসে বাবা মায়ের সাথে কিছুদিন থেকে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই এলাকায় গ্যাস সংকটের কারণে এই দম্পতি বাড়ি ছেড়ে দেবার কথা বললে বাড়ির মালিক গুলজার হোসেন নিম্নমানের পাইপ দিয়ে আলাদাভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়েছিলেন। সেই গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকেই এই দূর্ঘটনা ঘটেছে বলে তারা মনে করছেন।
এদিকে আগুনের খবর পেয়ে ডেমরা ফায়ার স্টেশনের দমকল কর্মীরা ও সোনারগাঁ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। তবে তারা পৌঁছার আগেই স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নেভানো হয়।
ডেমরা ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুল মান্নান জানান, অসাবধানতার কারণেই এই অগ্নিকান্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ঘুমানোর আগে চূলার বার্ণার বন্ধ করে রাখলে গ্যাস ছড়িয়ে জমাট বেঁধে থাকতো না। পাশাপাশি বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন জানিয়ে সবাইকে আরো সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি।
এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার সাইনবোর্ড সাহেবপাড়া এলাকায় একইভাবে গ্যাসের চূলার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডে একই পরিবারের আটজন (৮) দগ্ধ হয়ে পাঁচ (৫) জনের মৃত্যু হয়। এখনো ওই পরিবারের তিনজন ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ।
Discussion about this post