মুক্তিযুদ্ধার এলাকা, মুক্তিযোদ্ধার আসন এবং মুক্তিযুদ্ধের রণক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ সদর আসনের বন্দর উপজেলায় এবার সেই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের বন্দর উপজেলার সভাপতি এম এ রশিদ পরাজিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের অন্যতম রাজাকার পুত্র মাকসুদ হোসেনের কাছে।
যার কারণে ব্যাপকভাবে সমালোচনার ঝড় বইছে নগরী জুড়ে।
বুধবার ৮ এপ্রিল রাতে বব্দর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে মাকসুদ হোসেনকে জয়ী ঘোষণার পর অনেকেই বলেছেন, “নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠনের বাড়ি এলাকায় বঙ্গবন্ধুর খুনি পরিবারের অন্যতম সদস্য বারবার কাউন্সিলর হসেবে জয়লাভ করে ।
অথচ আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক সিটি কর্পোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ডে নির্বাচন করতে পারেন না শাসক দলের প্রভাবশালী নেতার কারণে।
এমন সমালোচনা করে অনেকেই আরো বলেছেন, কঠিন চক্রান্ত হয়েছে বন্দর উপজেলা নির্বাচনে। নইলে একজন চিহ্নিত রাজাকার পুত্র কি করে মুক্তিযোদ্ধা আসনে নির্বাচিত হয় ।
এই নির্বাচনে কঠিন চক্রান্ত গুলি খুজে বের করতেও অনেকেই দাবী করেছেন।
জানা যায়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উন্মুক্ত ঘোষণা করায় এবার দলীয় প্রতীক নৌকা ছাড়াই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাঠে ছিলেন বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশিদ। স্বতন্ত্র প্রতীক (দোয়াত-কলম) নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন তিনি।
কিন্তু গত বারের ‘অটোপাশে’ নির্বাচিত হওয়া এম এ রশিদ এবার ‘ভোট পরীক্ষায়’ অংশ নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। এই ফলাফল অনেকটাই প্রত্যাশিত বলে মনে করছেন বন্দরবাসী।
রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজ থাকলেও ভোটের মাঠে বরাবরই দুর্বল তিনি। এবার নিয়ে এম এ রশিদ ৪ বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনবারই পরাজিত হয়েছিলেন ৷
সর্বশেষ ২০১৮ সালে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় বিনাভোটে প্রথমবারের মতো বন্দরের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তবে, এবার তিনি ফাঁকা মাঠ পাননি৷ তাই এবারের প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হেরেছেন তিনি।
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বন্দর উপজেলায় ১৯ হাজার ৫৪৩ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল। সেই সময় ওসমান পরিবার-সমর্থিত প্রার্থী এম এ রশিদ মাত্র ৯ হাজার ৭৬১ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছিলেন। এর আগে তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও মুকুলের কাছে হেরে দ্বিতীয় হয়েছিলেন রশিদ৷ এবার ষষ্ঠ বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ইউপি চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হওয়া মাকসুদ হোসেনের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন৷ মাকসুদ হোসেন আনারস প্রতীকে ২৯ হাজার ৮৭৩ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এম এ রশিদ পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮ ৩৮ ভোট।
তবে, এম এ রশীদকে সমর্থন দিয়েছিলেন ওসমান পরিবারের দুই সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান। সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেও তিনি এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের রশিদকে সমর্থন দিয়েছিলেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একাধিক অনুষ্ঠানে রশিদকে সমর্থন করে তাঁরা দুই বক্তব্য দিয়েছিলেন। কিন্তু বিনাভোটে গতবার বিজয়ী রশিদ চেয়ারম্যান পদে সরাসরি নির্বাচনে এবার ভোটারদের সমর্থন আদায় করতে পারেননি।
Discussion about this post