পূর্ব শত্রতার জের ধরে এবং নানা স্বার্থসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আলামিন ওরফে দানিয়াল (২৮) ও শুভ (২২) নামের দুই যুবককে চাষাড়ার বালুর মাঠ এলাকার এ্যাপোলো ক্লিনিকের সামনে দলবব্ধ হয়ে পিটিয়ে কুপিয়ে গাড়িতে তুলে অপহরণ করে ফতুল্লার মাসদাইর ছোট কবরস্থানের সামনে ফেলে রেখে পরিবারের কাছে জানিয়ে দিয়ে যায়, ‘এইবার লাশ লইয়া যাও !’
এমন খবর পেয়ে আলামিন ওরফে দানিয়ালের মা মুক্তার বেগম বলেন, ‘এখন আমার ছোট পোলাটার কারণে আমরা বড় পোলার লাশ সামনে রাইখ্যাও মুখ খুলেতে পারতেছি না।’
অপরদিকে গুরুতর আহত শুভর মা নাজমীন জানান, “আমার কেউ মুখ খুলতে পারি না। খুব ক্ষমতাবান ছাত্রলীগের নেতা হাবিবুর রহমান রিয়াদের চাচাতো ভাই অনিকের সাথে এই দ্বন্দের জের ধইরা সেই পুরানো সোর্স রমু (৬৫) তার পোলা ফরহাদ, মুরাদ ও নাতি জসিমের পোলা অনিক প্রধান দলবল নিয়ে রমু সামনে দাড়াইয়া আমার পোলারে কোপাইয়া মাইরা ফালাইলো। পোলাটারে খুন কইরা যাওনের সময় ডাইক্কা কইয়্যা যায়, ‘শুভ আর দানিয়ালের লাশ লইয়া যাও।’ এরপর শুভ আর দানিয়ালকে হাসপাতালে লইয়া আনার পর ডাক্তার কইলো দানিয়াল মারা গেছে আর শুভর অবস্থা খুব খারাপ ওরে ঢাকা (ঢামেক) লইয়া যান। আমার এলাকার মানুষ বোবা হইয়া গেছি। পুলিশ এই খুনী রমু রে বন্ধু আর বড় ভাই কইয়্যা ডাকে। আর অনিক শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান, রিয়াদের নাম কইয়া এলাকায় এই খুন খারাপি করলেও আমার বোবা। কয়দিন আগেও আমার পোলারে মাইরা কয়, এইবার বাইচ্যা গেলি এর পর কি হইবো টের পাবি।’ ’
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১ টায় চাষাড়ার ব্যস্ততম এলাকায় এমন পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে অপহরণ করে তুলে নেয়ার ঘটনায় একদিকে গণমাধ্যম কর্মীরা হন্যে হয়ে হতাহতদের খুঁজতে থাকে অপরদিকে পুলিশ তৎপর হয়ে উঠে এই ঘটনার নেপথ্যের সকল তথ্য উদঘাটনের।
শেষ পর্যন্ত শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত ১২ টা ৪০ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আনার পর শুভ (২২) নামের গুরুতর আহতেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় জরুরী বিভাগের চিকিৎসক নাজমুল হোসেন। একই সাথে নিহত আল আমিন ওরফে দানিয়াল কে ময়না তদন্তের জন্য ফতুল্লা থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়।
নিহত আমিন ওরফে দানিয়াল মাসদাইর এলাকায় দেলোয়ার মিয়ার ছেলে। আর আহত শুভ একই এলাকার শাহজালালের ছেলে। নিহত দানিয়াল অটোরিকশা গ্যারেজের ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন। আর শুভ একটি কারখানার মেশিন অপারেটর হিসেবে কর্মরত।
আমার সঙ্গে দানিয়ালের বিয়ে হয়। এরই মধ্যে কয়েকমাস ধরে আমরা আলাদা বাসা নিয়ে ভাড়াবাড়িতে বসবাস করে আসছিলাম। রাত দশটার দিকে দানিয়াল তার বন্ধু শুভকে নিয়ে চাষাঢ়া ঘুরতে গিয়েছিল। এরপর খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে দেখি তার মরদেহ পড়ে রয়েছে।
শুক্রারবার দিবাগত রাত ২ টা ৩০ মিনিটে ফতুল্লা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তাসলিম আহমেদ নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেটসহ অন্যান্য গণমাধ্যমকে বলেন, বেশ কিছুদিন আগে ওই এলাকার রমুর নাতি হিসেবে পরিচিত অনিক ও তার লোকজনের সঙ্গে নিহতের মারামারি ঘটনা ঘটে। রমু ওই এলাকার শীর্ষ মাদক কারবারি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তার সঙ্গে বিরোধকে কেন্দ্র করে দানিয়েলে ওপর হামলা করে। এ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। এছাড়া নিহত যুবকের বিরুদ্ধেও থানায় মামলা রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে রমুকে আটক করা হয়েছে।
Discussion about this post