কলেজ ছাত্রী ফারজানা আক্তারের হত্যা রহস্য যেন আরো ঘনিভূত হচ্ছে। নগরীর এস এম মালেহ রোডস্থ পদ্মা সিটি প্লাজা থেকে কলেজ ছাত্রী ফারজানার লাশ ময়নাতদন্তের পর শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাত ১২ টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় কলেজ ছাত্রী মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।।
ময়নাতদন্তের সময় শুক্রবার দুপুরে নিহত কলেজ ছাত্রী ফারজানা আক্তারের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, এটি কোন অবস্থাতেই আত্মহত্যা না। ফারজানার গলায় আঘাতের চিহ্ন ও নখের আচরের দাগ দেখা গেছে ।
ফারজানার লাশ উদ্ধারের পর থেকেই ফাহিম নামের প্রেমিক ও ফাহিমের পরিবারের সদস্যদের সকলেই আমলাপাড়ার গা ঢাকা দিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ফাহিম টানবাজার এলাকার খোরশেদ জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে। তারা শহরের আমলাপাড়াস্থ ভাট বাড়ির চতুর্থ তলায় ভাড়া থাকতেন।
ঘটনার পর ফজলুল হক ভাট এর বাড়িতে নতুন তালা দিয়ে সার্বক্ষণিক কলাপসিবল গেইট বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
পদ্মা সিটি প্লাজার অনেকেই বলেন, লাশ উদ্ধারের আগে ফাহিম একাই ফ্ল্যাটে ফারজানার সাথে তাদের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
নিহতের বড় ভাই মনির হোসেন ফ্ল্যাটের অন্যান্য বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে অভিযোগ করে বলেন, তার বোনকে ফাহিম হত্যা করে ঘটনা ভিন্নদিকে প্রভাহিত করার চেষ্টা চালিয়েছে।
জানা গেছে, ফারজানা (১৮) নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা শহরের টানবাজার এলাকায় অবস্থিত এই প্লাজার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। ওই বাড়ির নিচ তলায় ফারজানার ভাই মনির হোসেন ও বাবার রঙের ব্যবসা পরিচালনা করেন।
ফারজানার ভাই মনির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফারজানার মৃতদেহ গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সিপাহী পাড়া এলাকায় দাফন করা হয়েছে। আমার মা চট্টগ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাড়ির নিচতলায় আমি আমার রঙের দোকানে ছিলাম। ফারজানা বাসায় একাই ছিলো। তবে মাগরিবের পরপর সন্ধ্যায় ফ্ল্যাটে ফাহিম নামে এক ছেলে আসে। যে ফারজানার পূর্ব পরিচিত বলে জানতে পেরেছি। বাড়ির সিসি ক্যামেরা এবং আশপাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি যে, ওই ছেলেটি বেশ কিছুক্ষণ ভেতরে থাকার পর ভিতর থেকে ফারজানা চিৎকার চেচামেচি করে এবং পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন এসে জড়ো হয়। এসময় ফাহিম নামে ওই ছেলেটি ভেতর থেকে দৌড়ে বের হয়ে চলে যাওয়ার পথে আমার দোকানের সামনে এসে বলে যায় যে, ফারজানার কিছু একটা হয়েছে। এই বলে সে চলে যায় এবং আমিও দ্রুত আমাদের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখি পাশের ফ্ল্যাটের মানুষজন ভিড় করেছে এবং ফারজানার নিথর দেহ খাটে পড়ে আছে।’
নিহতের ভাই আরো বলেন, ‘ঘরের ভিতর একটি ওড়না কোনো রকম ভাবে ঝুলানো ছিলো। ফারজানা যদি আত্মহত্যা করতো, তাহলে ওই ওড়না যেভাবে ঝুলানো হয়েছে, তাতে কোনো ভাবেই আত্মহত্যা করার সুযোগ নেই। আমার ধারণা, ফাহিম আমার বোনকে শ্বাসরোধে হত্যার পর হত্যার বিষয়টি আড়াল করতে ওড়না ঝুলিয়ে ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। আমরা এই ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করবো।’
নিহত ফারজানার বান্ধবীদের বরাত দিয়ে মনির হোসেন আরও বলেন, ‘ফারজানার বান্ধবীরা জানিয়েছে যে, ফাহিম ফারজানার পূর্ব পরিচিত এবং তার সাথে নাকি সম্পর্ক ছিলো। এখন কী কারণে সে আমার বোনকে হত্যা করতে পারে তা পুলিশ তাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ এবং সুষ্ঠু তদন্ত করলেই বেড়িয়ে আসবে। আমরা আইনের স্মরণাপন্ন হবো।’
কলেজ ছাত্রীর লাশ উদ্ধারের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল রিপোর্ট করে তা ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, তা ময়না তদন্তের রিপোর্টেই বেরিয়ে আসবে। এই বিষয়ে এখনো থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ আমরা পাইনি। তবে আইনী ব্যবস্থা অবশ্যই নেয়া হবে। তদন্তেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
এদিকে খোজ নিয়ে পুলিশের একাধিক সূত্র থেকে আরো জানা যায়, কালীর বাজার ভাট বাড়ি থেকে সন্দেহভাজন ফাহিম ও তার পরিবারের লোকজন ই বলতে পারবে আসলে কি ঘটেছিলো কলেজ ছাত্রী ফারজানার মৃত্যুর ক্ষেত্রে । ফাহিম কে পাওয়া গেলে রহস্য পরিস্কার হবে।
Discussion about this post