শিক্ষা গ্রহণের জন্য নরসিংদী থেকে নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজে ভর্তি হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই ভাগ্যের চাকা যেন ঘুরতে থাকে আসলাম সানী নামের এই শুন্য হাতের মানুষটির। ৮৫ সালের কলেজে ভর্তি হওযার পর নিজেকে বিএনপির মতাদর্শী ছাত্র দাবী করে শহরের কালীর বাজার এলাকার বিএনপির নেতা জালাল হাজীর বাড়ীর একটি চিলেকোঠায় বসবাস শুরু করেন এই আসলাম।
এরপর ঘনিষ্ঠ বন্ধু জাকির ও রাকিবকে সাথে নিয়ে ব্যবসা করার পরিকল্পনা শুরু করে। সেই পরিকল্পনা মতে নব্বই দশকে শুরু করে গার্মেন্টস ব্যবসা। অংশিদার ভিত্তিতে ব্যবসার কারণে কৌশল অবলম্বন করে এই ধুরন্ধর আসলাম সানী। কৌশলে ফ্যাক্টরীর লোকসান খালেদা জিয়ার সরকার ক্ষমতাসীন হলে বিএনপির নেতাদের সাথে সখ্যতা রেখে পুরো কারখানা বন্ধ ঘোষনা করে কিছুদিনের জন্য ব্যবসার অন্তরালে গাঢাকা দেয় আসলাম। ওই সময় বন্ধু ও পার্টনার রাকিব ও জাকিরকে বিতারিত করে ব্যবসা থেকে ।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই ধুরন্ধর আসলাম সানী নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী অধ্যাপিকা নাজমা রহমান পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় ২শত কোটি টাকার ঋণ নিয়ে শুরু করে ব্যবসা। আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে শাসক দলের নেতাদের নানাভাবে তুষ্ট করার পাশাপাশি অদ্যাবধি নগরীর কুখ্যাত সন্ত্রাসী কারাগারে বন্দি সাজাপ্রাপ্ত চাঁদাবাজ জাকির খানকে মোটা অংকের মাসোয়ারা দিয়ে সকল ধরণের সরকার বিরোধী আন্দোলনে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে আসলাম সানীর বিরুদ্ধে। আর আসলাম সানী সর্বত্র প্রচার করেন তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে ছাত্র জীবন থেকেই জড়িত।
এমন উল্লেখিত তথ্য প্রদান করে আসলাম সানীর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, এই ফ্যাক্টরী বন্ধ করার ঘটনার নেপথ্যে নতুন কোন চক্রন্ত রয়েছে সানীর।
সেই আসলাম সানীর বিরুদ্ধে এতো দিন বিদ্যুৎ ও গ্যাস চুরির অভিযোগ থাকলেও এবার বেড়িয়ে এসেছে তিতাস গ্যাস নিয়ে এই ধুরন্ধর আসলাম সানীর কেলেংকারী
ফতুল্লার হাটখোলা এলাকায় ক্রোনী অ্যাপারেলস লিমিটেডের ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বিল বকেয়া থাকায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি কারখানাটির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কারখানাটিতে বিস্ফোরণে ১৪ শ্রমিক দগ্ধ হওয়ার পর সেখানে গিয়ে লাইনে পুনরায় সংযোগ দেখতে পায় তিতাস।
অবৈধভাবে সংযোগ নিতে গিয়ে বিস্ফোরণের এই ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছেন তিতাসের নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক বিপনন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মামুনুর রশীদ।
তিনি বলেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষ বিস্ফোরণের বিষয়ে আমাদের জানায়নি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন আমাদেরকে অবহিত করেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাদের প্রধান লাইন চেক করে দেখতে পাই, গ্যাস লাইনটি পুনরায় সংযোগ করা হয়েছে।”
“অবৈধভাবে গ্যাস লাইনটি পুনরায় সংযোগ করার সময় বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে আমাদের ধারণা। কারণ কীভাবে সংযোগটি পুনরায় দেওয়া হয়েছে সেই ব্যাপারে কারখানার কেউ আমাদের কিছু বলছেন না। কেউই কোন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে না। এতে সংযোগটি যে পুনরায় কারখানা কর্তৃপক্ষই দিয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে। এই ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।”
এদিকে, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ফায়ার সার্ভিস, তিতাস, কলকারখানা অধিদপ্তর ও পুুলিশসহ পাঁচ সদস্যের কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মৌসুমী বাইন হীরার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ নেওয়া হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রত্যক্ষদর্শী কারখানার দুই শ্রমিক এই প্রতিবেদককে বলেন, “কয়েকদিন আগে এই কারখানায় গ্যাস সংযোগ কেটে দেয় তিতাস। ওয়েল্ডিং শ্রমিকরা লাইন মেরামতের কাজ করছিলেন তখন পাইপ ফেটে আগুনে তারা পুড়ে যায়।”
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযমও বৃহস্পতিবার বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি, গ্যাসের লাইনে মেরামতের কাজ করতে গিয়ে আগুনে ১৪ জন দগ্ধ হয়েছে। গ্যাসের লাইন বৈধ নাকি অবৈধ তা তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে বলা যাবে।”
তবে এই ব্যাপারে ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এএইচ আসলাম সানির সঙ্গে তার দুটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আহসান হাবীব সাংবাদিকদের বলেন, “কারখানার পাশেই রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। এজন্য আমরা আমাদের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন মাটির কয়েক ফুট নিচে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছি। ঘটনার সময় কিছু ওয়েল্ডিং শ্রমিক পাইপলাইন মেরামতের কাজ করছিলেন।”
এদিকে, দগ্ধ ১৪ জন কর্মীর মধ্যে জিতু (৪০) নামে একজন এখনও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর শরীরের ৮ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে শুক্রবার রাতে জানান ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. তরিকুল ইসলাম।
“অন্যরা সামান্য দগ্ধ হয়েছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে”, যোগ করেন ওই চিকিৎসক।
Discussion about this post