নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অভ্যন্তরে কার্টুন ভর্তি ৪২ লাখ টাকা ঘুষ কান্ডে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহ সভাপতি এস এম রানা কে ডেকে নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তাকে ছেড়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে প্রচার করার পর ধূম্রজাল তৈরি হয় নগরীতে। এরপর ধীরে ধীরে বেড়িয়ে আসে এস এম রানার আসল পরিচয় ।
এই ঘটনা অদ্যাবধি বিভিন্ন পন্থায় ধামাচাপা দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী চক্র ।
নারায়ণগঞ্জ শহরে একটি মিনিবাসের হেলপার থেকে হঠাৎ করে রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে ৪২ লাখ টাকা কাণ্ডে নাম উঠা এস এম রানা।
তিনি নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহ সভাপতি পদেও রয়েছেন। যেখানে জেলার এলিট শ্রেণির লোকদের আসা যাওয়া হয়।
৪২ লাখ টাকা ভর্তি কার্টুন ধরা পরার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক এই টাকা উদ্ধারের ঘটনায় দূদক কে চিঠি দিয়ে তদন্ত করার আবেদন করেন । এরপর দূদক জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সার্ভেয়ার কাওসার আহম্মেদের সম্পৃক্ততা পেয়ে গ্রেফতার করে । শুরু হয় তোলপাড়। নাম উঠে আসে এস এম রানার । কে এই রানা ?
১০ জানুয়ারীর ঘটনা প্রকাশ পায় ১৮ জানুয়ারী । যা নিয়ে এখনো অন্ধকারে নগরবাসী।
রানা কান্ডের ৪২ লাখের ঘটনায় কেউ মুখ না খুললেও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একাধিক নির্ভরশীল সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহ সভাপতি এস এম রানা ই হচ্ছে এই ৪২ লাখ টাকার নেপথ্যের নায়ক ।
যদিও এই রানার বিরুদ্ধে অসংখ্য গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহ সভাপতি এস এম রানা গণমাধ্যমে প্রতিবাদ পাঠিয়ে নানাভাবে হুমকিসহ ৪২ লাখ টাকার ঘুষ কান্ডে তার কোন সম্পৃক্ততা নাই বলে দাবী করে ।
এই ৪২ লাখ টাকা ঘুষকান্ডের ঘটনা ঘিরে পুরো নারায়ণগঞ্জে তোলপাড়ের পর খোদ নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে শত শত সদস্য ফুঁসে উঠে।
ক্লাব অভ্যন্তরে সদস্যদের এমন ক্ষোভের ঘটনায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেই লক্ষ্যে পুলিশের পোষাক ও সাদা পোশাকের অবস্থান কে কেন্দ্র ব্যাপক সমালোচনা করে কয়েকজন সদস্য বলেন, ‘এস এম রানা একজন মিনিবাস হেলপার। তার বাবার সাথে মিনিবাসে কাজ করতো রানা। তাকে এই ক্লাবের সহ সভাপতি করা হয়েছে। আর যারা এই ড্রাইভার পুত্র এই হেলপার কে সহ সভাপতি করেছেন তাদের সকল অপকর্ম ই করতো এই রানা । ক্লাবের ভিতরে ক্ষুব্ধ কেউ মুখ খুলতে না পারে এবং কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেই লক্ষ্যে পুলিশের মোতায়েন করা হয়েছে অলিখিতভাবে।
এবার নারায়ণগঞ্জে ৪২ লাখ টাকার ঘটনায় সার্ভেয়ার কাউসার গ্রেপ্তার হওয়ার পর তা নিয়ে সারাদেশে হৈ চৈ শুরু হলেও ঘটনা কে ধামাচাপা দিতে ওই রানার গডফাদারের গডফাদাররা সকল ধরনের প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।
গণমাধ্যম কে ব্যস্ত রাখতে আর বিশেষ পেশার নামধারী মুখপাত্রদের অনেকেই রানা কান্ড ৪২ লাখ ধামাচাপা দিতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ।
এদিকে দূদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে এই রানাকান্ডের ঘটনা ধামাচাপা দিতে রহস্যময় আচরণ করে যাচ্ছে ।
পর্দার অন্তরালে কি ঘটছে নারায়ণগঞ্জবাসীর কৌতূহল যেন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে রানার গডফাদাররা ৪২ লাখের কার্টুন ভর্তি ঘষের ঘটনা আর যাতে কোন বিস্ফোরণ না ঘটে সেজন্য ফায়ার সার্ভিসের ভুমিকায় পুর্ব পরিকল্পনানুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে রানা চক্রের হোতারা।
এই ঘটনার সাথে এস এম রানাসহ পুরো সিন্ডিকেটদের নাম উঠে আসলেও দুজনের নামে মামলা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে এখনো তেমন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় হতাশ ভূমির মালিক সহ সচেতন মহল। তাই ঘটনার সাথে জড়িত থাকা রানা সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন।
সুত্র মতে, ঘুষ কেলেংকারীর ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কার্টুনে ভর্তি ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের পর জেলা প্রশাসকের সার্ভেয়ার কাউসার গ্রেপ্তার, এডিসি রাজস্ব সালাউদ্দিন মঞ্জু ওএসডি এবং ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা খাদিজা বেগমকে সরানো হয়েছে।
এ নিয়ে আলোচনার পারদ যেখানে নিম্নমুখী তখন নতুন তথ্য দিয়ে আবারও এই ইস্যুকে আলোচনায় আনলেন সাংসদ শামীম ওসমান। ৪২ লাখ টাকার কান্ডে দুদকের দেয়া মামলার সাথে দ্বিমত পোষন করে এই ঘটনাকে নতুন মোড় দেয়ানোর জন্য মন্তব্য করেছেন সাংসদ শামীম ওসমান।
এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, এমন কোন কাজ করি না যে, আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করবো। অনেকেই অনেক কিছু করেন, আমরা সব দেখি। টাকা ধরা পড়ে যাত্রাবাড়িতে আর তা উদ্ধার দেখান ফতুল্লাতে।
তবে তিনি কিসের টাকার কথা বলেছেন তা উল্লেখ্য না করলেও কারো বুঝতে বাকি নেই। কেননা নারায়ণগঞ্জে সদ্য ৪২ লাখ টাকার ঘটনা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ছাড়িয়ে ঢাকা সহ সারাদেশে তা নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়ে গেছে। সেই সাথে সচেতন মহল মনে করেন শামীম ওসমান যেই টাকার কথা নিয়ে মন্তব্য করেছেন তা দুদকের উদ্ধার করা ৪২ লাখ টাকা।
নারায়ণগঞ্জের নাগরিক মহল প্রশ্ন তুলেন শামীম ওসমান একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এই ধরনের মন্তব্য করে অপরাধীদের আস্কারা দিচ্ছে।
এ বিষয়ে নাসিক ১৮নং ওয়ার্ড ও গোগনগরে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, এক সময় কান্ট্রি প্রিন্ট নামে একটি ছাপা কারখানায় হেলপারি করতো এস.এম রানা। তিন ভাইয়ের মধ্যে রানা ছিলেন সবার বড়। তার পিতা মো.কমল মিয়া পেশায় একজন বাস চালক ছিলেন। সংসারের অভাবের কারণে তেমন একটা লেখাপড়া করতে পারেননি রানা। সেই সময় তারা গোগনগর এলাকায় একটি টিন শেড বাসায় থাকতেন। পরে রানা প্রিন্ট কারখানার হেলপার থেকে রং মাস্টার হয়।
কয়েক বছর সেই কারখানায় রং মাস্টার হিসেবে কাজ করেন রানা। পরবর্তীতে নিজের মালিকানাধীন একটি প্রিন্ট কারখানা দেন। সেই কারখানাটির নাম ছিলো মাদার প্রিন্ট। সেই মাদার প্রিন্ট থেকেই রানার উথান। খেলাধুলা তেমন না করলেও ক্রিকেটের ব্যাট বল নিয়ে দৌড়ঝাঁপের আড়ালে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।
এছাড়া কয়েক বছর আগে মাদার প্রিন্টের একটি গাড়ি মাদকসহ ডিবি’র হাতে আটক হয়। পরবর্তিতে সময়ের পরিবর্তনে এই রানা শীতলক্ষ্যা একাডেমির মাধ্যমে প্রভাবশালী এমপির প্রভাবশালী শ্যালকের সাথে ভালো সখ্যতা গড়ে উঠে। তার আশীবার্দে রানা নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহ সভাপতি হয়ে যান।
স্থানীয়রা জানান, এই রানা প্রভাবশালী মহলে ছত্রছায়ায় পঞ্চবটি থেকে মুক্তার ফ্লাইওভার প্রকল্পে একোয়ার করা ভুমি মালিকদের থেকে বিভিন্নভাবে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বর্তমান শতকোটি টাকার মাালিক বনে গেছেন। তার বিরুদ্ধে গোগনগর ইউনিয়নে ইয়াদ আলীর নামে ব্যক্তির ৬২ শতাংশ জায়গা দখল করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া একোয়ার হওয়া ভুমি মালিকারা তাদের সিন্ডিকেটের বাহিরে গিয়ে বিল উত্তোলন করতে পারে নাই। অভিযোগ রয়েছে নাল জমিকে বাণিজ্যিক করে তা বেশি আকারে বিল তৈরী করেছেন।
অল্প গাছের জায়গায় অতিরিক্ত গাছ দেখিয়ে বেশি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাকে তার সিন্ডিকেটে নিয়ে তাদেরকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে এই ভাবে অপকর্ম করে রাতারাতি হেল্পার থেকে এস এম রানা হয়ে গেছেন কোটি পতি রানা। তবে জেলা সার্ভেয়ার কাউসারের গ্রেপ্তারের পর তার নাম উঠে আসলেও এখনো রানা সহ তার সহযোগিরা গ্রেপ্তার হন নাই। তাই তাকে সহ অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের দাবী তুলেছেন ভূমি মালিকরা।
দুদকের দেয়া মামলার এজহার সুত্রে জানা যায়, গত ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যার পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের প্রাক্তন আউটসোর্সিং কর্মচারী জাহিদুল ইসলাম সুমনকে (২৮) একটি কার্টনসহ নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে আটক হন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই কার্টন খুলে টাকা গুনে ৪২ লাখ টাকা পাওয়া যায়। জব্দ করা ৪২ লাখ টাকার সাথে দুর্নীতির সম্পৃক্ততা আছে ধারণা করে গত ১৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দেন।
পরে ১৬ জানুয়ারি দুদক তাদের জেলা কার্যালয়ে মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও দন্ডবিধির কয়েকটি ধারায় দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহাকরি পরিচালক ওমর ফারুক বাদী হয়ে মামলা করেন। যার মামলা নং ২ (১)২৪। মামলাটি তদন্ত করছেন দুদকের উপপরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন। ওই মামলায় জেলা প্রশাসকের সার্ভেয়ার কাওসার আহমেদকে গ্রেপ্তার করে জাহিদুল ইসলাম সুমন ও আসামি করা হয়। কিন্তু এই ঘটনায় ব্যবসায়ী এস এম রানার নাম উঠে আসলেও তাদেরকে আসামী করা হয় নাই।
এই ঘটনার সাথে জরিত থাকা ব্যবসায়ী রানার নামে ব্যপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তার পরেও তিনি কি করে এখনো অধরা রয়ে গেলেন তা নিয়ে সমালোচনা তৈরী হয়েছে সচেতন মহলে। যেই ছেলে হেল্পার ছিল সে এখন প্রভাশালী মহলের আশীবার্দে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়ায় তার আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেন নাগরিক সমাজ।
কোর্ট ওসি আসাদুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তার হওয়া সার্ভেয়ার কাউসারকে রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
Discussion about this post