নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে উদ্দেশ্য করে শামীম ওসমান ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘আমার সম্পর্কে আপনাদের ধারণা কম। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমি শামীম ওসমান জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করবো, জনগণের সেবক হিসেবে যারা জনগণের চাকরি করতে এ নারায়ণগঞ্জে এসেছেন, আজকে তারা অনুপস্থিত কেন আমি জিজ্ঞাসা করব। আমি মাথা নোয়াবার মানুষ না। এমন কোনো কাজ করি না, আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করব। আমি কথা বলতে চাই নাই। অনেকেই অনেক কিছু করেন, আমরা দেখি। নারায়ণগঞ্জের টাকা ধরা পড়ে যাত্রাবাড়িতে, আর কেইস দেখান ফতুল্লাতে। আমাদের কাছে অনেক খবর আসে। এ কথাগুলো আজকে বলার কথা না। এখানে যারা এসেছেন তারা সবাই হতাশ হয়ে গেছেন। কেউ হতাশ হবেন না। আমাদের নারায়ণগঞ্জ আমরাই ঠিক করবো।’
মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও কিশোর গ্যাং নির্মূলে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকায় একেএম সামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপেক্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উল্লেখিত বক্তব্য দেন শামীম ওসমান।
নারায়ণগঞ্জে মাদক, সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাংসহ প্রধান সামাজিক সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের আহবানে সাড়া দিয়ে এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হন জেলার প্রভাবশালী ওসমান পরিবারপন্থী শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিসহ পেশাজীবীদের কেউ কেউ।
তবে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা মতবিনিময় সভায় না আসায় বক্তারা হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।
বিশেষ করে উপস্থিত থাকা কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন ডিসি-এসপির বিষয়ে, যারা জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করেন তারা কেন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলেন না ।
একই প্রশ্ন তুলে ওসমান পরিবারপন্থী অনেকেই বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী কেন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলেন না।
তাদের বিষয়ে বক্তারা নানা প্রশ্ন তুললে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, ‘ডিসি এসপি দাওয়াত গ্রহণ করেও কেন, কার ইশারায় মাদক, সন্ত্রাস বিরোধী এ সভায় আসেননি, আপনারা আমাকে প্রশ্ন করেছেন। নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের একজনকেও যারা আজকে এখানে আসতে দেন নাই কিংবা আসেন নাই কেন, এ প্রশ্নের জবাব আমি নারায়ণগঞ্জে দিব না।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘একটা ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সিতে একজন সংসদ সদস্যের অবস্থানটা কোথায় এটা হয়তো নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের অনেকেই বুঝতে পারেন না। নির্বাচনের আগে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার কাছে শামীম ওসমান ফোন করে নাই। তাই নারায়ণগঞ্জে যারা আছেন সবাইকে মনে রাখতে হবে, আমার নাম শামীম ওসমান। আমি কারো দয়ায় চলি না কিন্তু। আমি কারো দয়া দাক্ষিণ্যে চলার মতো লোক না। আমি রাজপথ থেকে সৃষ্টি হওয়া মানুষ। রাজপথেই শেষ হবো।’
মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, ‘কিছুদিন পরেই মাদকের বিরুদ্ধে নব্বইটা ওয়ার্ড থেকে সাড়ে চার লাখ লোক নামানো হবে। তবে লোক আরও বেশি হবে। সাড়ে চার লাখ, পাঁচ লাখ লোক আমরা ইচ্ছা করলে কালকেই নামাতে পারি। রাত বারোটার পরেও পাঁচ লাখ লোক নামানোর ক্ষমতা শামীম ওসমান রাখে ইনশাল্লাহ।’
নারায়ণগঞ্জের ডিসি ও এসপি কে ইঙ্গিত করে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, ‘এই পাঁচ লাখ লোক নামার পরে আমরা যদি বলি, জনগণ যদি বলে আমরা এখানে কাউকে চাই না, তাহলে কিন্তু এখানে কারো থাকার উপায় নাই। এ কথাও মাথায় রাখবেন কিন্তু। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই। আগের মেজাজ থাকলে এখনই বলে দিতাম। বয়স বাষট্টি হিসেবে বক্তব্য দিলাম। ছাব্বিশ বানায়া দিয়েন না কিন্তু। সাবধান থাকবেন সবাই।’
শনিবার বিকেলে এমন মতবিনিময় সভা শেষে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনের সহায়তায় শামীম ওসমানের বক্তব্য ও নানাভাবে হুসিয়ারীর বিষয় পর্যবেক্ষণ শেষে নগরীর অনেকেই বলেন, ‘এখন দেখার ব্যাপার কি বলেন ও করেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার।’
Discussion about this post