নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কর্মরত প্রায় সকলেই দূর্ণীতির সাথে জড়িত। হাজার কোটি টাকা লেনদেন করায় লোভ যেন সকলের মধ্যে দানা বাধে। ভূমি অধিগ্রহণ শাখার অসাধু প্রভাবশালী চক্র এবং দালালদের বিরুদ্ধে আগেও নানা অভিযোগ থাকলেও এতা বড় পুকুর চুরির ঘটনা অনেকের ছিলো অজানা। সার্ভেয়ার গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন সময় উঠা দুর্নীতির অভিযোগের কিছু সত্যতা পাওয়া গেছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। অনেকেই বলেছেন হাজার কোটি টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে শতকরা ৫ শতাংশ হারে ঘুষের টাকা নেন এই দপ্তরের অসাধুরা কর্মকর্তারা । যা নাকি একেবারেই বৈধ হিসেবে মেনে নিয়েছেন সকলেই।
অনেকেই বলেছেন দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় নাম আসা রানা কি তবে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কোন দালাল চক্রের সদস্য। অধিকতর তদন্তে রানার আসল পরিচয় উদঘাটন এবং তাঁকে গ্রেফতারের দাবি তুলছেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়া দালাল চক্রের সদস্য হিসেবে মিল্টন, ইকবাল, বুলবুল নামের কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। যারা শাসক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এবং শাসক দলের নেতার জমি সংক্রান্ত কর্মকান্ড পরিবচালনা করে শুন্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন । এমন কোটিপতির একজনের মা-বাবা প্রকাশ্যে এই নগরীতে মাদক (গাজা ফেনসিডিল) ব্যবসা করতে বলেও ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে ।
এমন চাঞ্চল্যকর দূর্ণীতির ঘটনা শাক দিয়ে বারবার মাছ ঢাকার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে প্রশাসন ও দূদক। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে কার্টুন ভর্তি ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের পর নানা নাটকীয়তা চলছেই অদ্যবদী । একদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক অপরদিকে দূদকের পক্ষ থেকেও মূল ঘটনা আড়ালের অপচেষ্টা চারেয় যাচ্ছে ।
১০ জানুয়ারি রাতে কার্টুন ভর্তি টাকা উদ্ধারের পর এমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ৮ দিন পর অর্থ্যাৎ ১৮ জানুয়ারী গ্রেফতার করা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কর্মরত সার্ভেয়ার কাওসার আহমেদকে। সার্ভেয়ার কাওসার আহমেদকে কারাগারের পাঠানোর মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় নাারয়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখায় দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে উদ্ভট কাণ্ডকারখানা · খামখেয়ালিপূর্ণ কাজ. রাজত্বে তুঘলকি কারবার। প্রতি বছর নানা কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের রাজস্ব বিভাগে তুঘলকি কারবার চলমান থাকলেও রাঘব বোয়াল চক্র নানাভাবে সর্বত্র চালিয়ে আসছিলো স্টীম রোলার । আর সেই স্টীম রোলারের ভয়ে অনেকেই এমন লুটপাটের মহোৎসবের বিষয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস করতো না।
ঘুষের জন্য পাঠানো কার্টুন ভর্তি ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের ৮ দিন পর ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কর্মরত সার্ভেয়ার কাওসার আহমেদকে গ্রেপ্তার করে পাঠানো হয় কারাগারে । এরপর এবার কার্টুন ভর্তি ওই ৪২ লাখ টাকার মূল হোতা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এইচ এম সালাউদ্দীন মনজুকে এবার ওএসডি করা হয়েছে । যিনি জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের অপরাধীদের গডফাদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সংযুক্ত করা হয়। ৩১ বিসিএস ব্যাচের এই কর্মকর্তা গত ২০২২ সালের ৫ জুন নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেন।
ঘুষের জন্য পাঠানো কার্টুন ভর্তি ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কাওসার আহমেদ কে কারাগারে পাঠানো হলেও মামলার অপর আসামি সিদ্ধিরগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের প্রাক্তন আউটসোর্সিং কর্মচারী জাহিদুল ইসলাম সুমন পলাতক রয়েছেন। আর ওই টাকার মূল হোতা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এইচ এম সালাউদ্দীন মনজুকে এবার ওএসডি করা হলেও তাকে মামলায় আসামী কার হয় নাই।
দুদক সূত্রে জানা যায়, গত ১০ জানুয়ারি রাত দশটার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের প্রাক্তন আউটসোর্সিং কর্মচারী জাহিদুল ইসলাম সুমন (২৮) একটি কার্টনসহ নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে আটক হন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই কার্টুন খুলে টাকা গুনে ৪২ লাখ টাকা পাওয়া যায়। পরে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে টাকাগুলো জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কোষাগারে জমা রাখা হয়।
জব্দ করা ৪২ লাখ টাকার সাথে দুর্নীতির সম্পৃক্ততা আছে ধারণা করে গত ১৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দেন। পরে ১৬ জানুয়ারি দুদক তাদের জেলা কার্যালয়ে মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও দন্ডবিধির কয়েকটি ধারায় একটি মামলা করে। ওই মামলায় জাহিদুল ইসলাম সুমন ও কাওসার আহমেদকে আসামি করা হয়। কাওসারকে গ্রেপ্তার ও জাহিদুল ইসলাম সুমন পলাতক রয়েছে বলে জানায় দুদক।
ঘুষের জন্য পাঠানো কার্টুন ভর্তি ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই কার্টনভর্তি টাকা অন্য এক ব্যবসায়ীর বলে দাবি করে জাহিদুল ইসলাম সুমন। যদিও ওই ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই টাকা তার নয়। সার্ভেয়ার কাওসার ওই ব্যবসায়ীকে অনুরোধ করেছিলেন যেন ওই টাকা নিজের বলে দাবি করেন। সামগ্রিক বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে আমি দুদকে চিঠি দেই। দুদকও তড়িৎ ব্যবস্থা নিয়েছে।’
তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘টাকা জব্দের সাথে সাথেই জিজ্ঞাসাবাদকালে ওই কার্টুন ভর্তি টাকা রানা নামের একজন ব্যবসায়ীর বলে দাবি করে জাহিদুল ইসলাম সুমন। যদিও ওই কথিত (দালাল) এই ব্যবসায়ী রানাকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দীর্ঘ সময় রানা তার মুঠোফোনে শলাপরামর্শ ও আলোচনার পর এই টাকা রানা তার নয় বলে জেলা প্রশাসককে জানায় । সার্ভেয়ার কাওসার ওই ব্যবসায়ী রানাকে বারবার অনুরোধ করেছিলেন যেন ওই টাকা নিজের বলে দাবি করতে। এই টাকা, রানা, কার টাকা কার কাছে যাচ্ছিলো, পূর্বে কি কি ঘটেছে, রানা গডফাদার কে ? সবাই সব কিছুই সবাই জানলেও কেউ মুখ খুলছে না। তরে রানার মুঠোফোনের কল রেকর্ড যাচাই করলেই বেড়িয়ে আসবে থলের বিড়াল । কিন্তু কে করবে এই কাজ ? রানা ও তার গডফাদারের নাম সকলেই জানলেও এ বিষয়ে চলছে কানামাছি খেলা ।
চাঞ্চল্যকর এতো টাকা উদ্ধারের বিষয়ে দূদক মামলা দায়ের করে সার্ভেয়ার কাওসার আহমেদকে গ্রেফতার করলেও এখনো পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে দূদকের তদন্ত কর্মকর্তা রানা কিংবা জাহিদুল ইসলাম সুমন কিংবা এই ঘটনার সাথে জড়িত আর কাউকে আটক করতে পারে নাই। একই সাথে এই টাকা কারা এবং কোন কর্মকান্ডের জন্য ঘুষ পাঠানো হলো তারও পরিস্কার কোন ধারণা দিচ্ছে না কোন সংস্থাই।
‘ওই সময় জাহিদুলের বিরুদ্ধে সরাসরি কোন অভিযোগ না থাকায় তাকে আটক বা গ্রেপ্তার রাখার কোন সুযোগ ছিল না। এখন যেহেতু মামলা হয়েছে তিনি অবশ্যই গ্রেপ্তার হবেন’, যোগ করেন ডিসি।
ওই সার্ভেয়ারকে সাময়িক বরখাস্তের কথাও জানান জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক।
টাকা উদ্ধারের ঘটনায় জনৈক রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি। কার্টুন ভর্তি ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় ‘জনৈক রানা’ নামে এ ব্যক্তি কে এবং কেন দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট অর্থে নাম এসেছে তাঁর, তা নিয়ে শহরজুড়ে চলছে আলোচনা৷ তবে, জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, রানা নামে ওই ব্যক্তি জেলার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ৷ যার বাবা এক সময় ছিলেন মিনি বাস ড্রাইভার । তার আপন বাই একজন কুখ্যাত মাদক কারবারী ।
Discussion about this post