বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বন্ধু মাওলানা শহিদুল্লাহর বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া স্ত্রী ঝন্নাত আরা ঝর্ণার দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় হেফাজতে ইসলামের সাবেক নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আরও দুজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে । নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় করা ধর্ষণ ওই মামলায় এ পর্যন্ত ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আরেক জনের আংশিক সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক তাদের সাক্ষ্য নেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক এস এম শফিকুল ইসলাম এবং ডিএনএ চিকিৎসক রবিউল ইসলাম সাক্ষ্য দেন। তবে আগামী তারিখে পরিদর্শক শফিকুল ইসলামের সাক্ষ্য নেওয়া হবে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয় মামুনুল হককে। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাকে আবার কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সবশেষ গত ৮ আগস্ট সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। সেদিন রয়েল রিসোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাকির হোসেন ও সাংবাদিক নুর নবী জনি সাক্ষ্য দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী একেএম ওমর ফারুক নয়ন গণমাধ্যম কে বলেন, আজ মামুনুল হকের বিপরীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিএনএ চিকিৎসক আংশিক সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরবর্তী তারিখে আবার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেওয়া হবে। এসময় তিনি আরও বলেন, সাক্ষীরা আমাদের অনের প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতের সরকারী কৌঁসুলি রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষক রবিউল ইসলাম তার সাক্ষ্যে আদালতে বলেছেন, তোয়ালে পুরুষের বীর্য পাওয়া গেছে। সেই বীর্যে মামুনুল হকের রক্তের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তার সাক্ষ্যে বলেছেন, রয়েল রিসোর্টের ঘটনার পর রিসোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বাদী জান্নাত আরা ঝর্না জানিয়েছেন, মামুনুল হক তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এখানে এনে ধর্ষণ করেছেন।’
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামুনুল হককে আবার কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় মামুনুল হকের উপস্থিতিতে জান্নাত আরা ঝর্ণার সাক্ষ্য নেন আদালত। একইসঙ্গে ওই বছরের ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলায় বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে ঝান্নাত আরা ঝর্ণা নামের একজন নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ওই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ সাংবাদিকগণ রিসোর্টে উপস্থিত হয়ে বিতর্ক এড়াতে মামুনুল হককে এই নারীর সাথে সম্পর্ক ও এইখানে অবস্থানের কারণ জানতে চান। এমন ঘটনায় অনেকেই ফেসবুক লাইভে প্রচার করতে থাকেন। কোন অবস্থাতেই যাতে এই নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি ধর্মীয় গোষ্ঠী ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেই লক্ষেও সতর্ক থাকেন সকলেই । ফেসবুক লাইভে প্রচার হলেও কোন মামুনুল হক ওই সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে মিথ্যাচার শুরু করেন। পুরো ঘটনাটি সকলের কাছে অত্যান্ত ঘৃন্য বলেও দাবী করা হলেও এই ধর্ম ব্যবসায়ী চক্র ও মামুনুল হকের অনুসারীরা নারায়ণগঞ্জ সদর এলাকা থেকে মুঠোফোনে সোনারগাঁয়ের হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে নিয়ে রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর করেন এবং মামুনুল হক ও ঝান্নাত আরা ঝর্ণাকে পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
হেফাজত ইসলামীর নেতা মামুনুল হক ও ঝান্নাত আরা ঝর্ণাকে পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নেয়ার পর থেকেই পলাতক অবস্থান গ্রহণ করেন। এর মদ্যেই মামুনুল হক ও তার প্রকৃত স্ত্রীর সাথে কথপোকথনের অডিও রেকর্ড প্রকাশিত হয় । যে রেকর্ড প্রকামের পর আরো পরিস্কার হয়ে উঠে মামুনুল হক ওই নারীকে নিয়ে অনৈতিকভাবে নানাভাবে ব্যবহার করতেন । পলাতক থেকেই মামুনুল হক মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় অবস্থান করে আসছিলেন। এসময় পুলিশ তাকে নজরদারির মধ্যে রাখে। এরপর ১৮ এপ্রিল ওই মাদরাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় মামুনুলকে। পরে এ ঘটনায় ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা করেন ওই নারী। তবে ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছেন মামুনুল হক।
Discussion about this post