রাজধানীর পান্থপথে প্রাইভেটকারের সঙ্গে লেগুনার সামান্য ধাক্কা লেগেছিল। এ নিয়ে দুই গাড়ির চালকের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে প্রাইভেটকার থেকে কয়েকজন নেমে লেগুনাচালক সবুজ খানকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। এতে লেগুনাচালক রক্তাক্ত হলে তাকে সড়কে ফেলে রেখে চলে যান প্রাইভেটকারের চালক আর যাত্রীরা।
গত ২ আগস্ট রাতে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খোদ রাজধানীর সড়কে এমন ঘটনা ঘটলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে সেই যাত্রীরা।
যদিও কালবেলার পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেই টয়োটা এক্সিও মডেলের প্রাইভেটকারটি (ঢাকা মেট্রো-গ ২০-৫০৯৯) ভাড়া করে আনা হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ থেকে। এর যাত্রী ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সহ সভাপতি ও বন্দর উপজেলার সভাপতি সাইফুল ইসলাম পলাশ। তিনিই দেন মারধরের নেতৃত্ব। তার সঙ্গে আরও দুই সহযোগী ছিলেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পলাশ ও তার সহযোগীরা ঢাকায় আসার পর ওইদিন সন্ধ্যার আগে বসুন্ধরা শপিংমলে প্রবেশ করেন। প্রায় ৫ ঘণ্টা পর সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। তারা বের হন বাম পাশের পৃথক লেন ধরে। আর সেই সময় সামনের একটি লেগুনাকে পেছন থেকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিল আরেকটি লেগুনা। সামনের লেগুনার গ্যাস ছিল না। একটু এগোনোর পরই প্রাইভেটকারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে লেগুনাটির।
সবুজের মৃত্যুর ঘটনায় তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন তার ভাতিজা এনামুল হক রাজু। নিহত সবুজের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি। তিনি ফার্মগেট থেকে নিউমার্কেট সড়কে লেগুনা চালাতেন।
ওই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা পলাশ বা তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করতে না পারলেও উবারের প্রাইভেটকার চালক আজাহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটিও জব্দ করা হয়েছে।
তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসান বলেন, প্রাইভেটকার চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গাড়িতে তিনজন যাত্রী ছিলেন। যাদের নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন তিনি। যাত্রীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে বন্দর উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পলাশের বাড়ি বন্দর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের কেওডালা এলাকায়। বর্তমানে ইটভাটার ব্যবসা করেন। মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী এম এ সালামের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসেন তিনি। তার সুপারিশেই তিনি বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কমিটিতে জায়গা পান। তিন বছর আগে বন্দর উপজেলার বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি হন পলাশ। এরপর হন জেলা কমিটির সহ সভাপতি। মূলত, সালাম চেয়ারম্যানের সঙ্গেই তিনি রাজনীতি করেন।
ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, পলাশকে গ্রেপ্তার করলে বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ঢাকায় একজন লেগুনা চালককে পলাশ মারধর করেছে বলে শুনেছি। পরে জেনেছি চালক মারা গেছেন। পলাশ ওই চালককে মারধর করে অন্যায় করেছে। এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তার বিরুদ্ধে সংগঠনের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, এটি আমাদেরই সংগঠন। গত বছর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংগঠনে থেকে কেউ অপরাধ করলে এর দায় ব্যক্তির। দল এর দায় নেবে না।
Discussion about this post