ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘ছাত্রদল নেতা রাজীব আমাকে জানায় ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে মারধর করে ফেলে রেখেছে। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে রাজীবকে ডাক বাংলোর এক পাশে নিয়ে যাই। তাকে অটোরিকশায় তুলতে গেলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পুনরায় মারধর করে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে উদ্ধার করে। ছাত্রলীগের নেতা রিয়াদের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে।’
টিপু আরো বলেন, ‘আমরা মনে করি যুক্তরাষ্ট্রে শামীম ওসমানকে হেনস্তা করার প্রতিশোধ নিতেই অতর্কিতভাবে ছাত্রদলের নেতাদের ওপর হামলা করেছেন রিয়াদ ও তার অনুসারীরা।’
শহরে মহানগর ছাত্রদলের তিন নেতা–কর্মীকে পিটিয়ে জখম করেছে সাবেক মহানগর ও তোলারাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাতে শহরের কলেজ রোড এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে আহত ছাত্রদল নেতাদের ছিনতাইকারী আখ্যা দেয় ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। ঘটনার ভিডিও ও ছবি ধারণ করতে গেলে লাঞ্ছিত হয়েছেন দুজন গণমাধ্যমকর্মী।
আহতরা হলেন—মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল ইসলাম রাজীব, ছাত্রদল কর্মী কাজল, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি অনিক এবং তাঁর বন্ধু সোহাগ। আহতদের মধ্যে আজিজুল ইসলাম রাজীবের অবস্থা গুরুতর। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত ৮টার দিকে কলেজ রোডে দুজন ছেলেকে মারধর করতে থাকে ছাত্রলীগের প্রায় ৩০ / ৪০ জন নেতা–কর্মী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ। ছাত্রদলের একজন দৌড়ে প্রাণ বাঁচান। ঘটনার কিছুক্ষণ পরে হাজির হন রাজীব ও কাজল। তাঁদেরও বেধড়ক মারধর করতে থাকে তারা। রাজীব মুখে গুরুতর জখম হয়েছেন। খবর পেয়ে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু উপস্থিত হলে রাজীব ও কাজলকে ডাকবাংলোর ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
ঘটনার পরপরই গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে গিয়ে চিত্র ধারণ করতে গেলে তাঁদের ওপরও চড়াও হয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় জাগো নিউজের প্রতিনিধি মোবাশ্বির শ্রাবণকে মারধর ও আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি সাবিত আল হাসানের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিএনপির নেতারা আহত ছাত্রদল নেতাকে হাসপাতালে নিতে চাইলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা তাঁদেরও মারধর করে। লাঞ্ছিত করা হয় মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনুকে।
অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশে খবর দেন বিএনপি নেতারা। পরে সদর থানা-পুলিশের একটি টিম এসে ছাত্রদলের রাজীব ও কাজলকে উদ্ধার করে প্রথমে থানায়, পরে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ছাত্রদল নেতা অনিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ও আমার বন্ধু সোহাগ পুকুরপাড় থেকে ডাকবাংলোর দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় কলেজ থেকে রিয়াদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ছেলেরা বের হয়। আমাকে দেখেই বলে, “কিরে তুই এখানে কী করস? ” আমার ফোন ধরে টানাটানি করতে থাকে। বলে, “তুই ছাত্রদল করস”। আমি রিয়াদ ভাইকে বিষয়টি বললে সে বলে, তুই যা এখান থেকে। আমি পেছনে ঘুরতেই আমার মোবাইল ছিনিয়ে মারধর করতে থাকে ছাত্রলীগের কর্মীরা। আমি রিয়াদকে উদ্দেশ করে বলি, কাজটা ভালো হচ্ছে না। প্রাণ বাঁচাতে আমি দৌড় দিলে আমাকে পেছন থেকে লাথি ঘুষি মারতে থাকে। আমি ছুটে গিয়ে আজিজুল ইসলাম রাজীবকে বলি, ভাই আমার বন্ধু সোহাগকে বাঁচান। আপনি না গেলে আমাকে মেরে ফেলবে। পরে রাজীব ভাই আর কাজল ভাই সেখানে গিয়েছিল রিয়াদের সঙ্গে কথা বলতে। রিয়াদের সামনে যেতেই তাঁকে ঘিরে ধরে মারতে থাকে ছাত্রলীগের কর্মীরা।’
হাসপাতালে নেওয়ার পথে আহত ছাত্রদল নেতা রাজীব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এলাকায় আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ অনিক এসে বলে, তাকে ও তার বন্ধুকে রিয়াদের লোকজন মেরেছে। রিয়াদ ভাই আর আমি পাশাপাশি এলাকার। ছোটবেলা থেকে তাকে চিনি। আমি শুধু কথা বলতে গিয়েছিলাম যেন সোহাগকে ছেড়ে দেয়। এই কথা বলতে যেতেই আমাকে ঘিরে ধরে মারধর করতে থাকে। আমি প্রাণ বাঁচাতে টিপু ভাইকে ফোন দেই। তারা এসে আমাকে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করতেই পুনরায় মারধর শুরু করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে।’
মারধরের শিকার জাগো নিউজের জেলা প্রতিনিধি মোবাশ্বির শ্রাবণ বলেন, ‘মারামারির খবর পেয়ে ডাক বাংলোর সামনে ঘটনার ভিডিও ধারণ করতেই আমার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এর কিছুক্ষণ পরেই আমার জামার কলার ধরে টানাটানি করে।’
এদিকে ঘটনার পরপরই আজিজ, কাজল, অনিক ও সোহাগকে ছিনতাইকারী আখ্যা দেন ছাত্রলীগের নেতারা।
এমন ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ বলেন, ‘তারা এখানে ছিনতাই করে প্রায়ই। কলেজের ছাত্রদের ফোন ছিনতাইয়ের অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিন। আজকে তাদের হাতেনাতে ধরে এলাকাবাসী ও কলেজের ছাত্ররা মারধর করেছে।’
তবে সাংবাদিকের ওপর আক্রমণের বিষয়ে দুঃখপ্রকাশ করে হাবিবুর রহমান রিয়াদ বলেন, ‘ভিড়ের ভেতর হয়তো না চিনে ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এই ভুল করেছে। তারপরও সাংবাদিকের ওপর হাত তোলার বিচার আমি করব।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু জানায়, ‘সোয়া ৮টার দিকে ফোন দিয়ে রাজীব জানায় ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে মেরেছে। আমি খবর পেয়ে সাথে সাথে রাজীবকে ডাক বাংলোর এক পাশে নিয়ে যাই। তাকে অটোরিকশায় তুলতে গেলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আবার মারধর করে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে উদ্ধার করে। ছাত্রলীগের নেতা রিয়াদের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে। আমরা মনে করি, আমেরিকায় শামীম ওসমানকে হেনস্তা করার প্রতিশোধ নিতেই অতর্কিতে ছাত্রদলের নেতাদের ওপর হামলা করেছে রিয়াদ ও তার অনুসারীরা।’
মারামারির বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমাদের পরিদর্শক (তদন্ত) কাজ করছে। ঘটনাস্থল সদর নাকি ফতুল্লা থানায় তা দেখা হচ্ছে। তা ছাড়া কে কাকে মেরেছে এবং ঘটনাটা কী তা এখনো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। বিষয়টি জেনে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Discussion about this post