নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কিংবা যে কোনভাবেই ওসমান পরিবারের নাম উঠলেই নানাভাবে শুরু হয় আ্রলোচনা সমালোচনা। ওসমান পরিবারের যে কোন সদস্য কোন না কোন সামজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক ঘটনায় সংবাদ উঠে আসে গণমাধ্যমে। আর এবার ওসমান পরিবারের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমানের একমাত্র পুত্র অয়ন ওসমান কে ঘিরে খোদ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী দুই ভাই ।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানপুত্র অয়ন ওসমান ওই দুই ভাইকে চাষাঢ়া রূপায়ন টাওয়ারে অয়ন ওসমানের অফিসে ডেকে নিয়ে এই হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ জমা দিয়েছে ফতুল্লার হাজীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সবুর মোল্লা এবং আবু সায়েম মোল্লা । এমন ঘটনায় আজকের পত্রিকাসহ একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে নগরীতে এ বিষয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
নারায়ণগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধ চলছিল ভাই বোনদের দুটি পক্ষের মধ্যে। এর মধ্যে একটি পক্ষকে ডেকে নিয়ে বাড়ি খালি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানপুত্র অয়ন ওসমানের বিরুদ্ধে।
গতকাল রোববার বিকেলে চাষাঢ়া রূপায়ন টাওয়ারে অয়ন ওসমানের অফিসে ডেকে নিয়ে এই হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ বাদী পক্ষের। ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দাবি করে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী দুই ভাই।
আজ সোমবার নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর এই অভিযোগ দেন ফতুল্লার হাজীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সবুর মোল্লা (৫৮) এবং আবু সায়েম মোল্লা (৪০)। অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, আদালতে বিচারাধীন পারিবারিক মামলা নিয়ে আমার দুই বোন ও এক ভাই অয়ন ওসমানের দ্বারস্থ হন। এ সময় অয়ন ওসমান তাদের পক্ষ নিয়ে আমাদের বাড়িঘর খালি করে তাদের বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে লোকজন নিয়ে গিয়ে বাসা খালি করার ব্যবস্থা করতে বলেন।
লিখিত অভিযোগে দুই ভাই আরও উল্লেখ করেন, ‘গত ১৬ জুন রাত ৮টায় একই এলাকার সাগর (৪০) ফোন দিয়ে জানায় ১৮ তারিখ বিকেল সাড়ে ৪টায় অয়ন ওসমান তাদের ডেকেছেন। একই ফোনে কায়েমপুর এলাকার নাহিদ পুনরায় জানায় নির্ধারিত তারিখে যেন অয়ন ওসমানের সঙ্গে তারা দেখা করেন। কেন দেখা করতে হবে এমন প্রশ্ন করলে তারা বলেন, আমরা কিছু জানি না। বিষয়টি রহস্যজনক মনে হওয়ায় দেখা করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন সবুর ও সায়েম মোল্লা।
১৮ জুন তারিখ বিকেল পৌনে ৫টায় মসজিদে প্রবেশ করার সময় সবুর মোল্লাকে সাগর ও নাহিদ জোড়পূর্বক অয়ন ওসমানের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই বসা ছিলো আমার ভাই আবু সাঈদ মোল্লা (৪৮), বোন মাবিয়া সিদ্দিকা (৫২), আয়েশা সিদ্দিকা (৫৫), ভাগ্নে মাসুদ (৩৫)। কিছুক্ষণ পরেই অয়ন ওসমান ও তার সহযোগী রিয়াদ সেখানে উপস্থিত হয়।
এরপর অয়ন আমার উদ্দেশে বলেন, আগামীকাল (১৯ জুন) সকালের মধ্যে আবু সাঈদ ও মাবিয়ার কাছে বাড়িঘর সবকিছু বুঝাইয়া দিয়া চলে যাবেন। আমি কারন জানতে চাইলে সে ধমক দিয়ে বলে আমার কারন জানার দরকার নাই। সে তার অফিসে থাকা নাহিদকে বলে সকালে তুমি আমার লোকজন নিয়ে যাবে এবং সাইদ মোল্লাকে বাড়িঘর বুঝিয়ে দিয়ে আসবে। আমরা তার কথায় ভয়ে কিছুই বলতে পারিনি এবং নীরবে চলে আসি। এই ঘটনায় পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করছি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভুক্তভোগী সায়েম মোল্লা বলেন, গতকাল আমার বড় ভাইকে হুমকি ধমকি দিয়েছিলো অয়ন ওসমান সাহেব। আজকে দুপুর ৩ টার সময়েও নাহিদ তার লোকজন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু যখন শুনেছে আমরা এসপি অফিসে আসছি তখন সে চলে গেছে। আমরা বিকেল ৪টায় পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেই।
তিনি আমাদের কথা শুনে বলেন, যেভাবে সমাধান করা যায় সেভাবেই তিনি ব্যবস্থা নিবেন। প্রয়োজনে হুমকিদাতাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
কেন এই বিরোধ জানতে চাইলে বলেন, ২০২০ সালে আমাদের বাবা মারা যান। গত বছর আমরা বাড়ি ভাগ করতে বসি। আমার দুই বোন ও এক ভাই জাল দলিল নিয়ে এসে দাবি করেন তাদের নামে নাকি সব লিখে দিয়ে গেছে বাবা। এটা নিয়ে আদালতে ৪টা মামলা আছে এবং সবগুলো বিচারাধীন। সেই বিষয় নিয়ে এখন তারা অয়ন ওসমানের ভয় দেখিয়ে আমাদের তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছে।
এই বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের ব্যক্তিগত ও সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুদেবার্তা প্রেরন করলে তিনি বার্তাটি দেখে নীরব থাকেন।
অভিযোগের বিষয়ে অয়ন ওসমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়ে থাকলে উনিই ভালো বলতে পারবেন, আমার এই বিষয়ে কিছু জানা নেই। কে করাচ্ছে সেটাও জানার বিষয়। ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে অভিযোগ উঠবে এগুলাই স্বাভাবিক। যারা অভিযোগ দিয়েছে উনাদের জিজ্ঞাসা করে বিষয়টা জেনে নেই। আমি যদি এখানে বিন্দু পরিমান মিথ্যা খুঁজে পাই তাহলে যেই কয়টা মামলা করা সম্ভব তা করার ব্যবস্থা করা হবে। আমি এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেব না। আমার নাম বেঁচে যদি কেউ কিছু করে থাকে তাহলে মামলা হবে। আমিই মামলা দেব। আমার নামে অভিযোগ এসেছে অথচ এই বিষয়ে আমার কোন ধারনাই নেই।’
Discussion about this post