এনএনইউ ডেক্স :
সদর উপজেলার ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার ভূইগড়ে রূপায়ন টাউনের ফ্ল্যাট বাসিন্দাদের উপর হামলার অভিযোগে সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নাজিমউদ্দিন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতুল্লা তানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদ সহ ৪ জন। তারা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ওই সময় তারা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদসহ ৪ জনকে মারধর করে আহত করে এবং নগদ ২ লাখ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে ।
আহতদের নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে ১৩ জনের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
একই সঙ্গে জুম্মার নামাজের পর রূপায়ন টাউনের ফ্লাট মালিকরা ঘটনার প্রতিবাদে রূপায়ন টাউনের ভেতরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে।
হামলায় আহত অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী ফারহানা ইসলামও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব। হামলায় আহত আবদুস সালাম আজাদ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অডিট ইন্সপেক্টর এবং আহত অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদের আপন ছোট ভাই।
আবদুস সালাম আজাদসহ দুইজন নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সাম্প্রতিক সময়ে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারী এবং সড়ক ও জনপথের বিশাল পরিমান জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযোগের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগ মূহুর্তে রূপায়ন টাউনের ৪নং বিল্ডিংয়ে আগুন লাগে। ওই সময় ৩নং বিল্ডিংয়ের সামনে বসে থাকা ফ্ল্যাট মালিক আমিনুল বিষয়টি টের পেয়ে দৌড়ে ৪নং বিল্ডিংয়ের উপরে উঠতে গেলে নাজিম উদ্দিনের ছোট মেয়ের জামাই হিমেলের সঙ্গে আমিনুলের ধাক্কা লাগে।
ওই সময় হিমেল আমিনুলের কলার চেপে ধরে বলে কোথায় যাচ্ছিস। তখন আমিনুল বলে উপরে আগুন লাগছে আমি সেখানে যাচ্ছি। পরে আমিনুলকে ছেড়ে দেয় হিমেল। আগুন নেভানোর পর আমিনুল নিচে এসে হিমেলকে বলে আপনি আমার কলার ধরেছিলেন কেন?
হিমেল বলে আমি মনে করেছিলাম আপনি চোর। আমিনুল বলে আমাকে কি চোরের মতো দেখতে লাগে? এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথাকাটি হয়। পরে ফ্ল্যাটের অন্যান্য মালিকরা বিষয়টি মিমাংসা করে দেয়। এর কিছুক্ষন পর নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ১৫/২০ জন লোক এসে আমিনুলকে বেধড়ক মারধর করে।
তাদের রোষানল থেকে ফ্ল্যাট মালিক আবু সাঈদ পাটোয়ারীসহ অন্যরা আমিনুলকে রক্ষা করে। কিন্তু সন্ত্রাসীরা ফ্ল্যাট মলিকদের নানা ধরনের হুমকি দিয়ে চলে যায়। মাগরিবের নামজের পর মসজিদ থেকে লোকজন বের হয়ে ঘটনাটি শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে।
ওই সময় রূপায়নের বাসিন্দা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অডিট ইন্সপেক্টর আব্দুস সালাম আজাদ বলেন এটা কি মগের মুল্লুক? বহিরাগত লোকজন ভেতরে ডুকে যাকে তাকে মারধর করবে। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? এভাবে চলতে পারে না। এরপর যে যার ফ্ল্যাটে চলে যায়।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে আবার ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী দ্বিতীয় দফায় রূপায়ন টাউনে ঢুকে প্রথমে আবু সাঈদ পাটোয়ারীকে মারধর করে। পরে অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে তার ছোট ভাই শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অডিট ইন্সপেক্টর আবদুস সালাম আজাদকে মারধর করতে থাকে। ওই সময় ছোট ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে বড় ভাই আবুল কালাম আজাদও আহত হন।
তাদের এলোপাথারী মারধর করে তার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২ লাখ টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় পুরো রূপায়ন টাউনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নাজিম উদ্দিনের লোকজন চলে যাবার সময় আবুল কালাম আজাদের কাছে আরও ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে যায়।
অন্যথায় প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে আহত আব্দুস সামাদ আজাদের বড় ভাই আশরাফ সিদ্দিকী ও আহত আবু সাঈদ পাটোয়ারী বাদী হয়ে নাজিম উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে ১৩ জনের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ জমা দেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে শুক্রবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ঘটনাটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। যে আমিনুলকে মারধর করা হয়েছে বলা হচ্ছে সেই আমিনুলই আমার মেয়ের জামাই’র কলার ধরে তার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ছিঁড়ে ফেলে।
আমি বিষয়টি দেখে তাদের মধ্যে মিমাংসা করে দেই। এরপরের ঘটনা কি ঘটেছে তা আমার জানা নেই।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, ঘটনাটি আমরা জানতে পেরেছি। ঘটনার সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর রূপায়ন টাউনের ফ্ল্যাট মালিকরা টাউনের ভেতরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন।
বক্তারা বলেন, নজিম উদ্দিন ও তার বাহিনীর কাছে রূপায়নের ৭৮৪টি ফ্ল্যাটের মালিকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। যখন তখন নাজিম উদ্দিনের বহিরাগত লোকজন ভেতরে ঢুকে যাকে তাকে নাজেহাল করছে।
এ বিষেয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলামউদ্দিন বলেন, নাজিমউদ্দিন সহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫০ থেকে ৬০ জনের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে দুটি মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে ।
Discussion about this post