সাম্প্রতিক সময়ে জেলা বিএনপির নেতাদের অনেকেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সেই “(ব্যাক্তির চাইতে দল বড় আর দলের চাইতে দেশ বড়)” মন্ত্র ভূলে গিয়ে দেশের চাইতে দল বড় আর দলের চাইতে ব্যাক্তি স্বার্থ বড় মনে করে শাসক দলের চীর শত্রু প্রভাবশালী নেতাদের লেজুড়বৃত্তি করে নিজেদের স্বার্থ হসিলে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
নারায়ণগঞ্জের বিএনপির অধিকাংশ নেতাদের এমন চৌর্যবৃ্ত্তির সকল ফিরিস্তি রয়েছে শীর্ষ নেতাদের হাতে। নাসিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে পরাজিত করতে বিএনপির কোন নেতা শাসক দলের কার কার কাছ থেকে করমর্দন করে বিএনপির নাম ব্যবহার করে স্ব স্ব স্বার্থ হসিল করেছেন তার সকল তথ্য নিজেরাই আন্ডা ভাঙ্গার মতো ফাঁস করে সকলের কাছে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন।
এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জে মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের ঘটনার অন্যতম অপরাধী পরিবার এই শহরে দাপটের সাথে চষে বেড়াচ্ছে। খোদ প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের এলাকায় বারবার কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে নগরীতে দাপটের সাথে কোন নেতা বিএনপির রাজনীতি করে যাচ্ছে কার শেল্টারে তা কি কারো অজানা রয়েছে।
সেই নারায়ণগঞ্জে ঠাঁই নেয়া বহিরাগত সমালোচিতরাই নানাভাবে বিএনপির রাজনীতি করে জিয়াউর রহমানের সেই মন্ত্র উল্টে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে মহাব্যস্ত রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করা অনুরোধে বিএনপির ত্যাগী নেতাদের অনেকেই উল্লেখিত মন্তব্য সহকারে আরো বলেছেন, “ত্যাগীদের চাইতে ভোগিরাই সুবিধা করে নিচ্ছে নানাভাবে । প্রায় দেড় যুগ যাবৎ বিএনপি সরকারের রোশানলে পরে বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে দলের শীর্ষ নেতা নানাভাবে দেশের রাজনীতিনে নাজেহাল হয়ে পরেছে। দেশের রাজনীতিতে বিএনপির সমর্থক এখনো মারাত্মক অবস্থায় রযেছে। দেশবাসীর এতো সমর্থন থাকার পরও দলের শীর্ষ নেতারা সরকারের রোষানলে একেভারে ন্যুব্জ হয়ে আছে । আর নারায়ণগঞ্জের নেতারা একেক জন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন। এমন অসংখ্য রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সংবাদ প্রমাণসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে থাকার পরও নানা কারণে এখনই এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না দল।
গণমাধ্যমে প্রকাশত একাধিক তথ্য অনুযায়ী আরো জানা যায়, অচিরেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে আগামীতে শুদ্ধি অভিযান আসতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। বিগত দিনে দলের বিরুদ্ধচারণ, নৈতিক স্খলন, বিএনপি ভাঙ্গনের সঙ্গে যোগাযোগ সহ নানা ইস্যুকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকজন নেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারেও বিশদ খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানান, আগামীতে বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না সাফ জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে দলের ভেতরে একটি গ্রুপ ২০১৩ সালের মত আবারো বিএনএফ গঠন করে বিকল্প পন্থায় বর্তমান সরকারের অধীনেই ভোটে যেতে চায়। এছাড়া জাতীয় পার্টির একটি অংশের সঙ্গেও চলছে নানা ধরনের সমঝোতার বিষয়গুলো ।
এ দুটি ইস্যুতে উঠে এসেছে মাসুকুল ইসলাম রাজীব, সাখাওয়াত হোসেন খান, আনোয়ার প্রধান, আবু আল ইউসুফ খান টিপু সহ আরো কয়েকজনের নাম।
এর মধ্যে রাজীব বর্তমানে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক। বিএনপির তথ্য মতে, তাদের কাছে খবর আছে রাজীব নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী একজনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছেন। জাতীয় পার্টির প্রয়াত একজন নেতার ছেলের আস্তানায় নিয়মিত যাতায়াত আছে রাজীবের। তাকে প্রায়শই শহরের মিশনপাড়া বা আশপাশ এলাকা থেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যায় ওই নেতা।
এর আগে এ রাজীব ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হয়েছিল। সেদিন ৫ সহযোগিকে ফেনসিডিল সহ গ্রেপ্তার করেছিল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিবি)।
তৎকালীন সময়ে ডিবির ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান, তাদের কাছে গোপন সংবাদ ছিল পাঠানটুলী এলাকায় মাদকের একটি চালান আসছে। এ খবরে বিকেলে ডিবি পুলিশের উপ পরিদর্শক (এস আই) তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম পাঠানটুলী এলাকায় অভিযান চালায়। এসময় সাদা রংয়ের প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো গ-২৫৮২০৫) তল্লাশী করে ২ ফেনসিডিল উদ্ধার ও রাজী সহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাত্রনেতা ২০০২ সালে জেলা কমিটির সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়ে সম্মেলনের কয়েকদিন পর শহরের চাষাঢ়ায় অবস্থিত সরকারী মহিলা কলেজের কমিটি গঠনের সময়ে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সহ আরো কয়েকজন নেতাকে কলেজে প্রবেশে বাধা দেয় রাজীব সহ আরো কয়েকজন। এ ঘটনায় রাজীবকে প্রথমাবস্থায় ছাত্রদল থেকে বহিস্কার করা হলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
২০১৩ সালে বিএনএফ গঠনের সময়ে মাসুকুল ইসলামের নাম ছিল। বিএনএফ প্রতীক হলো গমের শীর্ষ। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্থানীয় বিএনএফ নেতারা কিছু কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। তারা নামের প্রথম অংশ নিবন্ধনের আবেদনে উল্লেখ করলে যে নামে সব সময়ে পরিচিত সে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। নিবন্ধনের জন্য ৩টি কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে শহরের আমলাপাড়া এলাকাতে শহরের আমলাপাড়া ৯/২ এইচকে ব্যানার্জি রোডে জামাল ভিলার নীচ তলার প্রধান কার্যালয় দেখানো হয়েছে যেটার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এছাড়া সদর উপজেলার অন্য দুটি কার্যালয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ দুটি কার্যালয় হলো পিঠালীপুল সাইফউদ্দিন মাদ্রাসা সংলগ্ন আরিফ হোসেনের বাসা ও সিদ্ধিরগঞ্জের লক্ষীনারায়ণ রসুলবাগ এলাকার জসিম মিয়া এর নামের কার্যালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনএফ এর ১৪ সদস্যের একটি আহবায়ক কমিটি নিবন্ধন আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এ কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে আবু আল ইউসুফ খানকে।
কমিটির অন্যরা হলো যুগ্ম আহবায়ক রহিমা শরীফ, আনোয়ার প্রধান, কামরুল হোসেন। সদস্য সচিব হলেন মাসুকুল ইসলাম। আহবায়ক কমিটির সদস্যরা হলেন কবির প্রধান, কাজী রুবায়েত হোসেন, মাহফুজুর রহমান, আল আমিন, সাখাওয়াত হোসেন, সাফিয়া ইসলাম, মাহবুব সোবহান, কুতুবউদ্দিন ও আবদুল ইউসুফ।
এসব নেতাদের মধ্যে আবু আল ইউসুফ খান এখন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব। মাসুকুল ইসলাম জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক। আনোয়ার প্রধান হলেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক। এছাড়া কাজী রুবায়েত সায়েম সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি মূলত বিদিশা এরশাদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাদের নাম দিয়ে বিএনএফ এর কমিটি গঠন করে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে তাদের অনেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও এর সহযোগি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে কৌশলগত কারণে এসব নেতারা নিজেদের পুরো নাম বিশেষ করে যেসব নামে বেশী পরিচিত ওই অংশটুকু বাদ দেওয়া হয়েছে।
২০০৯ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি ও সে সময়ের শহর বিএনপির কমিটি গঠনের সময়ে মূল কমিটিতে ঠাঁই না পেয়ে এসব নেতারাই বিদ্রোহী কমিটি গঠন করেছিল। এমনকি ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর এসব নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহম্মেদের উপস্থিতিতে হওয়া জেলা বিএনপির সম্মেলেনস্থলে হামলা চালায়। ওই হামলার সময়ে একটি মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
মহানগর বিএনপির বর্তমান সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী রুবায়েত হাসান সায়েম অনেকদিন ধরেই গোপনে গোপনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদের সাথে যোগাযোগ করে আসছিলেন। বিদিশার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন বিদিশা ফাউন্ডেশনের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কয়েকদিন পরপরই তাদের একসাথে দেখা মিলে। এরশাদের বারিধারা প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা ও পুত্র এরিক এরশাদের সাথে প্রায় সময় ছবি প্রকাশ পায়।
দলীয় সূত্রমতে, ২০১৬ সালের নাসিক নির্বাচনে সাখাওয়াত মনোনয়ন পাবার আগ থেকেই তার পাশে ছিলেন টিপু। নিজে পাশে থেকে পুরো নির্বাচনে সহযোগিতা করেন টিপু। তার নিয়ন্ত্রণে ছিল নির্বাচনের সকল কিছু। নির্বাচনের পরেও দুজনের সম্পর্ক ছিল বেশ ভালো। তবে বাদ সাধে হঠাৎ ২ কোটির একটি অভিযোগ! হুট করেই নির্বাচনে বিভিন্ন স্থান থেকে এবং ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে সাখাওয়াত অর্থ নিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন টিপু। সেই অভিযোগ উঠার পর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও টকশোতে নিজের কথা পক্ষে নানা যুক্তি উপস্থাপন করে সাখাওয়াতকে এ বিষয়ে প্রমাণ দিতে বলেন তিনি। এ থেকে তৈরী হয় দূরত্ব। সেই দূরত্ব থেকে টিপু সাখাওয়াতকে মহানগর বিএনপির সর্বশেষ কমিটির নানা কর্মসূচীতে দূরে রাখতেন। শেষ কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালামকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে সেখান থেকে সাখাওয়াতকে মাইনাস করেন টিপু। দলের কর্মসূচীতে অনেক সময় সাখাওয়াতকে জানাতেন না টিপু এমন অভিযোগ করেছেন সাখাওয়াত। তবে দলের কেন্দ্রের চাপে সর্বশেষ কর্মসূচীগুলো একসাথে পালন করতে হয়েছে তাদের।
সবশেষ এক অনুষ্ঠানে আবু আল ইউসুফ খাঁন টিপু গণমাধ্যমকে বলেন, সাখাওয়াত হোসেন ছাত্র রাজনীতি, যুব রাজনীতি কিংবা মহানগর বিএনপির কোন রাজনীতিতে ছিল না। যখন নির্বাচন আসলো তখন আমি তৈমূর আলম খন্দকার, আবুল কালাম এবং গিয়াসউদ্দিন সাহেবকে অনুরোধ করেছি নির্বাচন করার জন্য। কিন্তু তারা কেউ রাজি হয়নি। সেই সময়ে সাখাওয়াত হোসেন খানের সাথে অ্যাডভোকেট হওয়ার সুবাদে আমার সুসম্পর্ক ছিলো। সে আমাকে বললো আমি নির্বাচন করতে চাই। আমি বললাম নির্বাচন করতে তো ফান্ড লাগবে। সে বললো আমি ১ কোটি টাকা খরচ করতে পারবো। তখন পর্যন্ত তাকে কেউ চিনে না। আমি ম্যাডাম আর মহাসচিবের সামনে ৪৫ মিনিট কথা বললাম তাকে নমিনেশন দেয়ার জন্য। আমাকে ম্যাডাম জিজ্ঞাসা করলো কত বছর ধরে আছো এই দলে ? আমি বললাম আমি ৩৪ বছর ধরে বিএনপি করছি । তিনি শুনে শিমুল বিশ্বাসকে বললেন ওকে একটা চেয়ার দেও। আমি তার পাশে বসলাম। ম্যাডাম আমাকে বললো কাকে নমিনেশন দিলে ভালো হবে ? কাকে তুমি বিজয়ী করে আনতে পারবে ? আমি কথা বলার সময় সোনারগাঁ বিএনপির মান্নান আমার কথা কেড়ে নিচ্ছিলো । ম্যাডাম তাকে ধমক দিয়ে বললো তুমি থাকো সোনারগাঁয়, আর ও থাকে সিটিতে। তোমার থেকে ও ভালো বলতে পারবে। আমি তখন বললাম, ম্যাডাম সাখাওয়াত ৭ মার্ডার মামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে, বেশ কয়েকবার আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলো। ম্যাডাম এই কথা শুনে আমার সামনেই মহাসচিবকে বললেন, এই ফখরুল সাখাওয়াতকে নমিনেশন দিয়ে দাও। তাকে যখন নমিনেশন এনে দিলাম তখন নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র নেতারা আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়। অথচ ম্যাডামকে আশ্বাস দেয়া হয়েছিলো যে সাখাওয়াতকে নমিনেশন দিলে সে অবশ্যই বিজয়ী হবে। ম্যাডাম তৎকালীন দলের মিডিয়া উইং শাইরুলকে বললো আমার সাথে যেন ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রাক রাখে। নির্বাচনের মনোনয়ন যখন চূড়ান্ত হলো তারপর ১৫ দিন কোন নেতা তার পাশে আসে না। আমি তাকে নিয়ে ২৭টা ওয়ার্ডের মসজিদে মসজিদে নামাজ পরে সেই এলাকায় ঘুরেছি। ৫ ওয়াক্ত নামাজে নিয়ে তাকে প্রচারণা চালিয়েছি। ৩ দিন পর সে বলে আমার কাছে টাকা নাই তুমি ম্যাডামের কাছে টাকা চাও। আমি শাইরুল ভাইকে বলার পর সে বলে, সাখাওয়াত না বললো ১ কোটি খরচ করবে ? তাহলে তার টাকা কোথায় ? তারপরে ম্যাডামকে অনুরোধ করে টাকা আনিয়েছি ।
সাখাওয়াতের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলাতে। ১৯৮৪ সালে তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদলের সহ সভাপতি ছিলেন। ৯০ দশকে নারায়ণগঞ্জ আসার পর আইন কলেজে ভর্তি হন এবং আইন পেশায় জড়ান। তখন থেকেই বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।
২০০৯ সালের ২৮ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপির সম্মেলন হয়। সেদিন শহরের ৯টি ওয়ার্ডের প্রতি ওয়ার্ড থেকে ৫১ জন করে ৪৫৯ জন কাউন্সিলরদের ভোটে জাহাঙ্গীর আলম সভাপতি, এটিএম কামাল সেক্রেটারী নির্বাচিত হন। তবে ওই কমিটি গঠনের আগেই নারায়ণগঞ্জে বিএনপির একটি গ্রুপ বিদ্রোহ করে পাল্টা কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিতে সভাপতি করা হয় নুরুল ইসলাম সরদারকে যিনি ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে নির্বাচন করে পরাজিত হন। আর সেক্রেটারী হন সাখাওয়াত হোসেন খান। ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগার মিলনায়তনে জেলা বিএনপির দ্বি বার্ষিক সম্মেলন হয়। তবে ওই সম্মেলনের আগের দিন নারায়ণগঞ্জ পৌর বিএনপির প্যাডে বিদ্রোহী গ্রুপের সভাপতি দাবিদার নুরুল ইসলাম সরদার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রতিহত করে সেখানে প্রতিবাদ সভার ডাক দেওয়া হয়। জেলা বিএনপির সম্মেলনের আগে সম্মেলন স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতে একটি রিট করা হয়। বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপুর স্থগিতাদেশ চেয়ে নারায়ণগঞ্জ চতুর্থ সিনিয়র সহকারী জজ বেগম মেহেরুন্নেছার’র আদালতে ২৪ নভেম্বর একটি দেওয়ানী মামলার আবেদন করেন। একই আবেদনে মামলাটি নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সম্মেলনের ওপর স্থগিতাদেশ তথা নিষেধাজ্ঞা প্রদানের আর্জি করা হয়। তবে আদালত সেটা আমলে নেয়নি। ওই আবেদনের আইনজীবী ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান। শুনানী চলাকালে উভয় পক্ষের আইনজীবিদের মধ্যে ব্যাপক বাদানুবাদ ঘটে। ২৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তবে ওই সভা বন্ধের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে বিএনপির বিদ্রোহী গ্রুপের নেতারা হামলা করলে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
মনিরুল ইসলাম সজল এর বয়স প্রায় ৪০। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জের যুবলীগ ক্যাডার নজরুলের শেল্টারে থেকে তার নির্দেশে ওই সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জ ইউপি নির্বাচনে বিএনপি নেতা নূর হোসেনকে গুলি করে আলোচনায় উঠে আসে সজল। জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পাওয়ার পর শহরের কিল্লারপুল এলাকায় ছাত্রদলের অফিস খুলে বেশ আলোচিত হয় সজল। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলা গ্রেপ্তার হলেও সজল পরবর্তিতে তৈমূরের সঙ্গে হাত মিলান। ২০০৭ সালে ওয়ান এলেভেনের পর তারেক রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর ঢাকাতে পিজি হাসপাতালে অবস্থান করে সজল। বর্তমানে তিনি মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব। তার বিরুদ্ধেও আছে কমিটি বাণিজ্য সহ নানা অভিযোগ।
তবে টিপু ও রাজীব উভয় পরে বিএনএফে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেন। অপরদিকে সাখাওয়াতের দাবী, বিএনপিতে পদ পদবী না পেয়ে যারা দল ভাঙার চেষ্টায় লিপ্ত তারাই এখন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এতো অভিযোগের পরও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে কোন্দল মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আর এই কোন্দলে ঘি ঢালছেন স্কুল জীবনে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছে বাইত্যা ইন্দুর ওরফে ইন্দুইরা নজরুল উপাধি পাওয়া আড়াইহাজারের নজরুল ইসলাম আজাদ । বিএনপির শীর্ষ নেতাদের তালিকায় অবস্থান তৈরী করে নারায়ণগঞ্জের রাজনতিকে কলুষিত করে চলেছেন এই নজরুল ইসলাম আজাদ। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কোন্দলের মহা কারিগর নজরুল ইসলাম আজাদের বিষয়ে তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু মন্তব্য করে বলেছিলেন, “নজরুলকে আমাদের স্কুল জীবনের বন্দুরা বাইত্যা ইন্দুর আবার কেউ ইন্দুইরা নজরুল কইয়া ডাকতাম ! সে ছিলো মহাধূর্ত ! ইন্দুরের মতো চলাফেরা করতো । তাকে ধরা যাইতো না । সেই ইন্দুরের নাম আমরা নজরুল বলেই জানতাম । পরে বিএনপির রাজনীতিতে ডুইক্কা তার নাম দেখি নজরুল ইসলাম আজাদ । নজরুল একদিকে জিয়া পরিবারের নাম বেইচ্যা চলে আর দিকে দিকে আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতারে বাপ ডাকে !“
Discussion about this post