সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট প্রস্তাবিত কমিটিতে জামপুর ইউনিয়নের সামসুল আলমের নাম থাকা নিয়ে স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামসুল স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সামসুল আলমের পরিবারের সদস্যরা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেন। তার দাদা নজ্জা টেটনা মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবা নুরুল ইসলাম শান্তি কমিটির পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। তাছাড়া তার বাবা চুরিসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি একাধিকবার জেলে গিয়েছেন। বর্তমানে তার দুই চাচা জামায়াত-বিএনপির রাজনীতি করছেন। তার চাচা আমজাদ হোসেন ও মোহাম্মদের বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপির সময়কার অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মামলা আছে।
২০০৪ সালের দিকে সামসুল আলমও জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সামসুল ও তার চাচারা গা ঢাকা দেন। পরবর্তীকালে ২০১৭ সালে হঠাৎ প্রকাশ্যে এসে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সামসুল।
জামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি দেওয়ান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পাওয়ার মতো অনেক যোগ্য ত্যাগী নির্যাতিত তৃণমূল নেতার নাম দেওয়া হয়নি। অথচ স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য ও যুবলীগে অনুপ্রবেশকারীর নাম প্রস্তাবিত কমিটিতে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
অনেক নেতারা আরো ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, শুধু সোনারগাঁ কেন ? নারায়ণগঞ্জের ব্যবসাযী নেতাদের নেতা এখন কি করে ? চিহ্নিত কুখ্যাত রাজাকার পুত্র এখন নানা কলকাঠি নাঢ়ছে । কুখ্যাত রাজাকারপুত্ররা এখন নব্য আওয়ামীলীগার ! তারাই এখন বড় আওয়ামীলীগার ! তারাই কিছুদিন পর বলবে আমরাই ত্যাগী আওয়ামীলীগার ! তাদের আস্কারা দেয় কারা ? আওয়ামীলীগের স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের কেউ কেউ মুখে নৌকা নৌকা বলে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ নেত্রীকে নিয়ে তেলবাজি করলেও আসলে এরাই রাজাকার পুত্র ও তার পরিবারদের প্রকাশ্যেই পৃষ্ঠপোষকতা করছে । তাদের আগে বিচার হওয়া উচিৎ।
জামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সদস্য রাসেল আহম্মেদ খোকা বলেন, আওয়ামী লীগ বিরোধী পরিবারের সন্তান কমিটিতে থাকায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী পরিবারের সদস্যকে যেন আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান দেওয়া না হয় জেলা কমিটির প্রতি সেজন্য অনুরোধ রইলো।
জামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আরেক সদস্য মনিরুজ্জামান ভুট্টু বলেন, অনেক সিনিয়র নেতাদের নাম বাদ দিয়ে সামসুল আলমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা ত্যাগীদের অবমূল্যায়নের শামিল। তার নাম দেওয়ায় মনে হচ্ছে টাকার বিনিময়ে তিনি কমিটিতে ঢুকেছেন।
জামপুর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি ওসমান গণি বলেন, কাউকে দলীয় পদ দেওয়ার আগে তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। কোনো অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিডকে যেন আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান দেওয়া না হয় সেজন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সামসুল আলম গণমাধ্যম কে বলেন, আমি একজন আওয়ামী লীগের লোক। সংগ্রাম ও রাজপথের রাজনীতি করে এই জায়গায় এসেছি। এ দেখে উপজেলার সিনিয়র নেতারা আমাকে পদ দিয়েছেন। কোনো টাকার বিনিময়ে পদ নিইনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, যাচাই-বাছাই করে আমরা কমিটিতে নাম প্রস্তাব করে পাঠিয়েছি। এতে নামের মধ্যে দুই-একজনের সমস্যা থাকতেই পারে। জেলা কমিটি তাদের এখতিয়ারে যাচাই-বাছাই করে বাদ দিয়ে কমিটির অনুমোদন করবে।
Discussion about this post