সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁও থানায় নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা ৩ মামলায় হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হককে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার ( ৯ মে ) বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষ শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবু রায়হান।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী।
গত বুধবার রাজধানীর পল্টন ও চট্রগ্রামের হাটহাজারী থানায় দায়ের করা ৫ মামলায় হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে জামিন দেন হাইকোর্ট।
তার জামিন বিষয়ে রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন মোল্লা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।
আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের জেরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতায় অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঢাকা, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ঢাকার পল্টনের ৪ মামলা ও হাটহাজারীর এক মামলায় হাইকোর্ট মামুনুল হকের জামিন বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন। আজ রুল যথাযথ ঘোষণা করে এই ৫ মামলায় তাকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে আরও মামলা রয়েছে। এ কারণে তিনি এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ও সহিংসতার পর বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় আসেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা মামুনুল হক। এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরেরও বিরোধিতা করেন তিনি। এ নিয়ে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের জেরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতায় অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়।
এসব ঘটনায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে তিন ডজন মামলা হয়। একই বছরের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার একটি রিসোর্টে এক নারীসহ ঘেরাও হন মামুনুল হক।
এক পর্যায়ে রিসোর্টে হামলা চালিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেন হেফাজতের কর্মীরা। ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের একটি মাদ্রাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নরী নিয়ে রয়েল রিসোর্টকাণ্ডের ২৭ দিন পর ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে কথিত স্ত্রী মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন।
বিএনপি, হেফাজত ও শাসক দলের নেতাদের গুঞ্জন থেকে আরো জানা যায়, “নারী নিয়ে মামুনুল হকের কেলেংকারীর পর চুপসে যায় হোফাজত ইসলামের সকল আন্দোলনকারীরা। সরকার হটানোর আন্দোলন করতে হেফাজত ইসলাম দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জ্বালাও, পোড়াও, তান্ডব, অগ্নিসংযোগসহ সকল ধরণের অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো মামুনুল হকের অনুসারী নারায়ণগঞ্জের একাধিক চক্র। সেই তান্ডব – অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একের পর এক মামলা ও মামুনুল হকের নারী কেলেংকারীর পর হফাজত ইসলামের নেতারা দফায় দফায় স্বরাস্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে মুচলেকা প্রদান করে। এরপর নারায়ণগঞ্জের সকল তান্ডরের হোতা মাওলানা আউয়ালসহ তার অনুসারীরা মামলা থেকে রক্ষা পেতে শুরু করে তদ্বির। এমন মুচলেকা দেয়ার কারণেই হেফাজতের মামুনুল হক, মাওলানা আউয়ালসহ অনেকেই জামিন পাচ্ছে । পাচ্ছে মামলা থেকে মুক্তি। এক পর্যায়ে ওই সকল মামলা থেকে হেফাজত নেতারা মুক্তি পেলেও বিএনপির অনেক নেতাদের বিরুদ্ধে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশও দেয় বিজ্ঞ বিচারক।”
Discussion about this post