নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের দূর্ণীতি, তিতাস গ্যাসের দূর্ণীতিসহ বিভিন্ন সরকারী সংস্থা অসাধু কর্মকর্তাদের লাগামহীন লুটপাটের নানা অপরাধের স্বচিত্র প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও কোন অবস্থাতেই থামানো যায় নাই অসাধুদের মাসোয়ারা আদায়ের বিরামহীন ঘৃন্য ও নির্লজ্জ কর্মকান্ড। ধারাবাহিকভাবেই চলছে অসাধু কর্মকর্তাদের দূর্ণীতি। এতো দূর্ণীতির মধ্যে এবার দৈনিক কালের কণ্ঠের সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি তুলে এনেছে অবৈধ চুনা ভাট্টির গ্যাস চুরির মহোৎসবের চিত্র। যা নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো ।
তিতাস, পরিবেশ ও জেলা প্রশাসন কে ম্যানেজ করে তাদের নাকের ডগায় যা চলছে বছরের পর বছর যাবৎ।
এখন দেখার বিষয় লুটপাটের এই মহোৎসবের বিষয়ে বি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তিতাস, পরিবেশ ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা । এমন মন্তব্য করেছেন নগরীর অনেকেই
নেই পরিবেশের ছাড়পত্র ও কারখানা চালানোর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। পরিবেশ দূষণ রক্ষার্থে আবাসিক এলাকা থেকে কারখানা সরিয়ে নিতে একাধিক নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবু অদৃশ্য কারণে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবৈধভাবে চলছে পরিবেশ দূষণকারী ১৪টি চুনা কারখানা।
এ বিষয়ে এলাকাবাসীরা স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নিতে কোন ‘রা’ করে না প্রশাসন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অবৈধভাবে পরিচালিত বিভিন্ন লাইম কারখানায় চুনা গুঁড়া করে কাজ চলছে। ধোঁয়া বেরুচ্ছে কারখানা থেকে। এসব কারখানার মধ্যে রয়েছে- নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের সিআইখোলা এলাকায় জাজিরা লাইমস, হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুকের মদিনা লাইমস, চাঁন মিয়ার রনি লাইমস, জালাল মিয়ার সুরমা লাইমস, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্বে বাবুল মিয়ার ফয়সাল লাইমস, মিজমিজি সিআই খোলা এলাকায় খোরশেদ মিয়ার ঢাকা লাইমস ও যমুনা লাইমস, সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় প্রয়াত আবু তালেবের ভাই ভাই লাইমস, প্রয়াত সুন্দর আলীর শরীফ লাইমস, আটি এলাকায় হযরত আলীর আরাফাত লাইমস। এ ছাড়াও আশরাফ আলী লাইমসের মালিক জালাল মিয়া, মেঘনা লাইমসের মালিক আব্দুল হাই, ওয়াপদা কালোনী এলাকায় খাজা লাইমসের মালিক সোহেল মিয়া, হারুন লাইমসের মালিক সাদেক মিয়া, রহমান লাইমসের মালিক শহিদ হোসেন বিটু, আটি ছাপাখানা এলাকার শুভ লাইমসের মালিক আবু সুফিয়ান, একই এলাকায় শরিফ উদ্দিন ও রমজান মিয়া চুনার ধোঁয়া উড়িয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি নিয়ম ও পরিবেশ দূষণ বন্ধে আবাসিক এলাকা থেকে এসব কারখানা সরিয়ে নিতে গত তিন বছর আগে নোটিশ প্রদান করে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর। নির্দিষ্ট সময় দিয়ে কয়েক দফা নোটিশ করলেও অদৃশ্য কারণে অদ্যাবধি এসব কারখানা সরানো হচ্ছে না। কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট দপ্তর। প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন করছেন না।
অপরদিকে, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করছে না নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। ফলে কারখানাগুলো বৈধতা হারালেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিভিন্ন মহলকে ‘ম্যানেজ’ করেই চালানো হচ্ছে কারখানাগুলো।
সিআইখোলার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, এই এলাকার কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের নেতৃত্বে এসকল অবৈধ চুনা কারখানা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। স্থানীয় প্রশাসন ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করেই তিনি বহাল তবিয়তে আবাসিক এলাকায় কাগজপত্র নবায়ন ছাড়া চুনাকারখানাগুলো চালিয়ে আসছেন। আমরা অবিলম্বে চুনা কারখানাগুলো অন্যত্র স্থানান্তরের জোর দাবি জানাই।
আফিফা রহমান নামে এক বাসিন্দা জানান, চুনা কারখানার সাথে বাসাবাড়ি হওয়ায় আমরা খুবই সমস্যায় আছি। তীব্র গরম আর কারখানার কালো ধোঁয়ায় জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। শিশু ও বয়স্করা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
কারখানার বৈধতা না থাকা সত্বেও কিভাবে চলছে আবাসিক এলাকায় চুনা কারখানা গুলো : এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন কারখানার মালিকরা। তবে চুনা কারখানার একাধিক মালিক কারখানা স্থানান্তরে পরিবেশ অধিদপ্তরের চিঠি ও ছাড়পত্র নবায়ন না করার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মেসার্স জাজিরা লাইমসের মালিক আনোয়ার ইসলাম বলেন, আমরা যখন চুনা কারখানা করেছিলাম তখন ওই এলাকায় ঘনবসতি ছিল না। তবে আমরা নতুন জায়গা দেখে কারখানা স্থানান্তরের চিন্তা করছি। আমরা প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে এ সকল কারখানা পরিচালনা করছি না।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ২০১৬ সাল থেকে এসকল চুনা কারখানার মালিকদের পরিবেশের ছাড়পত্র নবায়নের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। কারখানাগুলো অন্যত্র সরাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে সকলকে। খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, আবাসিক এলাকায় কোনো অবস্থাতেই চুনা কারখানা পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। এসকল মালিককে তাদের চুনাভাট্টি অন্যত্র সরানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Discussion about this post