এলাকার অনেকেই বাকরুদ্ধ । কি বলবেন । আড়াইহাজারে কি আওয়ামীলীগ নেতাদের অভাব পরেছে ? বিতর্কিত সেই আওয়ামী লীগ নেতা হালিম সিকদারকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।
উপজেলার গোপালদী পৌরসভার মেয়র পদে আবারো হালিম সিকদারকে নৌকা প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ ।
মাত্র দুই মাস পূর্বে অর্থাৎ ৬ ফেব্রুয়ারি চুরির অপবাদে তিন শিশুকে মারধরের পর গ্রাম ঘুরিয়ে দুজনের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামি এই হালিম সিকদার।
তিনি আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ২০১৩ ও ২০১৮ সালের পর টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি গোপালদী পৌরসভা মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেলেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, হালিম সিকদার ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মনিরুজ্জামানসহ আরও ৩ জন গোপালদী পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) টানা তৃতীয়বারের মতো দলের পক্ষ থেকে হালিম সিকদারের নাম ঘোষণা করা হয়।
হালিম সিকদারকে মনোনয়ন দেওয়ায় মনক্ষুন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান। দলীয় প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তিনি।
মনিরুজ্জামান বলেন, ‘হালিম সিকদার একজন চিহ্নিত শিশু নির্যাতনকারী। খেলার ছলে একটি লোহার টুকরা হাতে নেওয়ায় তিনি ৭, ৮ ও ১১ বছর বয়সী তিন শিশুকে মারধরের পর হাত বেঁধে গ্রাম ঘুরিয়েছেন তিনি। পরে দুই শিশুর মাথার চুল কেটে দেন। শুধু তাই নয়; বিষয়টি কাউকে জানালে শিশুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে গ্রামছাড়া করার হুমকিও দিয়েছেন তিনি। গণমাধ্যমের খবরে দেশ-বিদেশের মানুষ বিষয়টি জেনেছে। আমরা প্রতিবেশী হিসেবে ঘটনার সবকিছু জানি। এমন একজন শিশু নির্যাতনকারীকে দলের প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারছি না। তাকে মনোনয়ন দেওয়ার খবর শুনে এলাকার ভোটাররাও হতভম্ব হয়ে গেছে। ’
দলের এমন সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক হিসেবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘গত ১০ বছরে তিনি (হালিম সিকদার) নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে ছয়টি ওয়ার্ডেই কোনো উন্নয়ন কাজ করেননি। কাজের টাকা লুট করেছেন। এলাকায় সরকারের উন্নয়নের কথা বলতে গেলেই এখন আমাদের লজ্জায় পড়তে হয়। দেশের দুর্গম এলাকাগুলোও উন্নয়ন বঞ্চিত হয়নি। অথচ আমরা ঢাকার পাশের একটি পৌরসভার বাসিন্দা হয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত। কোন মুখ নিয়ে এমন একজন মানুষের জন্য আমরা ভোটারদের কাছে যাব। তাছাড়া গোপালদীর মানুষ একজন শিশু নির্যাতনকারীকে ভোট দেবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের মাঠে থাকব। ’
এছাড়াও এই পৌরসভায় স্থানীয় ব্যবসায়ী তানভীর হোসেন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের মাঠে আছেন।
তানভীর হোসেন বলেন, মাত্র দুইমাস আগেই এতো বড় একটি ঘটনা ঘটলো। স্থানীয় মানুষ বিষয়টি নিয়ে এখনো ক্ষুব্ধ। এরই মধ্যে এমন একজন ব্যক্তির আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া দলের সমর্থক হিসেবে আমাদের জন্য হতাশার। ’
হালিম সিকদারের ওপর অভিযোগও আনলেন তিনি। তানভীর বলেন, হালিম সিকদার মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে আমাকেসহ আমার পরিবারের সকলকে হুমকি দিয়ে আসছে। যাতে আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন থেকে সরে আসি। তার ক্যাডার বাহিনী নুর মোহাম্মদ এই হমকি দিয়ে আসছে।
আড়াইহাজার থানায় করা তিন শিশু নির্যাতনের মামলার আসামির মধ্যে অন্যতম হালিম সিকদার। পুলিশ মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর থেকে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের মামলা ও হামলার হুমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠে মেয়র হালিম সিকদারের বিরুদ্ধে।
পরে মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্তের ভার নেয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) তাপস কান্তি রায় মামলাটির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘মেয়রসহ মামলার সব আসামি এখন জামিনে আছেন। আমরা শিগগিরই মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দেব। ’
এদিকে হালিম সিকদার ফের দলীয় মনোনয়ন পাবার পর নির্যাতনের শিকার শিশুদের পরিবার বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কে আছেন। রোববার তিন শিশুর মধ্যে দুই শিশুর পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। নাম না প্রকাশের শর্তে দুই শিশুর তিনজন আত্মীয় জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা ক্ষুব্ধ। কিন্তু কোথাও কথা বলতে পারছেন না।
শিশুদের চুল কেটে একজন জনপ্রতিনিধির এমন কান্ডে মামরা দায়েরেরে পর পুলিশ এই অপরাধীকে গ্রেফতার না করায় আবারো ওই শিশুদের পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে নানাভাবে তান্ডব চালিযেছে ওই মেয়র । এ সময় (৮ ফেব্রুয়ারী) “তোমাগো পোলাপাইন চুরি করছে আমি শাসন কইরা হালকা পিটাইয়া চুল কাটছি । তাতে কি হইছে ? মামলা করছো ! এই মামলায় কি হইবো, আমার……ছিড়তে পারবা ? আমি জামিন নিয়া আইমু। হেরপর থাকবা কই ? এলাকায় তোমাদের কোন বাবায় শেল্টার দিবো ? তোমাগো সাংবাদিক বাবারা কি তোমাদের আইয়্যা ঠেকাইবো ?“ এমন হুমকির পর ঘটনা নিয়ে ভুক্তভোগীরা রয়েছে চরম শংকায় ।
Discussion about this post