শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও হকার ফুটপাত দখল করবেই এমন গোঁয়ার্তুমি করায় হকার ও সাশক দলের একাংশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বাদীপক্ষের নারাজি গ্রহণ করেছেন আদালত।
মামলাটি পুনরায় অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সামসাদ বেগমের আদালত এই আদেশ দেন। এর আগে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনেন আদালত।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী জসিম উদ্দিন বলেন, ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে মেয়র আইভীর ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম।
যাকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে জনমনে। তিনি এই জেলায় নানা পন্থায় প্রায় ৭ বছর অতিবাহিত করেন কোন ক্ষমতাবলে ? তিনি শাসক দলের ওই একাংশের আদা নেতা / পাতি নেতা এবং আসামীদের সাথে গোপনে সাক্ষাৎ করার গুঞ্জন রয়েছে । একই সাথে এই মনিরুল ইসলাম নিজেকে সাবেক ঢাকা বিভাগীয় ডিআইজি হাবিবুর রহমানের ভায়রা ভাই পরিচয় দিয়ে অনেকের সাথে দাপটে দেখায় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এই মামলায় বাদীপক্ষ সেই প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আদালতে নারাজি দেওয়া হলে আদালত সেই আবেদন গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি শহরের ফুটপাতে হকার বসানো নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় নারায়ণগঞ্জে। দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা ওই সংঘর্ষে শামীম ওসমানের সমর্থকেরা মেয়র আইভী ও তার অনুগামীদের ওপর হামলা চালান। এ সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র তুলে গুলি ছুড়তে দেখা যায় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম এবং নিয়াজুল ইসলামকে। কিন্তু পিবিআই এর প্রতিবেদনে অস্ত্র মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় দুজনকে। অথচ ঘটনার পরপরেই গণমাধ্যমে ফলাও করে তাদের ছবি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে ক্ষুব্ধ হয়ে নারাজি দেওয়ার কথা বলেন মেয়র আইভী।
২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর আদালতে মামলা দায়ের করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তদন্ত পায় পিবিআই। কয়েক দফা তদন্ত কর্মকর্তা বদলের পর ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন পিবিআই পরিদর্শক আতাউর রহমান ভূঁইয়া। আর পিবিআই নারায়ণগঞ্জের দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম।
নারায়ণগঞ্জ পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম (পিপিএম) নরায়ণগঞ্জ জেলায় কাজ করছেন প্রায় সাত বছর যাবৎ । কি করছেন তিনি ? নারায়ণগঞ্জ জেলা (এসপি) পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়িত হওয়ার জন্য তার খায়েস দীর্ঘদিনের। এসপি হারুন নারায়ণগঞ্জ থেকে বদলী হওয়ার পর এই মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম (পিপিএম) তিন মাসের জন্য চলতি দায়িত্ব পালন করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরেন। এরপর কোন অবস্থাতেই নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যাতে যেতে না হয় সেই লক্ষ্যে এই নারায়ণগঞ্জ জেলায় কাজ করে যাচ্ছেন । একটি বিশেষ রাজনৈতিক নেতার ও তার পাতি/ সিকি নেতার পক্ষে অন্ধের মতো কাজ করেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে পিবিআই এর সকলের মাঝে । তাই এই চাঞ্চল্যকর মামলার আসামীদের বাড়তী সুবিধা দিয়ে আবার নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ পেতে এমন প্রতিবেদন দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
সেই প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা দুই অস্ত্রধারীর বিষয়ে বলেন, ঘটনার দিন নিয়াজুল ও শাহ নিজামের হাতে পিস্তল দেখা গেছে। প্রথম জনের পিস্তল লাইসেন্স করা। দ্বিতীয়জনের বন্দুকের লাইসেন্স থাকলেও পিস্তলের নেই। শাহ নিজাম বিনা লাইসেন্সে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন করলে তা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেলেও জামিনে থাকায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি এবং অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাই দুজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের ধারা প্রমাণ করা যাচ্ছে না।
অস্ত্র আইনের ধারা থেকে অব্যাহতি দিলেও হত্যাচেষ্টা, জখম, ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে পেনাল কোডের একাধিক ধারায় ১২ জনকে আসামি করেছে পিবিআই। এজাহারে থাকা আসামির তালিকা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন সাতজন।
আসামিরা সবাই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী বলে জানিয়েছে মামলার বাদীপক্ষ।
এজাহারভুক্ত আসামি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন, যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগকর্মী নাসির উদ্দিন ওরফে টুন্ডা নাসির ও চঞ্চল মাহমুদকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছিলো পিবিআই। তাদের মধ্যে মিজানুর রহমান সুজন গত বছরের ৯ জানুয়ারি মারা গেছেন।
পিবিআই কর্তৃক দাখিল করা বিতর্কিত অভিযোগপত্রে আসামি করা হয় : মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, যুবলীগ নেতা নিয়াজুল ইসলাম খান, হকার নেতা রহিম মুন্সি, আসাদুল ইসলাম ওরফে আসাদ, সায়মন, ইকবাল হোসেন, মাসুদ পাটোয়ারী ওরফে শুক্কুর, তোফাজ্জল, পলাশ মিয়া, মহসীন বেপারী, সালাউদ্দিন ওরফে সালাউদ্দিন গাজী এবং সাদেকুল ইসলামকে। আসামিদের মধ্যে শাহ নিজাম ও নিয়াজুল ইসলাম খান এজাহারভুক্ত আসামি। বাকিরা সকলেই এজাহার বহির্ভূত।
হকার নেতা রহিম মুন্সি, আসাদুল ইসলাম ওরফে আসাদ, সায়মন, ইকবাল হোসেন, মাসুদ পাটোয়ারী ওরফে শুক্কুর, তোফাজ্জল, মহসীন বেপারী, সালাউদ্দিন ওরফে সালাউদ্দিন গাজী এবং সাদেকুল ইসলাম এখনো নগরীর ফুটপাত দখল করে উল্লেখিত এজাহারভূক্ত আসামীদের নাম এবং সদর থানার পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নাম ব্যবহার করে নিয়মিত চাঁদাবাজি করেই যাচ্ছে প্রকাশ্যেই। এমন প্রকাশ্য চাঁদাবাজির দৃশ্য এবং নেতা ও ওসির নাম ব্যবহার করার ঘটনা নগরবাসীর সকলেই জানলেও এখনো জানেন না ওসি আর শাসক দলের ওই নেতাগণ।
Discussion about this post