“সাংবাদিকরে কুপাইয়া মামলা খাইছি, এবার মাইরা ফালাইলে তো আরেক টা মামলা হইবো ! আবার নাইলে আরেকটা মামলা খামু ! সাংবাদিক সোহেলরে কুপাইয়া যখন এতো কিছু, মাস্টররে পিটানোর পর কি হইছে ? দেড় মাস আগের ওই মাস্টর তো এখন পায়ের কাছে আইয়া বইয়া থাকে !”
এভাবেই কাঞ্চন বাজারে দাঁড়িয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল ওরফে কলির সহযোগী সন্ত্রাসীরা বারবার হুমকি দিয়েই যাচ্ছে । আর একই সাথে প্রকাশ্যেই গোলাম রসুল ওরফে কলিসহ সকল আসামীরা বীরদর্পে ঘুরে বেড়ালেও এই অপরাধীদের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারছে না পুলিশ।
অথচ এএসপি (গ-সার্কেল) আবির হোসেন কাঞ্চন ছাত্তার জুট মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালামের উপর হামলার পর একই ভঙ্গিমায় বলেছিলেন, “শিক্ষককে মারধরের খবর শুনেছি। এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আর এবার সাংবাদিক সোহেল কিরনের উপর হামলার পর এএসপি (গ-সার্কেল) আবির হোসেন বলেছেন একই কথা।
শিক্ষক পিটানোর পর কি করেছেন পুলিশ ? এমন প্রশ্ন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে রূপগঞ্জে
আর এমন হুমকি এবং পুলিশসহ কোন আইনশৃংখলা বাহিনী অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় “আমরা বাঁচতে চাই, আমাদের বাঁচতে দিন, নয়তো থানা হাজতে আশ্রয় দিন” এই দাবি নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক সোহেল কিরণসহ তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তা চেয়ে রূপগঞ্জ থানায় অবস্থান নিয়েছেন।
রবিবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে দুই ঘন্টা অবস্থান নেওয়ার পর এএসপি (গ-সার্কেল) আবির হোসেন এসে নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে পরিবার অবস্থান তুলে নেন।
সাংবাদিক সোহেল কিরণের বাবা আব্দুল হান্নান বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে গত ৪ এপ্রিল রাতে কাঞ্চন বাজারে সোহেল কিরণকে কলি বাহিনীর সন্ত্রাসী কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় গোলাম রসুল কলিকে প্রধান আসামী করে সন্ত্রাসী আফজালসহ ৭/৮ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনার ৫দিন পার হয়ে গেলেও মামলার আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া মামলা দায়েরের পর থেকেই মামলা তুলে নিতে নানা ভাবে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। একটি বড় প্রভাবশালী এতে সহযোগীতা করছে বলে জানতে পেরেছি। এছাড়া যে কোন সময় হত্যার শিকার হতে পারি আমরা। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই বাধ্য হয়ে রূপগঞ্জ থানায় এসে আশ্রয় চেয়েছি।
সোহেল কিরণের মা রওশন আরা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে যারা হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে তাদের বিচার চাই। আমার ছেলে কারো কোন ক্ষতি করেনি। ছোট নাতিটাকে যারা এতিম করতে চেয়েছে আল্লাহ তাদের বিচার করবো।
এএসপি (গ-সার্কেল) আবির হোসেন বলেন, সোহেল কিরণের বিষয়টি আমরা নিজের মনে করছি। অব্যশই তার নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারী রোববার দুপুরে রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা বাজারে ওয়াজ মাহফিলের দাওয়াতপত্র ও পোস্টারে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে প্রধান অতিথি এবং কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র ও পৌর যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলামকে উদ্বোধক করা হয়েছে। এরপরই রয়েছে গোলাম রসুলের নাম। তাঁকে রাখা হয়েছে বিশেষ অতিথির তালিকায়। দাওয়াতপত্রে নিজের নাম ছোট হরফে নিচের দিকে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে গোলাম রসুল কলি উত্তেজিত হয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কালামকে বাজারের চায়ের দোকানের সামনে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় চিৎকার করেই কলি বলেন, “চিনে রাখ আমি কলি। আমাকে অপমান করলি কার কথায় ? এতো সাহস কাঞ্চনে তোকে দেয় কে ?” এ সময় আশপাশের লোকজন ওই শিক্ষককে বাঁচাতে গেলে গোলাম রসুল তাঁদেরও গালাগাল করেন।
প্রধান শিক্ষককে এভাবে পিটানোর ঘটনায় তৎকালীন সময়ে সহকারী পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) আবির হোসেন বলেছিলেন, ‘শিক্ষককে মারধরের খবর শুনেছি। এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনার দেড় মাসের ব্যবধানে এবার সাংবাদিককে কুপিয়ে আহত করে বীরদর্পে ঘরে বেড়াচ্ছে গোলাম রসুল ওরফে কলি বাহিনী । আর হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়তঃ । এমতাবস্থায় কি করবেন পুলিশ ?
Discussion about this post