জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের পরিকল্পনায় ও নির্দেশে ঢাকার আদালত পাড়া থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা। আর ঘটনার ৬ মাস আগে থেকে এ নিয়ে পরিকল্পনা করা হয় বলেও জানানো হয়।
তারা হলেন- ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা ও হুসনা আক্তার ওরফে হুসনা। এরমধ্যে শিখা পলাতক জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবের স্ত্রী আর হুসনা আশ্রয়দাতা।
সিটিটিসি জানায়, আদালত থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ৬ মাস আগে থেকে কারাগারে গিয়ে শিখা সোহেলের সঙ্গে পালানোর যাবতীয় কৌশল রপ্ত করে।
আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলতো শিখা । জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার দিনও শিখা স্পটে ছিলেন এবং দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর একটি আনসার ক্যাম্পে নিয়ে যান শিখা।
শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, আনসার আল ইসলামের সদস্যরা ৪ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা করে মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ও মো. আবু সিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নিয়ে মোটর সাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় পলাতক জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা পলাতক আসামিরা ও হামলাকারী সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ফাতেমা তাসনীম শিখা ২০১৪ সালে এমআইএসটি থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। এক পর্যায়ে তার ভাই মোজ্জাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মনের মাধ্যমে সে আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হয় এবং পরবর্তীতে সায়মনের মাধ্যমে আবু সিদ্দীক সোহেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক (আসকারি) শাখার সদস্য ছিলেন। সোহেলের সঙ্গে বিয়ের পর থেকে গ্রেপ্তার শিখা আরও গভীরভাবে সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৭ সালে মুক্তমনা ব্লগার অভিজিত রায়, দিপন ও নীলাদ্রি নিলয় হত্যা মামলার আসামি হিসাবে আবু সিদ্দিক সোহেল গ্রেপ্তার হয়।
তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন আ্যনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রেপ্তার শিখা কারাবন্দী সোহলসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু করে।
জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে গ্রেপ্তাররা আরও জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা মোতাবেক গত বছরের ২০ নভেম্বর আদালতের কার্যক্রম শেষে পুলিশের ওপর আক্রমন করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা এই কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন।
পরিচয় গোপন করে আনসার আল ইসলামের সদস্যরা জঙ্গি ছিনতাইয়ের পুরো পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে ঢাকা এবং এর পাশ্ববর্তী জেলায় একাধিক আনসার হাউস ভাড়া নেয়। সেখানে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ এবং সামরিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আয়মান এবং শিখাসহ অজ্ঞাতনামা আনসার আল ইসলাম সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করত।
জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার প্রায় ৬ মাস আগে থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিজেএম কোর্টে হাজিরা দেয়ার সময় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় এবং পরিকল্পনার সমন্বয়ক হিসাবে শিখাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
পরবর্তীতে ঘটনার দিন সে সিএমএম কোর্ট এলাকায় এসে পৌঁছে সে কৌশলে তার বাবার কাছ থেকে বিছিন্ন হয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া মশিউর রহমান ওরফে আয়মানসহ আনসার আল ইসলামের সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।
Discussion about this post