মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীকে হত্যাচেষ্টা মামলার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দাখিল করা অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে বাদীর নারাজি আবেদনের শুনানির পরবর্তী দিন ১০ এপ্রিল ধার্য করেছেন আদালত।
বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে শুনানিতে এ দিন ধার্য করা হয়।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি মামলার বাদী সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন জানালে আদালত ১ মার্চ (আজ) শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর পিবিআই অস্ত্রধারী এজাহারনামীয় দুই আসামি নিয়াজুল ইসলাম, শাহ নিজামসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, হুমকি, জখম, নাশকতা ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়। তবে অস্ত্রধারী দুই আসামি নিয়াজুল ও শাহ নিজামকে অস্ত্র আইনের দুটি ধারা থেকে বাদ দিয়ে ও এজাহারনামীয় পাঁচ আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই।
এতে মামলার বাদী তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন। অভিযুক্ত ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত আসামিরা আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পিবিআইয়ের দাখিল করা অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে বাদীর নারাজি আবেদনের ওপর শুনানি হয়েছে। আদালত দুই পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনেছেন। আদালত নারাজি আবেদনের ওপর আগামী ১০ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
পিবিআইয়ের দাখিল করা অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মেয়র সেলিনা হায়াৎ বলেন, প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলার বিষয়টি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে সারা দেশের মানুষ দেখেছেন। তাঁর লোকজন মানবঢাল তৈরি করে জীবন বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু মামলার তদন্তকারী সংস্থা সেই অস্ত্রধারী দুই আসামিকে অস্ত্র আইনের ধারা থেকে বাদ দিয়েছে এবং এজাহারনামীয় পাঁচ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই এটা করা হয়েছে। ওই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেওয়ার বিষয়টিও ঘোষণা দেন তিনি।
মামলাটির বাদী আবদুস সাত্তার বলেন, ‘অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদনের ওপর শুনানির তারিখ ধার্য ছিল আজ। শুনানিতে নারাজির আবেদনের বিষয়ে আমরা আমাদের যৌক্তিকতা আদালতের সামনে তুলে ধরেছি। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সময় চেয়ে আদালতে আবেদন জানালে দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আগামী ১০ এপ্রিল শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষের সামনে মেয়রের ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদনে সেই বিষয় বাদ দিয়ে মনগড়া অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। আমরা ন্যায়বিচারের স্বার্থে অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেছি।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল বলেন, জামিনে থাকা তিন আসামি আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁদের হাজিরার জন্য সময় প্রার্থনা করা হয়েছিল। আদালত শুনানি শেষে তা মঞ্জুর করেছেন।
২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে ফুটপাতে হকার বসানোর ইস্যুকে কেন্দ্র করে সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর সশস্ত্র হামলা চালান শামীম ওসমানের অনুসারী নেতা-কর্মী ও হকাররা। ওই ঘটনায় মানবঢাল তৈরি করে মেয়র সেলিনা হায়াৎকে রক্ষা করেন তাঁর নেতা-কর্মীরা।
এ ঘটনায় মেয়রসহ আহত হন শতাধিক ব্যক্তি। একই বছরের ২২ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে নিয়াজুল ইসলামসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও এক হাজার জনকে আসামি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলার আবেদন করেন। অপর দিকে নিয়াজুলের ছোট ভাই রিপন বাদী হয়ে মেয়র সেলিনার ভাইসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলার আবেদন করেন। পুলিশ তাঁদের কারও মামলা না নিয়ে অভিযোগ দুটি জিডি হিসেবে রেকর্ড করে।
ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে। পরে মেয়র সেলিনার মামলা নেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হলে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর মামলা নেয় পুলিশ। এদিকে পুলিশের করা মামলায় কাউকে শনাক্ত করতে না পেরে ওই বছরের ২৯ আগস্ট আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। পিবিআই তিন বছর তদন্ত শেষে গত বছরের নভেম্বরে আদালতে নিয়াজুলসহ ১২ জনের নামে আদালতে হত্যাচেষ্টা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে।
এদিকে হকার বসানোর ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করলেও পাঁচ বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। প্রতিবেদন দিতে তদন্ত কমিটি দফায় দফায় সময় বাড়ালেও সেটি আর জমা দেয়নি। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা বদলি হয়ে অন্য জেলায় চলে গেছেন । সূত্র : প্রথম আলো
Discussion about this post