তৎসময়ে প্রকাশ করা হয় রাজাকার পরিবারের ঘৃণ্য কাহিনী । এরপরে এখনো চলমান এমন কান্ড । আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতাসীন থাকার পরও রাজাকারের অসংখ্য পরিবারের অপরাধী চক্র কি করছে শাসক দলের নেতাদের শেল্টারে তা বন্দরবাসী ছাড়াও পুরো নানারায়ণগঞ্জবাসী খুব ভালো করেই জানেন।
শীর্ষ এক নেতা একান্ত আলোচনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “নারায়ণগঞ্জের একটি পরিবারের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে খোদ প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে নানা প্রশংসা করলেও তিনি এমন একজন মহান নেত্রী সকলকে ভালোবেসে উদার হয়ে উপহার দিয়ে দেখেন আসলে তারা কি করেন। এরপর তিনিই সিদ্ধান্ত নেন যার যা পুরস্কার তা প্রদান করার। সাবধান না হলে এই মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী কত কঠোর হতে পারেন তা কেউ না বুঝলেও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা খুব ভালো করেই জানেন।
নারায়ণগঞ্জের একাধিক চিহ্নিত রাজাকারের বাচ্চারা কি করছেন তার ফিরিস্তি সকল গণমাধ্যমে প্রকাশের পর গোয়েন্দাদের তৎপরতায় আরো অনেক তথ্যই উঠে এসেছে তদন্তে । যা উর্ধতন দপ্তরে রাজনৈতিক আমলনামা হিসেবে জমা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্ভরশীল সূত্র।
যেমন : “নারায়ণগঞ্জে পাকিস্তান স্টাইল“ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সদস্য কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় জেলা পর্যায়ের গোয়েন্দাদের না জানিয়েই পুরো জেলার পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরতে কাজ করছে একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তারা।
২০০৮ থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। আর এ নারায়ণগঞ্জ জেলাতেই মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দলটির জন্ম। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ সহ এর মাঝে ও আগে পরে সকল আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা ছিল অগ্রগামী। বলা হয় রাজনীতির সূতিকাগাড়। কিন্তু এ জেলাতে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র যেভাবে নিজেদের পোক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে তাতে লজ্জা পান অনেকেই। খোদ আওয়ামী লীগের নেতারাও এ নিয়ে বিব্রত। তবে প্রতিবাদ জোরালো হচ্ছে না। শুধু বক্তব্যেই দায় এড়াচ্ছেন তারা। তাদের কয়েকজন বলছেন, ওই স্বাধীনতা বিরোধী চক্রকে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারই মদদ দিচ্ছে।
ওই পরিবাটি হলো বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন ও তার পরিবার। তার বাবা রফিক ছিলেন চিহ্নিত রাজাকার। তাদের সাজাও হয়েছিল। মাকসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যেমন আছে তেমনি অভিযোগ তার গুণধর ছেলের বিরুদ্ধেও।
সবশেষ মাকসুদের ছেলে শুভ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী হামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান সরকার (৫৫) গুরুতর আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার দুই দিন অতিবাহিত হওয়ার পর এ ঘটনায় ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আহত হাবিবুর রহমান সরকার বাদী হয়ে মাকসুদ চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী পুত্র শুভ ও মাকসুদ চেয়ারম্যানের দেহরক্ষী ইকবালসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ৬ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় বন্দর উপজেলার মুছাপুর এলাকায় ওই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি ঘটে। অভিযোগ দায়ের পর থেকে ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমানসন্ত্রাসী শুভ গংয়ের ভয়ে এলাকা ছাড়া হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আহত হাবিবুর রহমান সরকার জানান, মুছাপুর ইউনিয়নের মাকসুদ চেয়ারম্যানের পুত্র শুভ ও চেয়ারম্যানের দেহরক্ষী ইকবালের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে গোটা মুছাপুর ইউনিয়নের শান্তি প্রিয় সাধারণ জনগণ। একদিকে শুভ অত্যাচার অন্যদিকে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নানাভাবে হুমকি দামকির কারণে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। তাদের ভয়ে আমি আমার বসত বাড়িতে থাকতে পারছি না। অনেক কষ্ট করে আজ আমি থানায় এসে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলাম।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সর্ষের মধ্যেই তো ভূত। একটি পরিবার বিভিন্ন কায়দায় রাজাকার, আলবদরদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা। এছাড়া বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নে রফিক চেয়ারম্যান নামে এক চেয়ারম্যান ছিলো পাকিস্তান আমলে। সে রাজাকার ছিলো এবং দালালি আইনে তার সাজাও হয়। এই পরিবারকে আশ্রয় দিচ্ছে জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমান। সে নাকি তার শালা হয়। একইভাবে নাসিম ওসমানও তাদের আশ্রয় দিয়েছে। সর্ষের ভেতরেই ভূত থাকলে আমরা কি করব?
চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের বাবা চিহ্নিত রাজাকার রফিক গংদের অগ্নিসংযোগসহ নির্মম খুনের লোমহর্ষক কাহিনী যা এরশাদ শিকদারকেও হার মানিয়েছিল। ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুনের বই ‘‘শান্তি কমিটি ১৯৭১”এ রাজাকারের তালিকায় চেয়ারম্যান মাকসুদের পরিবারের ৪ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে তারা হলো তার বাবা রফিক, দাদা মাইনুদ্দীন, চাচা আব্দুল মালেক ও সামাদ। রাজাকার রফিকের জীবদ্দশায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার দিন পর্যন্ত অসংখ্য নিরীহ ব্যক্তিকে খুন করা হয়। যার মধ্যে বন্দর থানার রামনগর গ্রামের মগা প্রধান (দুঃইখ্যার বাবা), ধামগড়ের আইছাইল্লা মুন্সিকে প্রকাশ্য দিবালোকে, ধামগড় ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির মাষ্টারের বড় ভাই গিয়াসউদ্দীন, তার নিকট আত্মীয় আমিনুদ্দীন, মতিউর রহমান এবং আবদুল হামিদকে হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। রাজাকার রফিক গংরা কুড়িপাড়া, ধামগড়, হরিপুর, গোকুলদাসের বাগসহ ১৮টি গ্রাম জালিয়ে দিয়েছিল। এসময় তাদের হাতে ১২ জনের অধিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। তারা হলো, কুড়িপাড়া গ্রামের লালু মিয়ার পুত্র মোঃ মুন্তু,(নাজির মেম্বারের পিতা) লালখারবাগের নাজির মেম্বারের পিতা ছিটু মুন্সি ওরফে (খাইট্টা ছিডা), আব্দুল হকের পিতা খালেক, হরিপুরের ছলিমুদ্দিন প্রধানের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ, ছব্দর আলী, আব্দুল হাকিমের পুত্র বছরুদ্দীন, আব্দুল জব্বারের পুত্র সাহাদুল্লা, বঙ্গশাসনের শহীদুল্লাহর নাবালিকা কন্যা শাহিদা, আব্দুল রব, সোনারগাঁ কুতুবপুরের আইয়ুব আলী ও আব্দুল জাব্বার।
এর আগে বন্দরে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ইউপি সদস্য সফুরউদ্দিন ভূইয়াকে কারখানা থেকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতনের পর হত্যা চেষ্টা মামলায় চিহ্নিত রাজাকারপুত্র মাকসুদ চেয়ারম্যানের ছেলে মাহমুদুর হাসান শুভ। শুভ ছাড়া অপর অভিযুক্তরা ছিলেন মাকসুদ চেয়ারম্যানের শ্যালক রানা (৩৪), মাকসুদ চেয়ারম্যানের ভাতিজা অন্তর (৩২) ও একাধিক মামলার আসামি আমিনুলের শ্যালক সাইফুল ইসলাম (২৮)।
ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার সফুরউদ্দিন ভূইয়া জানিয়েছিলেন তিনি মামলার পর থেকেই হুমকির শিকার হন। তারা এত খারাপ প্রকৃতির লোক এই পর্যন্ত ২৯ জন মানুষকে হত্যা করেছে। কাউকে জবাই করছে কারও রগ কাটে। মাকসুদ চেয়ারম্যান টাকার অহংকার দেখিয়ে অনেক খারাপ কাজ করে। যখন যা মন চায় তাই করে। তারা এত খারাপ প্রকৃতির লোক এই পর্যন্ত ২৯ জন মানুষকে হত্যা করেছে। কাউকে জবাই করছে কারও রগ কাটে। মাকসুদ চেয়ারম্যান টাকার অহংকার দেখিয়ে অনেক খারাপ কাজ করে।
এর আগে বন্দরে গণধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবারকে গ্রামছাড়া এবং স্বজনদের বাড়ি-ঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ সহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
২০২১ সালের ১৪ জুন রাতে মাকসুদের লম্পট ভাগ্নে শরিফুল ইসলাম ওরফে গুড্ডু ও তার অনুগামীরা ফিল্মি স্টাইলে এক গৃহবধূকে অপহরণের পর ৫ দিন আটকে রেখে গণধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বন্দর থানা পুলিশ কুড়িপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে গণধর্ষণ মামলার ১নং এজাহারভুক্ত আসামী লম্পট শরীফুল ইসলাম গুড্ডুকে (৪০) গ্রেফতার করে। তার মামা মাকসুদ চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির নেতা।
২০২১ সালের ২ মে সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকে হুমকী দেওয়ার অভিযোগে মাকসুদ হোসেনের ভাতিজা খালেদ হোসাইন মোহনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় জিডি দায়ের করেছেন বন্দর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল আউয়াল বেপারী।
২৮ এপ্রিল বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে স্থানীয় নামিরা মসজিদে তারাবী নামাজ চলাকালীন সময়ে আওয়ামীলীগ নেতা ইসলাম পলুর পুত্রকে মারধরের অভিযোগ উঠে মাকসুদের বিরুদ্ধে। মাকসুদ চেয়ারম্যান ও তার অনুগামী দেলোয়ারের পুত্র রবিন তাকে বেধড়ক মারধর করে। ওই ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
২৩ এপ্রিল মুছাপুর ইউনিয়নের দক্ষিনপাড়া নয়াগাও বাইতুল ইজ্জত জামে মসজিদের উন্নœয়ন ও কবরস্থানের গাছ বিক্রিকে কেন্দ্র করে মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবর গ্রুপ ও সাখাওয়াত হোসেন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২৭ এপ্রিল সালাউদ্দিনের পক্ষ নিয়ে সরকারী নির্দেশনা লকডাউন বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে গ্রামবাসীদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে মাকসুদ হোসেন।
২২ মার্চ বন্দর উপজেলার বারপাড়া পিচকামতাল এলাকায় আওয়ামীলীগ নেতা কাদির ডিলারের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠে মাকসুদ অনুগামীদের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসীরা কাদির ডিলারের ঘরবাড়ি ও সাইনবোর্ড ভাংচুর, গাছ কর্তনসহ তান্ডব চালায়।
১৬ জানুয়ারী ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ায় বাধা দেওয়ায় চুরির অপবাদ দিয়ে বন্দর উপজেলার দক্ষিণ কুলচরিত্র এলাকায় পদুগড় গ্রামের মোজাম্মেল হক সর্দারের ছেলে মোঃ বুলবুল আহমেদকে (৩৩) পিটিয়ে হত্যার ঘটনা আড়াই লাখ টাকায় ধামাচাপা দেয় ইউপি চেয়ারম্যান মাকসুদ। ফুনকুল গ্রামে অবস্থিত ব্রিক ফিল্ড (পিবিএম) ইটভাটার মালিক রাসেদ, তার ভাই আনিছ, নাইন জিরো টু ব্রিক ফিল্ড (৯০২) ইটভাটার মালিক আলমচাঁন ও মোমেন, আল আমিন ও পদুঘর গ্রামের মাহবুবসহ ১৫/২০ জন লাঠিসোটা নিয়ে বুলবুলকে বাড়ি থেকে ধরে এনে চুরির আখ্যা দিয়ে রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে এলোপাতারি মারধর করে।
২০২০ সালের ৩ অক্টোবর মাকসুদ হোসেনকে রাজাকার পুত্র আখ্যায়িত করে চেয়ারম্যান মাকসুদ কর্তৃক অসহায় মানুষদের অর্থ ও ভূমি আত্মসাতের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্তসহ সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীরা।
Tuesday, 20 October 2020, 3:55 pm
বন্দর সংবাদদাতা :
নারায়ণগঞ্জে এখন আলোচিত একটি ইস্যু হলো রাজাকার। স্বাধীন দেশে এখনো রাজাকারদের দাপট বিশাল।
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলায় প্রায় ২ টি ইউনিয়ন ও ১ টি নাসিক ওর্য়াডের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ রাজাকার পরিবারের কাছে জিম্মি। যা সচেতন মহল কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না।
বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের পুরো পরিবার ছিল রাজাকার সম্পৃক্ত। মাকসুদ চেয়ারম্যানের বাবা ও চাচাদের যেমন রয়েছে বর্বর কাহিনী তেমনি মাকসুদ চেয়ারম্যানের প্রয়াত ভাই সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছিল ভয়ংকর কাহিনী।
আনোয়ার, কালু, মোর্শেদ মুন্সি না ফেরার দেশে চলে গেলেও দাদা, চাচা, বাবা ও তাদের ক্ষেত্রও কম আসে না। মাকসুদ চেয়ারম্যান ফের আলোচনায় বুলবুলের হত্যাকান্ডে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করে। মিনি আদালত বসানোর অভিযোগও উঠেছে।
ইটভাটার মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে রাসেদের ৯০২ ও ভাই ভাই ইটভাটার মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশের উপস্থিতে মারধর করে। যার কিছুদিন পর বুলবুলের মৃত্যু হলে কোন থানা পুলিশ করতে দেয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে লাশ মাটির উপর রেখেই আড়াই লাখ টাকায় রফাদফা করে। ইউনিয়ন পরিষদের আইন বা নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে ধরাকে সরা ঞ্জান করা মাকসুদ চেয়ারম্যানেরর কাজ।
সম্প্রতি বিজয় দিবসে জিমখানা স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মাকসুদ হোসেনকে সরাসরি রাজাকারের ছেলে বলে উল্লেখ করেন।
মেয়রের এই বক্তব্যের পর বন্দর তথা নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
সর্বশেষ ২০১৬ সালে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি সমর্থক প্রার্থী মাকসুদ হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকা প্রতীকের আব্দুল কাদির।
প্রেম করে বিয়ে করায় সংখ্যালঘু যুবককে পাশবিক নির্যাতন
মাকসুদ চেয়ারম্যানের প্রয়াত ভাই আনোয়ার হোসেন ছিলেন একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। বন্দরে প্রেম করে বিয়ে করার অপরাধে সংখ্যালঘু এক যুবকের উপর চালানো হয়েছিল বর্বর অমানুষিক পাশবিক নির্যাতন। শালিসি বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের নির্দেশে শত শত মানুষের সামনে ওই যুবকের পুরুষাঙ্গে ইট বেঁধে তাকে হাটানো হয়েছে ২ কিলোমিটার পথ। ওই চেয়ারম্যান নিজেই তাকে বেধড়ক পিটিয়েছে।
বর্বর ওই নির্যাতনের শিকার যুবকের নাম বাবু চক্রবর্তী। সে বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন (লাঙ্গলবন্দ) মহাত্না গান্ধী মন্দিরের পূজারী রমেশ চক্রবর্তীর ছেলে।
ঘটনাটি সাংবাদিকদের জানানোর অপরাধে বিমল ও তার ভাই সুকুমার নামের আরোও দুই সংখ্যালঘু সহোদরকে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে চেয়ারম্যানের লোকজন।
আলোচিত এ ঘটনার মূল হোতা ছিলেন বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।
জানা গেছে, ২০১১ সালের জুলাইতে ওই ঘটনা ঘটে। ওই সময়ে বন্দর উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আলেয়া বেগম লৌমহর্ষক এ ঘটনাটি উত্থাপন করেন। এ ঘটনা শুনে সভায় উপস্থিতিরা হতবাক হয়ে পড়েন।
সভায় আলেয়া বেগম জানান, বাবু চক্রবর্তীর সঙ্গে তার মুছাপুর এলাকার ব্রজেন্দ্র দাসের মেয়ের দীর্ঘদিনের প্রেম ছিল। ৩ মাস আগে তারা দুজনে বিয়ে করে। মেয়ের পিতা ব্রজেন্দ্র এ বিয়ে মেনে না নিয়ে তিনি মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের কাছে বিচার দাবি করে। ২০১১ সালের ১৬ জুলাই বিকালে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আনোয়ার মন্দিরে বসে এক সালিশের আয়োজন করে।
এলাকার শত শত মানুষের উপস্থিতিতে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন সংলগ্ন মহাত্নাগান্ধীর মন্দিরে সালিশে আনোয়ার হোসেন একক ভাবে বিচারক হিসেবে রায় দিয়ে নিজে গাছের ডাল দিয়ে বাবু চক্রবর্তীকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করে তাকে।
পরে বাবুর পুরুষাঙ্গে ইট বেঁধে দুই কিলোমিটার এলাকা হাঁটতে বাধ্য করে। খবর পেয়ে সংবাদিকরা ঘটনাস্থলে যায়। সাংবাদিকরা চলে যাওয়ার পর রাত ১০টায় নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন তার দলবল নিয়ে নন্দিবাড়ী এলাকার বিমল রায়ের বাড়িতে গিয়ে তাকে মারধর করে। এ সময় বাধা দিলে তার বড় ভাই সুকুমার রায়কেও মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে তাদেরকে ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যার চেষ্টা করলে এলাকাবাসী এগিয়ে আসে। এসময় আনোয়ার হোসেন হত্যার হুমকি দিয়ে তার বাহিনী নিয়ে চলে যায়।
আনোয়ার হোসেন মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কুখ্যাত রাজাকার প্রয়াত রফিকের ছেলে। আনোয়ারও বন্দর থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে দুই ডজন মামলা ছিল। ২০১১ সালের ৯ জুন অনুষ্ঠিত মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ, অবৈধ অস্ত্র রাখা প্রভৃতি অপরাধে ৮টি মামলা রয়েছে। বন্দর থানা-পুলিশ জানিয়েছে, এর আগেও তাকে অনেকবার গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রতিবারই জামিনে বেরিয়ে এসে এলাকায় কায়েম করে ত্রাসের রাজত্ব।
ওই ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) বন্দর থানার ওসিকে তলব করেছিল হাইকোর্ট।
নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, নারায়ণগঞ্জের এসপি, বন্দর থানার ওসি ও মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন এর জবাব দিতে দুই সপ্তাহ সময় পেয়েছেন।
হাইকোর্টের হাজির হবার নির্ধারিত তারিখের পূর্বেই আনেয়ার হোসেন ট্রাকের চাপায় পরিকল্পিত ও রহস্যজনকভাবে নিহত হন।
পরে পুলিশ জানায়, চেয়ারম্যান আনোয়ার ও তাঁর সহযোগী কুখ্যাত অপরাধী সেলিম রাত ১১টার দিকে সোনারগাঁ উপজেলা থেকে মোটরসাইকেলে করে বন্দরে ফিরছিলেন। পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাখালী এলাকায় একটি ট্রাক পেছন দিক থেকে তাঁদের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে চেয়ারম্যান আনোয়ার মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়লে পেছন থেকে আসা অপর একটি ট্রাক তাঁকে চাপা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় এলাকাবাসী তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সাথে সাথেই সেলিম তৎক্ষনাৎ বন্দর থানার ওসি কে ফোন করে “মিশন কমপ্লিট” বলে মন্তব্য করে। একই সাথে নিহত আনোয়ারের পরিবারে উল্টো দেখা দিয়েছিলো আনন্দের বন্যা । আনোয়ার মৃত্যুর পর এমন উল্লাাসে এলাকার অনেকেই হতবাক হয়ে উঠেছিলো বলে জানায় মাকসুদ চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ জনেরা।
মাকসুদ চেয়ারম্যানের বাবা রফিক বাহিনীর সন্ত্রাস রাজাকারের ছেলে বলার অপরাধে কয়েক বছর আগে বন্দর থানার কুঁড়িপাড়া বাজারে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনকে।
এখনও ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, অপহরণ এমন কোন অপকর্ম নেই যা করছে না তার সন্ত্রাসী ছেলেরা। সন্ত্রাসী ছেলেদের নেতৃত্বে রয়েছে এই ঘৃণিত রাজাকার।
রাজাকার রফিক বাহিনীর আতঙ্কে এখনও দিন কাটায় ধামগড়, মুছাপুর ইউনিয়নসহ ২৭ নং ওর্য়াডের মানুষ। তার ছেলেরা যা খুশি তা-ই করে। ভয়ে টু শব্দ করে না মানুষ।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বন্দর থানার ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিল এমএ রফিক। সে হাত মিলায় পাকহানাদার বাহিনীর সাথে। স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হয়। মেতে ওঠে হত্যার উৎসবে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল একদিনেই তার নেতৃত্বে হত্যা করা হয় এলাকার ৪ নিরীহ লোককে। তার হাতে ঐদিন নৃশংসভাবে খুন হয় ধামগড় গ্রামের বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন, আমিন উদ্দিন, মতি মিয়া ও আ. হামিদ।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই ঘৃণিত রাজাকারের বাহিনী আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় ১৩টি গ্রাম। ১৪ ডিসেম্বর ’৭১ রাজাকার রফিকের বাহিনী গুলি করে হত্যা করে ধামগড় গ্রামের নূর ইসলাম, নয়ামাটি গ্রামের আবদুল হামিদ, ইদ্রিস আলী, লালখারবাগ গ্রামের ইদ্রিস আলী, কুটিরবন্ধ গ্রামের আবুল হাশেম, মোছেরছড়া গ্রামের জলিল মিয়া ও হরিপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজকে।।
পিস কমিটির চেয়ারম্যান রফিকের নেতৃত্বে ছালামত, খালেক, মিন্নত আলী, আবদুস সালাম, গোলাম মাওলা, আলী হোসেন প্রমুখের সমন্বয়ে গঠিত রাজাকার বাহিনী তান্ডব চালায় ধামগড় ইউনিয়নে। এখনও অনেকে এই ঘৃণিত রাজাকার বাহিনীর নৃশংসতার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে।স্বাধীনতার পর ভোল পাল্টায় রাজাকার রফিক।
কিছুদিন আত্মগোপনের পর আবার ফিরে আসে এলাকায়, আবির্ভূত হয় স্বরূপে। গড়ে তোলে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। ছলে বলে কৌশলে নির্বাচিত হয় ধামগড় ইউপি চেয়ারম্যান। আবার অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে এই কুখ্যাত রাজাকার।
কয়েক বছর আগে রাজাকার রফিকের সন্ত্রাসীরা কুড়িপাড়া বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনকে। আলাউদ্দিনের অপরাধ, তিনি রফিকের ছেলেকে বলেছিলেন- ‘রাজাকারের ছেলে’। এই নৃশংস হত্যাকান্ড চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে বন্দরে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বন্দর কমান্ড মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন, মিছিল-মিটিং পর্যন্ত করে। আইনের ফাক গলে বেরিয়ে আসে রাজাকার রফিক ও তার সন্ত্রাসীরা। রাজাকার রফিক বিয়ে করেছে ৪টি। ৪ পক্ষে তার ছেলে রয়েছে ৮ জন। প্রায় সবাই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। রাজাকার রফিকের দ্বিতীয় স্ত্রীর তৃতীয় ছেলে মুর্শেদ ওরফে মুন্সীও দুর্ধষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে বন্দর থানায়। চতুর্থ ছেলে মোয়াজ্জম ওরফে কালুর বিরুদ্ধে ছিল ২ হত্যাসহ ৯টি মামলা।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, রাজাকার রফিকের অন্যান্য ছেলেও সন্ত্রাসী। তাদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটায় এলাকার মানুষ। মানুষের জমিজমা দখল করে এখন অগাধ সম্পত্তির মালিক রাজাকার রফিক। স্থানীয় মিলকারখানায় একচ্ছত্র আধিপত্য। দ্বিতীয় স্ত্রীর তৃতীয় ছেলে মুর্শেদ ওরফে মুন্সীও দুর্ধষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে অসংখা মামলা রয়েছে বন্দর থানায়। চতুর্থ ছেলে মোয়াজ্জম ওরফে কালুর বিরুদ্ধে রয়েছে ২ হত্যাসহ ৯টি মামলা ছিল।
(চলমান)
Discussion about this post