নিজস্ব প্রতিবেদক
ফতুল্লায় ছিনতাই আর ডাকাত আতঙ্কে ভুগছে জনসাধারণ। প্রতিনিয়ত ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্কে জীবন যাপন করছে ফতুল্লাবাসী। তবে একের পর এক ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করতে না পারায় বন্ধ হচ্ছে না এসব ঘটনা।
অভিযোগ উঠেছে ফতুল্লায় একের পর এক অপরাধ কর্মকাণ্ড হলেও পুলিশ চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের গ্রেফতার না করে ছিঁচকে চোর বা ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করে আইওয়াশ করছেন। আর কিছু ছিঁচকে ছিনতাইকারীকে ডাকাত বাণিয়ে কৃতিত্ব দেখানোর অপচেষ্টা করছে পুলিশ। এমন অভিযোগ তুলে ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছে ফতুল্লাবাসী।
তবে চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও ডাকাতরা এলাকায় প্রকাশ্যে থাকলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। এসব অপরাধী এলাকায় অবস্থান করায় বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। আর পুলিশকে বলতে গেলে বলেন অপরাধ ছাড়া গ্রেফতার করা যায় না। ফতুল্লবাসীর অভিযোগ, প্রকৃত ছিনতাইকারীও ডাকাতদের আড়াল করতেই পুলিশ ওই সকল ছিঁচকে চোরদের গ্রেফতার করে নিজেদের কৃতিত্ব দেখানোর চেষ্টা করছেন। অথচ থানার তালিকাভূক্ত চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও ডাকাত দলের সদস্যরা পুলিশের নাকের ডগার সামনে দিয়ে বীরদর্পে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে।
এ কারণে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ডাকাত আতঙ্ক থেকে মুক্ত হতে পারছেনা।
তাদের ধারনা চিহ্নিত এসব ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা না হলে যেকোনো সময় আবারও বড় ধরনের ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছে ফতুল্লাবাসী।
জানা যায়, চলতি বছরের শুরুতে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের পাশে নির্মাণাধীন পার্কের সামনে থেকে সিংগাপুর প্রবাসী জামতলা এলাকার আ. হামিদের ছেলে শাহ আলম ও আমিনুলকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে বিআরটিসি এসি বাস থামায়। পরে ছিনতাইকারীরা তাদের মাইক্রো বাসে তুলে নেয়। তাদের কাছে থাকা ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও সিংগাপুর রিয়েল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর জালকুড়িতে ফেলে চলে যায় ছিনতাইকারীরা। সম্প্রতি, দেলপাড়ার মনিরের বাড়িতে ১০/১২ জনের মুখোশধারী ডাকাতদল বাড়ির মেইন গেইটের তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা বেঁধে ঘরে আলমিরা ভেঙে ১০ হাজার টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য বাড়ির সামনে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ডাকাত দলের সদস্যরা। এঘটনায় মনির থানায় একটি অভিযোগ করলেও এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। গত কয়েক মাস ধরেই ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে অটোরিকশা মিশুক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এমনকি ছিনতাইকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে হত্যার মত জঘন্যতম ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারীরা।
পুলিশ কয়েকজন অপরাধীকে ধরতে সক্ষম হলেও অধিকাংশ ঘটনার রহস্য উদঘাটতে আলোর মুখ দেখতে পায়নি কতৃপক্ষ।
এদিকে পুলিশের খাতায় যারা চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও ডাকাত হিসেবে পরিচিত তাদের মধ্যে অন্যতম হলো : চাষাড়ার অপু সিনহা ও তার বাহিনী, তামিম ও তার বাহিনী, লিপু ওরফে লিপ্পা ও তার বাহিনী, ফতুল্লার শহিদুল্লাহ, মোতালেব, আলীগঞ্জের কিলার মতি, কিলার ফারুক, ইদু, মকবুল, লুৎফর, দেলপাড়ার পলাশ, নন্দলালপুর এলাকার রনি, শাহাবউদ্দিন, মাসুদ, রাজা ওরফে লিটন, সুলতান, ইয়াকুব, জিয়া। পিলকুনি শাহিন, গাল কাটা আক্তার, নয়ন, আসলাম, হালিম, লালখাঁ’র ডাকাত রতন, শাহাবুদ্দিন, মিঠু, রেলস্টেশনের ডাকাত শাহিন, কবির হোসেন ফেলা (কারাগারে) বোমা লিপু (কারাগারে) আমির হোসেন পিচ্ছি, গাল কাটা সোহেল, দ্বীন ইসলাম, রাঙ্গা বাবুল, ডাকাত রনি, শাওন, রকিম, মোহন, হানিফ, লতিফ, ছোট মিঠু ও সবুজ। পঞ্চবটির মিন্টু, সোহেল, পাগলা ইউসুফ, দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার ডাকাত আমিন ওরফে কাইল্যা আমিন, ইয়াছিন, শহিদ হোসেন, ভাগিনা টুটুল, সুমন, উজ্জল, টিকিমরা লিটন, রুহুল ও শুক্কুর। হাজীগঞ্জ এলাকার সিলেটি বাবু, রনি, সাইদুর, সোহেল, মোল্লা সোহেল। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে অপকর্ম করে যাচ্ছে। এদিকে অভিযোগ রয়েছে উপরোক্ত ডাকাতদের সঙ্গে থানার একাধিক দারোগার গভীর সখ্যতা রয়েছে। তাদের কাছ থেকে নিয়মিত বিশেষ সুবিধা ভোগের কারণে অধিকাংশ সময় পুলিশ তাদের আড়াল করার অপচেষ্টা চালাতে দেখা যায় এমনই অভিযোগ ফতুল্লাবাসীর।
ফতুল্লা মডেল থানার (ওসি) রিয়াজুল হক দিপু জানান, ফতুল্লায় আগের চেয়ে ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনা অনেকটাই কমে এসেছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় কোনো ঘটনা ঘটছে না। অপরাধীদের ধরতে পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে এবং অভিযান অব্যাহত রাখছে। আর যারা ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে বেশির ভাগ লোককে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
Discussion about this post