সাম্প্রতিক সময়ে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগের বিচ্ছিন্ন করণের কাজ শুরু করেছে জোরেশোরে । নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁ অঞ্চলের এই তিতাসের এই সংযোগ একদিকে যেমন বিচ্ছিন্ন হচ্ছে আরেক দিকে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে । এ যেন ভানুমতির খেলা।
আর এমন তিতাসের অভিযান নামক ভানুমতির খেলার আয়োজন করতে নানা নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে ঘটা করে প্রচার প্রচারণা চালাতে নির্দিষ্ট কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে নিয়ে শুরু করা হয় তিতাস গ্যাসের বিচ্ছন্ন করণের অভিযানের নাটক। গত প্রায় দেড় বছর যাবৎ এমনটি ই ঘটানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিতাস সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে তিতাসের কয়েকজন কর্মচারী এমন তথ্য দিলেও এই তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করতে ফের তিতাসের কয়েকজন কর্মকর্তাদের সাথে মুঠোফোনে এবং সরাসরি যোগাযোগ করলে তারাও স্বীকার করে বলেন এইট তো প্রকৃত পক্ষে অভিযান না । এইটা লোক দেখানো নাটক, এগুলি ভন্ডামী। যেহেতু সরকারী চাকরী করি, তাই নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে একই কায়দায় স্বীকার করেন এমন নাটক মঞ্চায়নের কথা।
কেউ কেউ বলেন, তিতাসের নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁও অঞ্চল যেন এক লুটপাটের আখড়া। চোখের সামনে হাত বাড়ালেই যেন অবৈধ তিতাস গ্যাসের সংযোগ । এই অবৈধ সংযোগের নেপথ্যে রয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষের কোন না কোন কর্মকর্তার যোগসাজস । প্রতি মাসে মাসোয়ারা এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবার পর আবার সংযোগ স্থাপন করাতে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়েই চলে এই লুটপাটের মহা কর্মযজ্ঞ। আর অভিযান নামক নাটক মঞ্চায়নের পূর্বেই পরিকল্পনা করে নির্দিষ্ট সাংবাদিকেদের জন্য গাড়ি পাঠিয়ে নিয়ে আনা হয় অভিযান করার ঘটনােস্থলে। অভিযানের আগের রাতে অথবা ঘটনার দিন সকালে জানানো হয় কোথায় অভিযান চলবে। সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে শুরু হয় তিতাসের পাইপ কাটা । বেলা গড়িয়ে দুপুর হলে খবর দিয়ে আনা হয় ওই অঞ্চলের উর্ধতন কর্মকর্তাকে। ওই উর্ধতন কর্মকর্তা উপস্থিত হয়ে জেল-জরিমানা ও সংযোগের হিসাব আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত করেন অভিযান ।
অভিযান শেষে ফিরে আসার সময় তিতাসের সোনারগাঁও শাখার উপ মহা ব্যবস্থাপক সুরুজ আলম স্থানীয় সাংবাদিকদের হাতে হাতে কিছু খরচা দেন। আর বড় সাংবাদিকদের মোবাইল নাম্বার লিখে রেখে তাদের নাম্বারে বিকাশ করেন।
উর্ধতন কর্মকর্তাদের এমন অপকর্ম নিয়ে কেউ মুখ খুললেই সার্ভিস বুকে লাল কালি দিয়ে নানা হয়রানির ভয়ে শত অপকর্ম চোখের সামনে ঘটলেও কেউ এমন অপরাধের বিষয়ে কথা বলার সাহস রাখে না ।
তিতাস গ্যাস কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীর এমন তথ্যের সাথে মিল পাওয়া গেছে ওই অভিযানের সময় ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর বর্ণনায়। তারাও বলেন, তিতাসের অভিযানের সময় স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকদেরও খবর দেয়া হয় । দুপুরে খাবার ও অভিযান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে দেয়া হয় ৫শ থেকে ১ হাজার করে টাকা।
এমন গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে তিতাসের আঞ্চলিক বিপণন (সোনারগাঁ) বিভাগের জি এম মেসবাউর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, আমরা গাড়ি পাঠিয়ে তাদের নিয়ে আসি। এবং দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাসহ আপ্যায়নের ব্যবস্থাও থাকে। নগদ টাকা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এবং এমন টাকা দেয়ার বিকাশসহ নগদের কিছু তথ্য প্রমাণ রয়েছে বলে জানতে চাইলে জি এম মেসবাউর রহমান আরো বলেন, ‘এগুলি ঠিক না।’ টাকা দিয়ে কথিত গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে উচ্ছেদ নামক অভিযানের নামে ঢাকডোল পিটিয়ে নাটক মঞ্চায়ন হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে, ‘না না ভাই এসব ঠিক না’ বলে বিব্রতবোধ করতে থাকেন জি এম মেসবাউর রহমান।
Discussion about this post