এ যেন মগের মুল্লুক। কারো কোন পেশাদারিত্ব নাই। একেকজন সরকারী কর্মচারী আর কর্মকর্তারা যেন একেকটি দপ্তরের মালিক মহাজন। সরকারী প্রায় সকল দপ্তরেই জিম্মি দেশবাসী। সর্বত্রই যেন চলছে লুটপাট। এমন লুটপাটের বিষয়ে কেউ মুখ খুললেই নানা খড়গের হংকার। যেন ‘এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই’ অবস্থা চলছে বিরামহীনভাবে।
চোখে আঙ্গুল দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সকল অপরাধ ও দূর্ণীতি তুলে ধরার পরও দূর্ণীতিবাজ লুটপাটকারী চক্র যেন ‘ডেমকেয়ার ভাব’। গণমাধ্যমকর্মীরা প্রকৃত তথ্য তুৃলে ধরার পর অপরাধী আর লুটপাটকারী চক্রের রোষানলে পরতে হয় প্রতিনিয়তঃ ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের দূর্ণীতি নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি দৈনিকে ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ করা হলেও কোন অবস্থাতেই সামান্যতম টনক নডে নাই যথাযথ ঠিকাদার ও সরকারী এই সংস্থার কর্তাদের মাঝে। এ যেন কুম্ভকর্ণ । আর কি করলে এই সরকারী সংস্থার কর্তাদের নড়ানো যাবে ?
এমন প্রশ্ন তুলে অনেকেই বলেছেন, সড়ক ও জনপথ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের গণপূর্ত বিভাগ কি করছে ? নারায়ণগঞ্জের শিক্ষা প্রকৌশলী বিভাগ কি করছে ? এলজিইডি করছে টা কি ? কি করে জেলা পরিষদ ? আর স্বাস্থ্য প্রকৌশলী তো কাজের আগেই লুটপাটের ভাগবাটোয়ার কি করে করতে হয় তার সকল হিসার কষে ফেলেন নিজেরােই । পিয়ন থেকে শুরু করে সরকারী প্রায় সকল দপ্তরের শীর্ষ কর্তাদের মধ্যে লোক দেখানো দূরত্ব দেখা গেলেও মূলতঃ দূর্ণীতি আর ঘুষ লেনদেনের ক্ষেত্রে কোন লাজ সরমের বালাই আর দেখা যায় না কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে। নারায়ণগঞ্জ জেলা হিসাব রক্ষক কার্যালয়ের চিত্র ই প্রমাণ করে কতটা নির্লজ্জের তো লুটপাট করা অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করেন তারা । সরকারী কয়েকটি সংস্থার কর্তা থেকে পিয়ন পর্যন্ত সকলেই যেন মিলে মিশেই লুটপাটের মহোৎসব চালাচ্ছে একবারেই লাজলজ্জা ছাড়াই। এমন অপরাধ দেখবে কে ? কর্তারাও যেন ম্যানেজ ।
৭৬ লাখ টাকা বিল নিলেও দশ ফুটওভার ব্রিজে জ্বলেনি বাতি, লাগেনি টাইলস
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জে ১০টি ফুটওভার ব্রিজকে নিরাপদ ও আরামদায়ক করতে ছাউনি, সিড়িতে টাইলস, অন্ধকার দূর করার জন্য ইটালিয়ান বাতি, সোলার প্যানেল, পুরাতন ভীম পরিবর্তন করে বিদেশে তৈরি ভিম লাগানোসহ আধুনিকায়নের কাজ করানো হয় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ।
নয়টি ফুটওভার ব্রিজ আধুনিকায়ন ও একটি নতুন নির্মাণে তিনটি আলাদা প্যাকেজে ৭ কোটি ৯১ লাখ ৭৪ হাজার টাকার কাজ করে ঠিকাদারকে বিলও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত ১৪ মাসেও এসব ব্রিজে বাতি লাগেনি, জ্বলেনি আলো, টাইলসও লাগেনি একটিও। বসেনি কোনো সোলার প্যানেল, প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামও লাগানো হয়নি।
অথচ এসব কাজের জন্য বিল দেওয়া হয়েছে ৭৬ লাখ টাকার বেশি! জানা গেছে, বাতি জ্বালানোর জন্য বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগের আবেদনও করা হয়নি।
এসব ফুটওভার ব্রিজের আধুনিকায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীদের ।
দরপত্র দলিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনটি আলাদা প্যাকেজে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল, সানারপাড়, মৌচাক, নিউটাউন, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ, শনির আখড়া ও মোগড়াপাড়া এই নয়টি সেতু মেরামত ও আধুনিকায়ন এবং কাজলায় একটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়। ঠিকাদারের কাজ শেষ দেখিয়ে বিল দেওয়া হয় ২০২১ সালের ৩০ জুন। এ কাজে বিল দেওয়া হয় মোট ৭ কোটি ৯১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
এরমধ্যে শিমরাইলের দুটি এবং মোগড়াপাড়ায় একটি সেতুতে ২৫০ ওয়াটের ইটালিয়ান তৈরি ৪৮টি বাতি লাগানোর জন্য বিল দেওয়া হয় প্রতিটি ১৭ হাজার ৫৮১ টাকা করে মোট ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৯০৬ টাকা। এই সেতুগুলোর সিড়িতে টাইলস বসানোর জন্য বিল দেওয়া হয় ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪১ টাকা।
শিমরাইল মোড়ের পূর্ব পাশের সেতুর পুরাতন ভীম পরিবর্তন করে বিদেশে তৈরি নতুন ভীম লাগানোর জন্য বিল দেওয়া হয় ২৩ লাখ ৩ হাজার ৯৬৭ টাকা । অথচ এই ভীম নতুন না লাগিয়ে পুরাতনটাকেই রং করে নতুন বানানো হয়েছে।
আর এই তিন সেতুতে ইটালিয়ান বাতি ও টাইলস গতকাল পর্যন্ত দেখা যায়নি। স্থানীয়রা কেউ এই সেতুগুলোকে আলো জ্বলতেও দেখেনি কখনো।
অপর প্যাকেজে মৌচাক, সানাড়পাড়, নিউটাউন, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ ও শনির আখড়া এই ছয়টি সেতুতে মোট ৭২টি ইটালিয়ান তৈরি ২৫০ ওয়াটের মেটাল লাইট লাগানোর জন্য প্রতিটি ১৯ হাজার ৯৫০টাকা করে মোট ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪০০ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। রায়ের বাগ ও মাতুয়াইল সেতুতে টাইলস লাগানোর জন্য বিল দেওয়া হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার ৮২২ টাকা।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের জন্য বিল দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৯৯২ টাকা অথচ এই সেতুগুলোতে ইটালিয়ান বাতি, বৈদ্যুতিক সংযোগ ও টাইলস কোন কিছুই দেখা যায়নি।
কাজলায় নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ২৫০ ওয়াটের ৩০টি ইটালিয়ান মেটাল লাইট লাগানোর জন্য প্রতিটি ২০ হাজার ৯৩ টাকা করে ৬ লাখ ২ হাজার ৭৯০ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। সোলার প্যানেল বসানোর জন্য ৯৪ হাজার ৪১৬ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে এবং ১০০ বর্গ মিটার টাইল লাগানোর জন্য ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৯ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে।
অথচ সেখানে মাত্র কয়েকটি নিম্নমানের টাইলস লাগানো হয়েছে। ইটালিয়ান লাইট ও সোলার প্যানেল দেখা যায়নি। বৈদ্যুতিক সংযোগও নেই।
ফুটওভার ব্রিজগুলোতে কেন বাতি জ্বলছে না জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সড়ক উপ-বিভাগ-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন বলেন,ব্রিজগুলোতে বিদ্যুতের কাজ করা আছে। বিদ্যুতের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে।
টাইলস লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, টাইলসের বিষয়টি আসলে আমার জানা নেই। এটি আমার একটু দেখতে হবে।
ব্রিজের সিড়িতে টাইলস ও ইটালিয়ান বাতি না লাগিয়ে কেন বিল দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর বাহিরে আমার আর কিছু জানা নেই। কোনো বিল সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারি না। এগুলো সব আমি আসার আগে হয়েছে।
Discussion about this post