সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি:
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দূর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও তার স্ত্রী রোকেয়া রহমানের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশীট প্রধানের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কাউন্সিলর মতি দম্পতির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দ্রুত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেওয়ার জন্য স্থানীয় এলাকাবাসী দূর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলার অগ্রগতি না থাকায় কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতিসহ তার সহযোগীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মামলার পর থেকেই একটার পর একটা সংঘর্ষে জড়িয়ে পরছে মতি ও তার অনুসারীরা।
এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি, কিশোর গ্যাং বাহিনী, মাদক ব্যবসায়ীকে শেল্টার দেওয়া, প্রতিপক্ষকে ঘায়ের করা, আদমজী ইপিজেডের ব্যবসা জোর পূর্বক নিয়ন্ত্রণ করাসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পরেছেন কাউন্সিলর মতি ও তার বাহিনী। এর মধ্যে মতির সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে রয়েছে এক সময়ের বিএনপি নেতা ও এসো এলাকার তেল চোর ব্যবসায়ীদের মূল হোতা আশরাফ উদ্দিন ওরফে আশরাফ।
আশরাফ নিজেকে একটি (অনুমোদনহীন) পত্রিকার সম্পাদকও দাবি করেন। মূলত ওই পত্রিকার সরকারীভাবে কোন অনমোদন নেই বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুমিলপাড়া এলাকার এক বাসিন্দা জানান, কাউন্সিলর মতি বর্তমানে ওই এলাকার এক আতঙ্কের নাম। তার ভয়ে স্থানীয় কোন ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না বলে জানান তিনি। কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো ধরে নিয়ে কাউন্সিলর কার্যালয়ে নিয়ে হুমকি ধামকি দেন। তার শেল্টারে ওই এলাকায় বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি হয়েছে। যার নিয়ত্রণ করেন কাউন্সিলর মতি।
সূত্রে জানা গেছে, অঢেল সম্পত্তির মালিক হওয়ায় কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি কাউকে তোয়াক্কা করেন না। এমনকি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদেরও কোন পাত্তা দেন না বলে জানান গেছে। কিছুদিন পূর্বে মুঠোফোনে এক ইপিজেড ব্যবসায়ীকে হুমকির কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাজুড়ে তোলপারের সৃষ্টি হয়। তখন অডিও কলে মতি ওই ব্যবসায়ীকে বলেন তুই ইপিজেডে আর ডুকবি না। তোকে যেনো ইপিজেডে আর না দেখি। তোর কোন বাপ আছে আমি দেখবো। এসময় ওই ব্যবসায়ী থানা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের নাম বললে মতি উল্টো ক্ষেপে গিয়ে ওই আওয়ামীলীগ নেতাদেরও গালিগালাজ করতে শুনা যায়।
এদিকে ১৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: মতিউর রহমান (মতি) ও তার স্ত্রী রোকেয়া রহমান সহ তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দু-টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো: মাহবুব হোসেন ।
মামলার এজাহার সূত্র জানায়, প্রথম মামলায় কাউন্সিলর মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ৬ কোটি ১ লাখ ৭২ হাজার ২৬৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ১০ কোটি ৮৬ লাখ ৫ হাজার ৬৩৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ৮২ কোটি ৫১ লাখ ৪২৪ টাকা জমা করে পরবর্তীতে ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৯ টাকা উত্তোলন করে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করে অবস্থান গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অপর মামলায় কাউন্সিলর মতির স্ত্রী রোকেয়া রহমানের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৬১ লাখ ১৮ হাজার ৩৯৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ১ কোটি ৮৬ লাখ ৬৭ হাজার ৩৯৫ টাকা জমা করে সেখান থেকে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৮ টাকা উত্তোলন করে তা স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের পর অবস্থান গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২) ধারায় মামলা দায়ের করেন।
Discussion about this post