মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে :
রাজধানীর যানজট নিরসনে ঢাকা বাইপাস সড়ক ৮ লেন করার কাজ গতি পেয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত মেয়াদ ৬ বছর আগে শেষ হলেও কাঞ্চন সেতুতে টোল আদায় অব্যাহত রয়েছে। এতে করে সেতু এলাকার দুই পাশে ত্রীব যানজট লেগেই থাকে। ঢাকা বাইপাস নির্মাণকাজসহ যানজটে নিত্যদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যানজট পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারছে না স্থানীয় ট্রাফিক, হাইওয়ে ও থানা পুলিশ। উল্টো রাজধানী এড়িয়ে বাইপাস ব্যবহারকারীরা হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এমন ভোগান্তির ঘটনায় অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে ভূক্তভোগিদের ।
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) নির্মাণাধীন গাজীপুরের ভোগরা থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ হয়ে সোনারগাঁওয়ের মদনপুর পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ের জন্য এক হাজার ৭৫ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিয়েছেন বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড (বিআইএফএফএল)। এর ফলে আগের তুলনায় কাজের গতিতে বেড়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ সূত্র জানায়, ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে চীনা প্রতিষ্ঠান সিচুয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ গ্রুপ কর্পোরেশন লিমিটেড (এসআরবিজি) এবং বাংলাদেশের শামীম এন্টারপ্রাইজ ও ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে নিয়ে যৌথভাবে ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি গঠন করা হয়েছে।
গাজীপুরের ভোগরা থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে প্রায় ৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা বাইপাস নির্মাণ হচ্ছে। আট লেন সড়ক নির্মাণ শেষে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পরবর্তী ২৩ বছর পর্যন্ত টোল আদায় করতে পারবে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, গত পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আগেই ঈদযাত্রায় যেন ভোগান্তি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে সড়কটি চলাচল উপযোগী রেখে দ্রুত কাজ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছিল। আর যানজটের কবল থেকে রাজধানীবাসী ও পাশ্ববর্তী জেলাগুলোর দুর্ভোগ কমাতেই ঢাকা বাইপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী ২০২৪ সালে ৮ লেনে উন্নীত হলে দেশের মানুষ বিশেষ সুবিধা ভোগ করবেন।
প্রকল্প পরিচালক (পিডি) সবুজ উদ্দীন খান জানান, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তাতে কাজ শুরুর দিন থেকে চার বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ঢাকা বাইপাস সড়ক নির্মিত হলে পণ্য নিয়ে ট্রাক এবং ট্যাংকলরীর মতো ভারি যানবাহন আর রাজধানীতে প্রবেশ করে অন্যান্য জেলায় যাবে না। ঢাকা বাইপাস ব্যবহার করেই পণ্যবাহী যান চট্টগ্রাম ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে যেতে পারবে।
এদিকে সওজ সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় মদনপুর থেকে কড্ডা পর্যন্ত মূল এক্সপ্রেস সড়ক হবে চার লেনের। এর বাইরে সড়কের দুই পাশে থাকবে আরো দুটি লেন। এগুলোর প্রশস্ততা হবে দেড় লেন করে। প্রকল্পের আওতায় গাজীপুরের ভোগড়া, মিরেরবাজার, বস্তুল, ধীরাশ্রম ও কাঞ্চন সেতুর আগে নির্মাণ করা হবে পাঁচটি ফ্লাইওভার ও ২৫টি আন্ডারপাস। যেহেতু সড়কের একটা বড় অংশ যাবে পূর্বাচলের ওপর দিয়ে, সে কারণে আন্ডারপাসকেই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। কাঞ্চনে শীতলক্ষ্যা নদীর চার লেনের সেতুসহ তিনটি বড় সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর একটি উলুখোলা ও অন্যটি নাগদায় এলাকায়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-বাইপাস সড়ক নামে ৪৮ কিলোমিটার রাস্তাকে কাঞ্চন সেতুর মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে। এদিকে টোল এলাকায় মাঝে মধ্যে চারটি টোলের মধ্যে দু’টি বন্ধ রাখা হয়। এর ফলে এক ঘণ্টার মধ্যে যানজট সেতুর দু’পাশে প্রায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার এলাকা ছাড়িয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী সাধারণ থেকে শুরু করে মালবাহী যানবাহনের চালকরা।
এদিকে নির্মাণাধীন ৮ লেনের বাইপাস এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর রূপগঞ্জ অংশে কাঞ্চন সেতুর টোল আদায়ের জন্যই উভয় পাশে যানজটের মূল কারণ। স্থানীয়রা এমন অভিযোগ করে বলেন, ২০১৬ সালেই টোল আদায়ের নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও কেন টোল আাদয় অব্যাহ রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও সিলেটের সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের সরাসরি সংযোগ স্থাপনরে জন্য কাঞ্চন সেতুটি নির্মাণ করা হয় ২০০৬ সালের অক্টোবরে। সে সময় সেতু খুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল ১০ বছর পর্যন্ত টোল আদায় করা হবে। এরপর কাঞ্চন সেতু ব্যবহারে আর যানবাহনকে টোল দিতে হবে না। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালে টোল আদায়ের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু গত ৬ বছর ধরে চলছে টোল আদায়।
এর আগে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর রাজধানীতে প্রবেশের জন্য চারটি সেতু নির্মাণ করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে কাঁচপুর সেতু, ডেমরা-তারাব সেতু, মুড়াপাড়া-ইছাখালী সেতু ও কাঞ্চন সেতু। এসব সেতুর মধ্যে শুধুমাত্র কাঞ্চন সেতুতেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও টোল আদায় করা হচ্ছে।
কাঞ্চন সেতু প্রকল্প ও টোলপ্লাজার পরিচালক মোহাম্মদ শামীমুল হক বলেন, সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে দায়িত্ব দেওয়ার পরই টোল আদায় করা হচ্ছে। টোল আদায়ের মেয়াদকাল শেষ হয়েছে বলে তিনি জানেন না। নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহা. জহিরুল ইসলাম বলেন, কাঞ্চন সেতুর টোল আউট সোর্সের মাধ্যমে আদায় করা হচ্ছে। মূলত সরকারের সিদ্ধান্তেই টোল আদায় করা হচ্ছে। আমরা তদারকি করছি মাত্র।
Discussion about this post