১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দেশের প্রথম সশস্ত্র গণপ্রতিরোধ হয় নারায়ণগঞ্জের মাসদাইরে। প্রতিরোধের কারণে ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা ক্র্যাকডাউন হলেও পাকিস্তানী বাহিনী নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে পারেনি। ২৭ মার্চ ভোরে পাকিস্থানী বাহিনী নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করে। এসময় তারা মাসদাইর এলাকার ৩৩ জনকে হত্যা করে। তবে এ শহীদরা এখনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি।
রোববার (২৭ মার্চ) সকালে মাসদাইর এলাকায় প্রতিরোধ স্তম্ভের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ৩৩ শহীদ পরিবার কল্যান সমিতির আয়োজনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বক্তারা উল্লেখিত মন্তব্য করেন ।
অনুষ্ঠানে ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নুরুদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, নারায়ণগঞ্জে চিহ্নিত রাজাকার গোলাম রাব্বানী খানকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী বানানোর চেষ্টা চলছে। এমন প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গোলাম রাব্বানী খান চাষাড়া ইউনিয়নের শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১২ মে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় শান্তি কমিটির নেতা হিসেবে তার নাম ছাপা হয়। নারায়ণগঞ্জের শান্তি কমিটির প্রধান ছিল আজিজ সর্দার। গোলাম রাব্বানী খানের এক ভাই ছাড়া তার পরিবারের সবাই রাজাকার ছিল। কেউ কেউ সশস্ত্র রাজাকারও ছিল। রাইফেল ক্লাবে ও নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে পাকিস্তানি মেজরদের সাথে তার দহরম-মহরম ছিল। তার বাড়ির সামনে আইয়ুব খানের একটি বিশাল ছবি সে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস টাঙ্গিয়ে রেখেছিল।
বঙ্গবন্ধুকে যেদিন হত্যা করা হয় সেদিন সে মিষ্টি বিতরণ করে। শান্তি কমিটি পাকিস্তান কায়েম রাখার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করে। রাজাকার নিয়োগ করে। সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালায়। এমন চিহ্নিত রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী বানাতে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার উঠে পড়ে লেগেছেন। অথচ প্রতিরোধযুদ্ধ স্মরণে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কোনো কর্মসূচি নেই।
অনুষ্ঠানে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজ বলেন, অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের বইয়ে শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে যার নাম রয়েছে, সে সময়ের পত্রিকায় শান্তি কমিটির নেতা হিসেবে যার নাম ছাপা হয়েছে, এলাকাবাসী স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে যার নাম জানে তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী বানানোর জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত দেয়া অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। এবং অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে নারায়ণগঞ্জের শীর্ষস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা নেতারা এই লিখিত দিয়েছেন। এমন ঘটনা ঘটলে ভবিষ্যতে হয়তো মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্থাপনার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের বদলে রাজাকারের সন্তানেরা থাকবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ মজিবুর রহমান। মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কবি হালিম আজাদ, সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি কবি ফাহমিদা আজাদ, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মনির হোসেন, কোষাধক্ষ মোহাম্মদ শাহীন সর্দার, অধ্যাপক আব্দুস সালাম, মোহাম্মদ বাবুল মিয়া, আবু সাঈদ, আলাউদ্দিন মহাজন, আবুল হোসেন পটল প্রমুখ।
Discussion about this post