সারাদেশের ন্যয় নারায়ণগঞ্জে যথাযথ সম্মানের সাথে আজ শনিবার (২৬ মার্চ) সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই শহরের চাষাড়ায় অবস্থিত বিজয়স্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। ভোরের আলো ফুটে উঠার সাথে সাথেই ৩১ বার তোপধ্বনীর মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবেসের কর্মসূচী শুরু হয়েছে।
আর এমন কর্মসূচীর মধ্যেই নারায়ণগঞ্জে এক ঘৃনিত কর্মকান্ডের বীজ রচনা করেছে মুক্তিযুদ্ধকালীন চিহ্নিত রাজাকার গোলাম রব্বানী খান কে কেন্দ্র করে । যা এখন টক অব দ্যা টাউন । সুবিধাভোগিদের একটি পক্ষ নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করে জানান দেন, “মুক্তিযুদ্ধকালীন চিহ্নিত রাজাকার গোলাম রব্বানী খান শান্তি কমিটির কেউ নয়, তিনি রাজাকার ছিলেন না !“
এমন ঘৃনিত কর্মকান্ডের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই গণমাধ্যমে বলেছেন, ”আমি এমন কান্ডে বিব্রত।” নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেছেন, “তাারা কোন সুবিধা পেয়েই এমনটি বলেছেন।” মুক্তিযোদ্ধা আসাদ ও রমজানসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন, “ এইট ঘৃনিত কর্মকান্ড । ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই না ।”
উল্লেখিত মন্তব্য ছাড়াও খোদ জেলা আও্য়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রায়ই বলেন, রাজাকারের পুত্রদের বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি গ্রুপ সব সময় তৎপর রয়েছে ।
অপরদিকে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক ও সাংস্কুৃতিক ব্যাক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেছেন, শামীম ওসমান রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দিচ্ছে । সে মাইক লাগিয়ে একটা বলে দিবে আর তা সত্য হয়ে যাবে এটা ভাবার সুযোগ নাই। একাত্তুরে রাইফেল ক্লাব থেকে কোন অস্ত্র লুট হয় নাই । গোলাম রাব্বানী মে মাসে যখন ১২৪ জনের শান্ত বাহিনীর কমিটি গঠন করা হয় তখন চাষাড়া অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন। তখন নন্দীপাড়ার হিন্দুদের জায়গা দখল করেছেন । কিন্তু এখন এই গোলাম রাব্বানীকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আনতে হবে ! কারণ কাজল হচ্ছে ওসমান পরিবারের অন্যতম সহযোগি । এই কাজলকে সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করতে হবে । যত রাজাকার আছে সকলের সাথে ওসমান পরিবারের সম্পর্ক ।
নারায়ণগঞ্জজুড়ে এমন কঠোর সমালোচনা ছাড়াও কথায় কথায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের মামলা দিয়ে হয়রানী করার নানা ধরনের হুমকির কারণে অনেক গণমাধ্যম এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ না করলেও কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় আজ ২৬ মার্চ মহান বিজয় দিবসে গুরুত্বসহকারে মুক্তিযুদ্ধকালীন চিহ্নিত রাজাকার গোলাম রব্বানী খান কে ঘিরে সংবাদ প্রকাশ করে । যা পুরো জেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে ।
অনেকেই বলেছেন রাজাকার পুত্র এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলকে কলুষমুক্ত করতেই এমন কর্মকান্ড চালাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের ক্ষমতাধর প্রভাবশালী কাজলের শেল্টারদাতা চক্রটি ।
মুক্তিযুদ্ধকালীন চিহ্নিত রাজাকার গোলাম রব্বানী খান শান্তি কমিটির কেউ নয়, তিনি রাজাকার ছিলেন না এমন নতুন তথ্য উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) বিকালে এমন তথ্যের প্রত্যয়ণপত্র দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের দপ্তরে।
প্রত্যায়ণপত্রে উল্লেখ করা হয়, গোলাম রব্বানী খানের পিতা মরহুম আবদুস সামাদ খান ১৯৫৪ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদ নির্বাচনে ‘যুক্তফ্রন্টের’র মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে রূপগঞ্জ আসনে বিপুল ভোটে এমএলএ নির্বাচিত হয়েছিলো। গোলাম রব্বানী খান কলেজ রোড এলাকার মরহুম আবদুল সামাদ খানের ছেলে ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল’র পিতা।
জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রত্যায়নপত্র গ্রহণ করেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (উপসচিব) ফাতেমা তুল জান্নাত। যার একটি সরকারী চিঠি প্রদানকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি তোলপাড়ের সৃষ্টি হয় নগরজুড়ে ।
এ সময় সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সামিউল্লাহ মিলন, জেলার ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট নুরুল হুদা, সদ্য সাবেক নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান ভূইয়া জুলহাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা খবির আহমেদ ।
সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর এমন কর্মকান্ডে মোহাম্মদ আলীর একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বলেন, খোদ মোহাম্মদ আলী নিজেই এই ঘটনায় বিব্রত । তার কিছু করার ছিলা না। মোহাম্মদ আলী জিম্মি । দেশের এবং বিদেশের একটি শক্তিশালী চক্রের নানা ধরণের হুংকারের কারণে তিনি এমন ঘৃনিত ঘটনায় সাক্ষি হতে বাধ্য হয়েছেন ।
মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কর্তৃক এমন কান্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশ না করার অনৃুরোধে দুই দফায় ২৩ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড এবং ৪ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একান্ত আলোচনায় নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের এক প্রবীন নেতা নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, “আমার মন চাইছে মোহাম্মদ আলীকে থু থু দেই। আমার সাথে কাজলের বাবার সাথে সুসম্পর্ক ছিলো। এই নারায়ণগঞ্জে রাজাকার তৈরীতে গোলাম রব্বানী খান মূখ্য ভূমিকা পালনও করেছিলো। তার বাড়িতে বসে নিজ ভাই ফজলে রাব্বি খান বাবর কে রাজাকারের এক নম্বরের তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ করা হয় এরপর তাওলাদ, দুইখ্যা, গোল্ডেন মাইকের ওয়াদুদ মিলনসহ ২১/২২ জনের নাম দিয়েছিলো এই গোলাম রব্বানী । আমি মৃত্যুকে পরোয়ানা করি না । কিন্তু ওদের সকলেই আমাকে সম্মান করে বিধায় আমার নাম আপাততঃ প্রকাশ করতে চাচ্ছি না । আমার বয়স তো শেষ । হয়তো মারা যাবো যে কোন সময় । আমার চাইতে বড় সাক্ষি আর কে আছে ? মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে যে মামলা ছিলো তার জন্য জেল খাটে কে কে ? মুখ খুললে ওর সম্মান কই যাইবো ? নূর ইসলাম, জাতীয় পাটির রাজার জেঠা আকবর শেঠ, মোস্তফা কোন মামলার আসামী ছিলো ? পাকোয়ান মিলের লেবার সর্দার এখন নেতা ? কে রাজাকার আর কে মুক্তিযোদ্ধো তার নতুন ইতিহাস রচনা করার মোহাম্মদ আলী কে ?
Discussion about this post