শহরের চিহ্নিত চাঁদাবাজদের হোতা রহিম মুন্সিসহ ৫ জন ফুটপাত দখলদারকে গ্রেফতারের পর মধ্য রাতে ছেড়ে দিয়েছে সদর থানা পুলিশ । রাত দুইটায় অন্য চারজন আটককৃতকে থানার হাজতে রেখেই রহিম মুন্সী নামক কুখ্যাত চাঁদাবাজকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে হকারদের মাঝে
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
সোমবার ২১ অক্টোবর সন্ধ্যার পর শহরের চাষাঢ়া চত্তরের ব্যাংকের সামনের সড়ক থেকে ফুটপাতের চাঁদাবাজদের হোতা রহিম মুন্সীসহ ৫ জনকে আটক করে পুলিশ । এমন ঘটনায় সোমবার রাতে পুরো শহরের ফুটপাত ফাঁকা হয়ে যায় । রহিম মুন্সী গ্রেফতারের ঘটনায় হকারদের অনেকেই বলেন, “ পালের গোাদা রহিম মুন্সী গ্রেফতার হয়েছে, আর কি রক্ষা আছে ।” তাই আর কেউ শহরের ফুটপাতে বসতে সাহস করছে না ।
এমন আটকের বিষয়ে সদর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের নির্দেশে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে পণ্য নিয়ে ফুটপাত দখল করার অভিযোগে হকার্স নেতা রহিম মুন্সীসহ ৫ জনকে আটক করা হয়েছে ।
রহিম মুন্সী গ্রেফতারের খবরে শহরে অনেকের মাঝে স্বস্তি নেমে আসলেও রাত ফুরানোর পর সকালে শহরবাসী আবার দেখতে পায় আবার ফুটপাত দখল করেছে হকারদের সকলেই । চাষাড়াস্থ সোনালী ব্যাংকের সামনে প্রতিদিনের মতো পসরা নিয়ে ফুটপাত দখল করেছে হকারদের সকলেই ।
ব্যাংকের গেইটের ফুটপাত দখল করে এলোভেরা (ঘৃতকুমারী) বিক্রেতা রংপুরের বাসিন্দা চাঁদাবাজ রহিমের ভাগিনা সাত্তার দম্ভ করেই বলেন, রহিম মামারে তো রাত আড়াইটায় থানা থেইক্কা ছারাইয়া আনছে । কিভাবে ? এমন প্রশ্ন করলে এই ঘৃতকুমারী বিক্রেতা হকার জানায়, টাকায় কি না হয় । আর অন্য চারজনরে আজ বিকেলে কোর্ট খেইক্কা ছাড়বো।
পালের গোদা ( অপরাধেীদের মূল হোতা ) রহিম মুন্সীকে থানা থেকে মধ্য রাতে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় সদর থানার ডিউটি অফিসার বিবেকানন্দ বলেন, ভাই আমি সকালে (২২ অক্টোবর মঙ্গলবার) ডিউটি নিয়েছি । ঠিক করে বলতে পারবো না কে রহিম মুন্সী আর কে করিম মুন্সী । কে আটক আছে আর কে হাজতে নাই তাও বলেতে পারবো না । ওসি স্যার জানেন আসেল কি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে পুলিশের এক সদস্য বলেন, রাত দুইটায় চাঁদাবাজ রহিম কে হাজত থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে ।
উল্লেখ্য ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী বিকেলে ফুটপাতে ফের হকার বসানো নিয়ে চাষাঢ়া এলাকায় এমপি শামীম ওসমান সমর্থক ও হকারদের সঙ্গে সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থকদের মধ্যকার সৃষ্ট সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ব্যাপক সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই সময় হকার নেতা রহিম মুন্সির নেতৃত্বে হকাররা বৃষ্টির মতো মেয়র আইভী ও তার সমর্থকদের প্রতি ইট নিক্ষেপ করতে থাকে। মেয়র আইভীকে তখন রক্ষা করতে মানবঢাল তৈরি করেন সমর্থক নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষে সিটি মেয়র আইভী, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারী শরীফউদ্দিন সবুজ, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের শহরের সভাপতি জুয়েল হোসেন, নিয়াজুল, হকার্স শ্রমিকলীগের নেতা পলাশ, রাশেদুল, সবুজসহ উভয়পক্ষের অন্তত অর্ধশত আহত হয়। ১৮ জানুয়ারি বিকেলে মেয়র আইভীকে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আইভী সেখানে ৫ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন।
শহরের ফুটপাত দখল নিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগসহ খোদ সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার লোকজনের সাথে তুমুল সংর্ঘর্ষ হলেও শহরের চিহ্নিত চাঁদাবাজদের কোন অবস্থাতেই ফুটপাত থেকে সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করা যায় নাই । বিরামহীনভাবেই চাঁদাবাজদের দৌড়াত্ম চলছেই ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো: হারুন অর রশিদের নির্দেশে শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত ও দিগুবাবুর বাজারের দখলমুক্ত করতে ও অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে অভিযান শুরু করলেও থানা পুলিশের সাথে অবৈধ দখলদারদের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক প্রায়ই শহরবাসীকে হতাশ করেছে । যার কারণে অনেকেই সমালোচনা করে বলেন, পুলিশ আর হকারদের এই ভানুমতির খেলা আর কতদিন দেখতে হবে ? পুরিশ সুপারের কঠোর নজরদারী প্রয়োজন বলেও মনে করে নগরবাসী ।
(ফাইল ছবি)
Discussion about this post