ফতুল্লা থানার অসাধু পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক, নারী দিয়ে দেহ ব্যবসা, ভূমিদস্যুতা, চাঁদাবাজি, আটক করে নানাভাবে নির্যাতনসহ প্রতিদিনই নিজেকে কাশিপুর ইউনিয়ন এলাকার বিচারক মনে করে সাধারণ মানুষকে নানাভাবে অত্যাচার করে আসছিলো স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমান শ্যামল ওরফে দর্জি শ্যামল ওরফে চাচা শ্যামল। এতো অপরাধ ছাড়াও অত্যান্ত গোপনীয়তার সাথে বিভিন্ন ধরণের অনৈতিক ব্যবসা করে আসছিলো এই ধূর্ত শ্যামল ।
এতো অপকর্ম করে নিজেকে এলাকায় বিশাল প্রভাব দেখাতে ফতুল্লা থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের সাথে নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে সেখাতে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে শ্যামল। পুলিশের সাথে মিলেমিশে এতা অপরাধ করা পরও নিজেকে শেষ রক্ষা করতে পারে নাই এলাকার স্ব-ঘোষিত বিচারকখ্যাত শ্যামল। সেই পুলিশের হাতেই ধর্ষন মামলার ফতুল্লা থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর আদালতের আদেশে কারাগারে ঠাঁই হয়েছে নানা অপরাধের হোতা যুবলীগ নেতা আনিসুর রহমান শ্যামলের ।
ফতুল্লা তানায় দায়েরকৃত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলায় আসামী আনিসুর রহমান শ্যামলকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানোর পর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মাহমুদুর মহসিন আসামী পক্ষের আইনজীবীর জামিনে আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
এমন ঘটনায় আসামী শ্যামলের ঘনিষ্ট অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন , এতো দিন পুলিশের সাথে সখ্যতা/ কক্সবাজারে পুলিশ অফিসারদের আমোদ – ফূর্তী করে কি লাভ হলো । যাদের সাথে এতো আমোদ ফূর্তী- সখ্যতা তাদের হাতেই আটক হয়ে এখন জেলে যেতে হলো শ্যামলকে । এ সময় অনেকেই বলেন,বারবার লাম্পট্য, মা ও মেয়েকে একই সাথে ধর্ষনের ঘটনার খবর এলাকার সকলেই জানলেও শ্যামল নিজেকে সংশোধন না করায় এই পাপের শাস্তি তাকে পেতে হচ্ছে ।
এমন ঘটনার কিছু ছবি ও বক্তব্য রয়েছে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর দপ্তরে ।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় :
কারো কাছে তিনি হাজী শ্যামল হিসেবে পরিচিত আবার কারো কাছে দর্জি শ্যামল। তার পুরো নাম আনিসুর রহমান শ্যামল। কাশিপুর এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবেও তাকে অনেকে চেনে এবং জানে। নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগি সংগঠন যুবলীগের কাশিপুর ইউনিটের সভাপতি তিনি। স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতার পরোক্ষ শেল্টারেই অপ্রতিরূদ্ধ সে। রয়েছে তার নিজস্ব বিচারালয়।
এবার সেই বিচারলয়ে একটি ধর্ষণ ঘটনা বিচারের বাহানায় তুর্জ নামে একজন ধর্ষণকারীকে পালাতে সাহায্য করায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) ভোরে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে । পরে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
শ্যামলের গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন।
তিনি বলেন, একটি ধর্ষণ ঘটনার বিচার করে ধর্ষককে ছেড়ে দিয়ে ধর্ষকের সহযোগি হিসেবে কাজ করেছেন শ্যামল। ফলে ধর্ষণের সহায়তা করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে । এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। পালিয়ে যাওয়া ধর্ষণকারী তুর্জকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে বিভিন্ন সময়েই নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠে আসছিলো এই বিতকির্ত ভূমিদস্যু শ্যামলের বিরুদ্ধে। তবে, প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্ক থাকার কারণে তার একটি ক্যাশও স্পর্শ করতে পারেনি পুলিশ । হাজী শ্যামল ওরফে দর্জি শ্যামলের রয়েছে নিজস্ব একটি বাহিনীও। এই বাহিনী দ্বারা মাদক ব্যবসা, ভূমিদস্যুতাসহ সকল প্রকার অপকর্মই করিয়ে থাকে। এই বাহিনীর অন্যতম হচ্ছে কাশিপুরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বসায়ী টুকু ও ইকবাল।
শ্যামল যে শুধু ভূমিদস্যুতাই করেন তা নয়, তিনি অটো রিকশা থেকে চাঁদাবাজিও করেন। আর এমন অভিযোগ এনে ফতুল্লা মডেল থানায় শ্যামলসহ চারজনের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন কতক অটো রিকশাচালক ও মালিক। তাদের পক্ষে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন ফতুল্লার পঞ্চবটির চাঁদনী হাউজিংয়ের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন।
অভিযোগে শ্যামলের পাশাপাশি আরও অভিযুক্ত করা হয়েছে, কাশিপুরের খোকন, শাহীন এবং পঞ্চবটির গুলশান রোড এলাকার হুমায়ূন সিপাহীকে।
অভিযোগকারীর দাবি, শ্যামল ও তার লোকজন কাশিপুর দিয়ে চলাচলরত অটো রিকশা থেকে প্রতিদিন ১শ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করেন। এছাড়াও ‘ফতুল্লা থানা রিক্সা মালিক ও চালক কল্যাণ সমবায় সমিতি’ নামে প্লেট বাণিজ্য করছে এই চক্রটি।
এদিকে আমজাদ হোসেন লিখিত ওই অভিযোগটি দায়ের করলে ফতুল্লা মডেল থানার তৎকালিন ওসি মঞ্জুর কাদের চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রবীরকে দায়িত্ব প্রদান করেন। কিন্তু তিনি নির্যাতিতদের পক্ষে না গিয়ে অবস্থান নেন অভিযুক্ত চাঁদাবাজ হাজী শ্যামলের। ফলশ্রুতিতে এসআই প্রবীর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো তাদের পক্ষ নেন এবং অভিযোগ দায়েরকারীদের থানায় ডেকে নিয়ে আসেন ব্যাপারটি মিটমাট করার জন্য। আর এ নিয়েই শুরু হয়েছিলো ব্যাপক হইচই।
যদিও এসআই প্রবীর সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সমঝোতা নয়। সমস্যা জানতে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। ওসি স্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের কিন্তু তখন তাদের পাইনি।
তবে, কোপা ইকবাল জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে মাদকের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সত্য নয়। তাছাড়া তিনি যুবদল করেন আর শ্যামল যুবলীগ করেন। তাদের বাড়ি পাশাপাশি হলেও দুজনের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে, এক সময় তারা দুজনই একটি গার্মেন্টে কাজ করতেন বলে স্বীকার করেন তিনি। এর বাইরে শ্যামলের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত, হোসেয়ারীতে দর্জি শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া সেই শ্যামল এখন অঢেল ধন সম্পদের মালিক। যদিও তার নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসা বা কাজ নেই। তারপরও তিনি এখন কোটি কোটি টাকা মালিক। কিন্তু এত অর্থবিত্ত তার কোথা থেকে আসলো? এ নিয়ে এলাকাজুড়ে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা।
যদিও স্থানীয়রা বলছে, প্রথমমত ভূমিদস্যুতা, দ্বিতীয়ত মাদক, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত সে। স্থানীয় একজন এমপির লোক হিসেবেই এই শ্যামল নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এমনকি কাশিপুর ইউনিয়ণের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সরাসরিই শ্যামলকে শেল্টার দিয়ে থাকেন বলে তারা জানান। আর এ কারণেই শ্যামল অপ্রতিরুদ্ধ কাশিপুর অঞ্চলে। অনেকের কাছে সে একজন মুর্তমান আতঙ্কও।
স্থানীয়দের মতে, কাশিপুরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইকবাল, কুটু ও সুইমকে সরাসরি শেল্টার দিয়ে থাকে হাজী শ্যামল। বলা হয়ে থাকে তারা যে মাদকের ব্যবসা করে তা শ্যামলই নেপথ্য গডফাদার। আর এসব কারনেই রাতারাতি দর্জি শ্রমিক থেকে অঢেল ধনসম্পদের মালিক হতে পেরেছেন আনিসুর রহমান শ্যামল ওরফে হজী শ্যামল ওরফে দর্জি শ্যামল।
Discussion about this post