এনএনইউ ডেক্স :
গণি মিয়া একজন কৃষক, তার নিজের কোন জমি নাই, সে অন্যের জমি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে — না সেই পাঠ্য বইয়ের গনি মিয়া নয় এই গনি মিয়া হচ্ছেন সারাদেশের আলোড়ণ তোলা সেই ওসমান গণি যিনি তার গর্ভধারিনী মা কে অনাহারে গ্রামের বাড়িতে ফেলে রেখে দেশের বন কেটে উজার করে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছিলেন, ঘুমাতো টাকার বিছানায়।
ওসমান গনির উত্তরার সরকারি বাসভবনে অভিযান চালিয়ে চালের ড্রাম, বালিশ ও তোশকের ভেতর থেকে ১ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করেছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই চাঞ্চল্যকার বন খেকো ওসমান গনি এখন নিঃস্ব । তার তার এখন কোন সম্পদ নাই ।
জানা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ‘বনের রাজা’ চাকরিচ্যুত প্রধান বন সংরক্ষক ওসমান গনিকে বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড, জরিমানা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বিচারিক আদালতের রায়ের পর উচ্চ আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে তাঁর করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
আদালতে ওসমান গনির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরসিদ আলম খান। পরে দুদকের আইনজীবী গণমাধ্যমকে বলেন, ওসমান গনির লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে তাঁর সাজা ও অর্থদণ্ড বহাল রইল।
ওসমান গনির আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, বিচারিক আদালতের দেওয়া শাস্তি বহাল রয়েছে। ইতিমধ্যে সাজা ভোগ করে ওসমান গনি মুক্তি পেয়েছেন। সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের বিষয়ে আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে লিভ টু আপিল করা হয়েছিল।এর আগে ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ওসমান গনিকে ১২ বছরের সাজা দিয়ে দেওয়া নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। পরে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন ওসমান গনি।
২০০৮ সালের ৫ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ওসমান গনিকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওসমান গনির উত্তরার সরকারি বাসভবনে অভিযান চালিয়ে চালের ড্রাম, বালিশ ও তোশকের ভেতর থেকে ১ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করেন। তাঁরা ৪১ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্রের সন্ধানও পান। এরপরই ওসমান গনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাসা থেকে ওসমান গনির নামে দুটি পাসপোর্ট পাওয়া যায়। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একটি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখার লকার থেকে ২৯০ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে মাত্র ২০ ভরি অলংকারের বৈধ কাগজপত্র ছিল।
দুদক ২০০৭ সালের ১৬ জুন ওসমান গনিকে তাঁর সম্পত্তির হিসাব জমা দেওয়ার জন্য নোটিশ দেয়। ওসমান গনি ২৬ জুলাই তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব জমা দেন। বিবরণীতে তিনি স্ত্রী মোহসিনারা ও তাঁর নামে ৩ কোটি ৭০ লাখ ১৫ হাজার টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসহ ২৯০ ভরি স্বর্ণালংকার আছে বলে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে তাঁর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৪৩ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৬ টাকার এফডিআরসহ (স্থায়ী আমানত) মোট ১ কোটি ৫৬ লাখ ৭৬ হাজার ১৯১ টাকা জমা ছিল। বাসায় আসবাবপত্র দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ টাকার। ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মূল্য দেখানো হয় ৭ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে দেখিয়েছেন জিগাতলা মনেশ্বর রোডের ৯৬/২/বি নম্বরে একটি পাঁচতলা বাড়ি। দুদকের মূল্যায়নে ওই বাড়ির মূল্য ১ কোটি ১ লাখ ৬৭ হাজার ৭৯৩ টাকা। চার কাঠা পরিমাণের এই জমির ক্রয়মূল্য ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের সাত নম্বর সড়কে পাঁচ কাঠা জমির একটি প্লট; নিজের নামে পূর্বাচল ২ নম্বর সেক্টরের ১০২ নম্বর সড়কে সাড়ে সাত কাঠার ১২৯ নম্বর প্লট, যার মূল্য ১৩ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা; বরিশালের আলেকান্দায় ৬ শতাংশ জমি, মূল্য তিন লাখ টাকা দেখানো হয়। বিবরণীতে বলা হয়, তিনি ও তাঁর স্ত্রী ১৯ লাখ ৩০ হাজার ৫২৭ টাকার সম্পদের আয়কর দিয়েছেন।
দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, ওসমান গনি ১ কোটি ২ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৮১ হাজার ৪৬৪ টাকা।
২০০৭ সালের ২৬ জুলাই দুদক ওসমান গনি ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে উত্তরা থানায় মামলা করে। ২০০৮ সালের ৫ জুন আদালত ওসমান গনিকে ১২ বছর ও তাঁর স্ত্রী মোহসিনারা গনিকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত ওসমান গনির নামে থাকা ১ কোটি ৮০ লাখ ও স্ত্রীর নামে থাকা ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ২৭০ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করেছেন। ওই সময়ে জাতীয় সংসদ ভবনে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক এ কে এম আরিফুর রহমান এই রায় ঘোষণা করেন।
Discussion about this post