সুমাইয়া হাসপাতালে পুলিশকে বলেছেন, ‘আমার বাবা আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমার বাবাই খালামনি নাসরিন বেগম ও তার দুই মেয়েকে হত্যা করেছে। বাবা মাদকাসক্ত ছিলেন। গতকালও আমাকে মারধর করেছে। সে কারণেই গতকাল আমি ও আমার মা খালামনির বাসায় চলে আসি
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নিজ বাসায় এক মা ও তাঁর দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে তাঁদের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয় লোকজন। পুলিশ এখনো ঘটনাস্থলে আছে।
নিহত তিনজন হলেন নাজনীন (২৬), তাঁর দুই মেয়ে নুসরাত (৮) ও সুমাইনা (২)। নাজনীনের স্বামীর নাম সুমন মিয়া। তাঁরা সদর উপজেলার সিআইখোলা এলাকায় আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন ।
এ ঘটনায় সুমাইয়া (১৫) কে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গুরুতর আহত সুমাইয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে পুলিশকে বলেছেন, ‘আমার বাবা আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমার বাবাই খালামনি নাসরিন বেগম ও তার দুই মেয়েকে হত্যা করেছে। বাবা মাদকাসক্ত ছিলেন। গতকালও আমাকে মারধর করেছে। সে কারণেই গতকাল আমি ও আমার মা খালামনির বাসায় চলে আসি।’
দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মূলত পারিবারিক কলহের জের ধরেই তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ (বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ঘটনাটি ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে এ হত্যাকান্ডের ঘাতক হলেন আব্বাস। আব্বাসের সাথে তার স্ত্রীর বিরোধ ছিল। ওই বিরোধের কারণে জিদ করে আব্বাসের শ্যালিকার বাসায় স্ত্রী চলে আসে। সে একটি গার্মেন্টে চাকরি করে। বৃহস্পতিবার সকালে কারখানায় চলে যায়। শ্যালিকার সঙ্গে আলাপকালে কোন বিরোধের জের ধরেই শ্যালিকা ও তার দুই মেয়েকে হত্যা করেছে। আর আব্বাস তার প্রতিবন্ধী মেয়েকেও জখম করেছে। ইতোমধ্যে আব্বাসকে ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে।’
১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ডের সিআই খোলা এলাকার বহুতল ভবনের ৬ তলার বাসা থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলো সুমন মিয়ার স্ত্রী নাসরিন বেগম (২৬), তাঁর মেয়ে নুসরাত (৮) ও খাদিজা (২)। নাসরিনের বোনের মেয়ে সুমাইয়াকে (১৫) ছুরিকাঘাত করা হয়।
নিহতের স্বামী সুমন জানান, তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকার পেট্রোল পাম্পে রাতে ডিউটি শেষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বাসায় ফিরেন। ওইসময় বাসার দরজা খোলা ছিল। ভিতরে প্রবেশ করতেই স্ত্রী সন্তানদের লাশ দেখতে পায়। আর আহত অবস্থায় আত্মীয় সুমাইয়া পড়ে আছে। পরে অন্য ভাড়াটিয়া ও আত্মীয় স্বজনকে সহ পুলিশকে খবর দেয়। পড়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার শুরু করে। তবে কে বা করা করেছে এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত কিছুই বলতে পারছে না।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুক জানান, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তারা আলামত সংগ্রহের পর সংবাদকর্মীদের ওই বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক সাজ্জাদ রোমন জানান, মা ও দুই সন্তান সহ তিনজনের লাশ উদ্ধার ও আহত একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছে। প্রাথমিক ধারণা পারিবারিক কলহের জের ধরে ছুরিকাঘাতে তিনজনকে হত্যা করেছে। আরেকজনকে আঘাত করলে সে আহত হয়। তাকেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে নিহত নারীর বোনের স্বামী আব্বাস এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। দুটি পরিবার পাশাপাশি ঘরে থাকত। আহত সুমাইয়া আব্বাসের মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুই দিন আগে নাজনীনের সঙ্গে তাঁর বোনের স্বামী আব্বাসের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার সময় নাজনীন আব্বাসকে চড়–থাপ্পড় মারেন। এই ঘটনার জেরে এই হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআই-২) সাজ্জাদ রোমন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
Discussion about this post