সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি :
সিদ্ধিরগঞ্জ যেন তিতাস গ্যাস ও বিদ্যুৎ চুরির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিণত হয়েছে । দীর্ঘ কয়েক যুগ যাবৎ নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সিদ্ধিরগঞ্জে বিভিন্ন চুনা ফ্যাক্টরীর পাশাপাশি বর্তমানে কয়েক বছর যাবৎ বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরীর মতো প্রতিটি মশার কয়েল কারখানায় গ্যাস চুরির মহোৎসবে মেতে উঠেছে অসাধু ব্যবসায়ী পরিচয়দানকারী চোর চক্র। সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে চোর চক্র চালিয়ে যাচ্ছে গ্যাস চুরির মহাযজ্ঞ ।
এদের থামানো যাচ্ছে না কোন অবস্থাতেই । একদিকে সংশ্লিষ্ট আইনশৃংখলা বাহিনী ছাড়াও স্থানীয় অন্যান্য প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ম্যানেজ করেই চালিয়ে যাচ্ছে চুরির মহোৎসব ।
তিতাস গ্যাসের এমন চুরির মহোৎসবের কারণে একদিকে যেমন সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব তেমনি পরিবেশের উপর পরছে মারাত্মক প্রভাব । অসাধু চোর চক্রের হোতাদের কোনভাবেই টিকিটিও স্পর্শ করতে পারছে না কেউ।
অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ, বিদুৎ বিল ও শিশু শ্রমিক দিয়ে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অবৈধ কারখারখানা মালিকরা নামধারী চোর চক্র । সরকার হারাচ্ছে কোটি-কোটি টাকার রাজস্ব। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় এ অবৈধ কয়েল কারখানাগুলোতে আগুনের ঘটনা ঘটায় আতঙ্কসহ ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতিসহ বিভিন্ন বাযূ বাহীত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে আস-পাশের সাধারণ জনগন। সাইনবোর্ড বিহীন এ কয়েল কারখানা গুলো এলাকাবাসীর অকাল মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক, মিজমিািজ মাদ্রাসা রোড, হাজেরা মার্কেট, মাদ্রাসা রোড থেকে পাকার মাথায় যাওয়ার পথে মতিন সড়ক, ধনুহাজীরোড, বাতানপাড়া কবরস্থান, বাতানপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ও পাগলাবাড়ী এলাকায় অর্ধশতাধিক অবৈধ মশার কয়েল তৈরির কারখানায় দিন রাত তৈরী হচ্ছে কয়েল ।
সাইনবোর্ড বিহীন এসব কারখানাকে কেন্দ করে সড়কের মোড়ে মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামরা। কারখানার প্রধান ফটকে বাইরে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে রাখে যাতে সহজেই কেউ কারখানায় প্রবেশ করতে না পারে, আর বুজতেও না পারে এখানে কি হচ্ছে ।
তিতাশ গ্যাস, বিদ্যুৎ, বিএসটিআইসহ বিভিন্ন সংস্থার অভিযানের খবর পেয়ে অতি সহজেই মালিক ও শ্রমিকরা কারখানার পিছনের গেট দিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত কারখানা গুলো হলো একলাসের বুশরা ও চমক কয়েল, মিজমিজি হাজেরা মাকের্ট এলাকায় প্রিন্সের, কুইন কয়েল, মাদ্রাসা রোড থেকে পাকার মাথায় যাওয়ার পথে, হারুন@ ইয়াবা হারুনের সোনালী কয়েল, মিজমিজি মাদ্রাসা রোড জহিরের অফিসের সাথে ও হাজেরা মাকেট এলাকায় আনোয়ারের ক্রাউন কয়েল, মাদ্রাসা রোড এলাকায় আসাদের সিভিল ম্যাজিক কয়েল, মাদ্রাসা রোড থেকে পাকার মাথায় যাওয়ার পথে জাহাঙ্গীরের বসুন্ধরা কয়েল, মতিন সড়ক চিশতীয়া বেকারী এলাকায় বাদসার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কয়েল, আলমের ডিকে বস কয়েল, মানিকের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কয়েল, জামানের, হিরো কয়েল, মিজমিজী মেডিকেলের সাথে বজলুর হক কয়েল, ধনুহাজী রোড এলাকায় কামালের পাগলা কয়েল, সামসুর, ভেনিস কয়েল, মিজমিজী বাতানপাড়া কবরস্থান এলাকায় তাজুল ইসলামের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কয়েল, মিজমিজি, বাতানপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অবৈধ মশার কয়েলের কারখানা রয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ১ ও ২ নং ওয়ার্ডে মৌচাক, মিজমিািজ মাদ্রাসা রোড, হাজেরা মার্কেট, মাদ্রাসা রোড থেকে পাকার মাথায় যাওয়ার পথে মতিন সড়ক, ধনুহাজীরোড, বাতানপাড়া কবরস্থান, বাতানপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাগলাবাড়ী এলাকায় সবচেয়ে বেশী কয়েল কারখানা গড়ে উঠেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলেন, অবাধে কয়েল ফ্যাক্টরী গুলো গড়ে উঠার কারণে বিষাক্ত ক্যামিকেল, দুর্গন্ধ ও ময়লা পানির কারনে অনেকের হাপানি, শ্বাসকষ্টসহ নানা বায়ুবাহীত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে । ফলে শ্বাস কষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এলাকায় বসবাস করতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে অনেকদিন যাবৎ ।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, এসব কারখানার তৈরি অবৈধ কয়েলের গুনগত মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা নেই। তাছাড়া বিভিন্ন নামিদামি কারখানার কয়েল অবিকল নকল করে বাজারজাত করছে এসব কারখানা অসাধু মালিক নামধারী চক্র । বিভিন্ন মোড়ক তৈরি করে অবৈধ কারখানায় তাদের নিজেদের তৈরি কয়েল প্যাকেট করে গোপনে বাজার জাত করছে।
এসব নকল কয়েল মানব দেহের জন্য মারত্মক ক্ষতিকর হলেও কোন আইন না মেনে বছরের পর বছর জুড়ে কোন বাধা ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কারকানাগুলো ।
এসব কাখানায় অবৈধ ভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও অসাধু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই চলছে বিরামহীন অপকর্ম । অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা এসব অবৈধ অনুমোদনহীন একাধিক কারখানায় বিভিন্ন সময় আগুন লাগার ঘটনাও ঘটলেও এই চোরচক্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন ।
Discussion about this post