এনএনইউ রিপোর্ট :
লবন কেলেংকারীর তোলপাড়ের মধ্যে এমন কেলেংকারী ধামাচাপা দিতে এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে দৌড়ঝাপ চালাচ্ছে সরকারের ৭ শত কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়া লবন ব্যবসায়ীদের হোতারা ।
আজ সোমবার ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত লবণ মিল মালিক সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মত বিনিময় করতে উপস্থিত হলে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ প্রথমেই জানতে চান লবন আমদানী করার ক্ষেত্রে আপনাদের কার কার বন্ড লাইসেন্স রয়েছে । প্রতিউত্তরে সকলেই তাদের বন্ড লাইনসন্স নাই বলে জানানোর পর এ বিষয়ে আর কোন আলোচনা না করতে অনিহা প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা ।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, আধুনিক যুগে বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। তারা এখন অনেক কিছুই যাচাই বাচাই করে ভালো জিনিস খায়। এখন মানুষ বাজার থেকে খোলা লবণ কেনেনা । কারণ তারা জানে খোলা লবণে বিষাক্ত কিছু থাকতে পারে। তাই মানুষ এখন অনেক সচেতন বিষাক্ত লবণ খায়না। তাই আপনারা যারা লবন ব্যবসা করেন সঠিক পথ অবলম্বন করে ব্যবসা করবেন প্রশাসন আপনাদের পাশে থাকবে ।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ এর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মিল মালিক গ্রুপ সমিতির সভাপতি ও পুবালী সল্ট ইন্ডা.’র মালিক পরিতোষ কান্তি সাহা, সাধারণ সম্পাদক ও জে.এন ব্রাদার্সের মালিক শফিকুল ইসলাম বাবুল, মেসার্স গরিবে নেওয়াজ সল্ট ইন্ডা.’র মালিক কামাল হোসেন, আমা সল্ট ইন্ডা.’র মালিক বিশ্বনাথ সাহা, মেসার্স উত্তরা লবণ কারখানার মালিক দুলাল সাহা, আলী সল্ট ইন্ডা.’র মালিক হুমায়ুন কবির, মেসার্স সাল সামিন ইন্ডা.’র মালিক মোঃ ইউনুছ রনি, মেসার্স সপ্তডাঙ্গা ইন্ডা.’র মালিক মোহন সাহা, সুপার সল্ট ইন্ডা.’র মালিক মোঃ মমিনুর রশীদ ও বিপুল কান্তি সাহাসহ মোট ২০টি কোম্পানির মালিকবৃন্দ ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে কয়েকজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জের অসাধু লবন ব্যবসায়ী চক্রের হোতাদের কারো কোন বন্ড লাইসেন্স না থাকার পরও নানা অসাধু পন্থা অবলম্বন করে বিদেশ থেকে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল লবনের নামে বিদেশ থেকে লাখ লাখ লাখ মেট্রিক টন লবন আমদানী করে সরকারের প্রতিবছর ৭০০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে এই চক্রটি । ফলে একেকটি চালানেই এই চক্রের সদস্যরা কোটি কোটি টাকা আত্মস্যাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে।এই চক্রটি এবার যে কোন মূল্যে লবন কেলেংকারীর বিষয়গুলি ধামাচাপা দিতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছ । এরা কত ভয়ংকর তা অনেকের চিন্তারও বাইরে । এই চক্রটির দেশী বিদেশী লবিং অনেক শক্তিশালী ও ভয়ংকর । এরা প্রতিবাদকারীকে গুম করে ফেলতেও পারে স্বার্থ রক্ষার জন্য ।
বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পাঠানটুলীর ইব্রাহিম গার্মেন্টসের (এক সময়ের তিতাসের ঠিকাদার হিসেব পরিচিত) বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করে এমন লবন আমদানী করে মামলার আসামীও হয়েছিলো বলে জানিয়েছে লবন ব্যবসায়ীদের অনেকেই । পাঠানটুলীর ইব্রাহিম গার্মেন্টসের বিরুদ্ধে এমন মামলার পর আবার সদর উপজেলার ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সেড়কের কাঠপট্টি এলাকার জেমস এ্যাপারেলসের বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করে আরো একটি সিন্ডিকেট একই কায়দায় ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল লবন ডাংইয়ের কাজে ব্যবহারের নামে আমদানী করে রাতের আধারে প্যাকেটজাত করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে যাচ্ছে । শহরের একটি বিশাল অট্টালিকায় জেমস এ্যাপারেলসের মাধ্যমে গড়ে উঠা আরেকটি সিন্ডিকেট একই পন্থায় লবন কেলেংকারী করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে । অবৈধ পন্থায় এই লবন কেলেংকারী করার কারণে জেলা রাজস্ব কর্মকর্তা ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করেই বিরামহীন ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে লবনের ঘৃন্য কর্মকান্ড ।
এক সময়ের টানবাজার পতিতাপল্লী সংলগ্ন সানোয়ারা হোটেলের মালিক ও তার চেলেরা পতিতাপল্লী বন্ধ হয়ে যাবার পর একেবারেই পথে বসে পরে । এরপর এই চোরাই লবনের ব্যবসা করে সোহাগ মাত্র দুই /তিন বছরে ৭০/৮০ কোটি টাকার মালিক বনে যায় ।
যা দেখার কেউ নাই বলে মন্তব্য করেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী ।
Discussion about this post