অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের চলমান অভিযান ‘ইতিবাচক উন্নয়ন রাখবে’ আশা প্রকাশ করে দুর্নীতিবাজদের হুঁশিয়ার করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে সোমবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আপনি যত বড় নেতা, কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী বা ঠিকাদার হোন না কেন, অনিয়ম-দুর্নীতি করে পার পাবেন না।”
তিনি বলেন, “সরকার ইতোমধ্যে সমাজ থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে অভিযান শুরু করেছে। আমি আশা করি এ অভিযান দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখবে এবং অবকাঠামোসহ উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে গুণগতমান নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে।”
১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্ব বসতি দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবস পালিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, “বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে পা রেখেছে। আমরা ২০ তলা ভবন মাত্র ১৩ মাসের মধ্যে নির্মাণ করার সক্ষমতা অর্জন করেছি। কিছু অসাধু লোকের জন্য জাতির এ অর্জন ম্লান হতে পারে না।”
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাজে কঠোর তদারকির তাগিদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলে, বসতি নির্মাণের ক্ষেত্রে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এককভাবে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর এ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থার হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
ছবি: পিআইড
“এসব প্রকল্পের গুণগত মান কতটুকু নিশ্চিত হচ্ছে, প্রকল্পের টাকা কতটুকু সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে- তা কঠোরভাবে মনিটরিং করা জরুরি।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “বিভিন্ন প্রকল্পের অপকীর্তি ও অনিয়ম গণমাধ্যমে প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। কোনো কোনো সময় এসব সংবাদ ‘টক অব দ্য সিটি’ বা ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ পরিণত হয়।
“অনেক সময় ভবনের কাজ শেষ না হতেই ভবনে ফাটল দেখা দেয় বা পলেস্তারা খসে পড়ে। এতে সরকারি কাজের মান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দেয় এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দায় সরকার নেবে না বরং তাদেরকেই তাদের দায় নিতে হবে।”
প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্ব নিতে হবে মন্তব্য করে আবদুল হামিদ বলেন, “প্রকল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি কাজের জন্য কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে প্রকল্পে কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি হলে তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করা যায় এবং দায়ী ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনা যায়।
“কাজের প্রতিটি স্তরে সঠিকভাবে তদারকি হলে রডের পরিবর্তে বাঁশ আর সিমেন্টের বদলে বালি ব্যবহারের গল্প শুনতে হবে না। ছোটখাট ক্রয় ছাড়া সরকারি সব কেনাকাটাই ঠিকাদারের মাধ্যমে হয়।”
ছবি: পিআইড
‘প্রতারক’ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমরা জানি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয়। তবে ব্যবসার নামে প্রতারণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কাজ না করে বা আংশিক কাজ করে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে অশুভ আঁতাত করে বিল নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। অহেতুক বিলম্ব করে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ফায়দা লুটবেন- এ ধরনের মনমানসিকতা পরিহার করতে হবে।”
জনগণের টাকায় বাস্তবায়িত প্রকল্পে কোনো ধরনের আপস ‘বরদাশত করা হবে না’ মন্তব্য করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, “সৎভাবে ব্যবসা করবেন, সরকার আপনাদের পাশে থাকবে এবং সবধরনের সহযোগিতা দেবে।”
অবকাঠামো নির্মাণের সময় পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় রাখারও পরামর্শ দেন আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, “… দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন প্রকৃতির শিল্প-কলকারখানা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান। ফলে উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের ব্যবহারজনিত কারণে উন্নয়নের বাইপ্রডাক্ট হিসেবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের তরল ও কঠিন বর্জ্য; যা এ পৃথিবী, আমাদের পরিবেশ এবং পারিপার্শ্বিকতাকে করে তুলছে দূষিত। এ কারণে শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে।”
এর ফলে মানুষ যেমন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে, তেমনিভাবে অনেক জীবপ্রজাতিও যে এর প্রভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সে কথাও মনে করিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি হামিদ।
ছবি: পিআইড
তিনি বলেন, বিশ্বের শহরগুলো প্রতিবছর ৭ থেকে ১০ বিলিয়ন টন বর্জ্য সৃষ্টি করছে। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তাদের বাজেটের একটি বড় অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে। বিশ্বের তিনভাগের এক ভাগ কঠিন বর্জ্য খোলা আকাশের নিচে স্তূপ করা হচ্ছে। এর এক পঞ্চমাংশ রিসাইক্লিং এবং কম্পোস্টিং এর আওতায় আসছে। ৮০ শতাংশ তরল বর্জ্য সরাসরি জলাধারে ফেলা হচ্ছে। বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতি বছর এক লক্ষ সামুদ্রিক প্রাণি মারা যাচ্ছে এবং প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন মানুষের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে দূষণ।
“তাছাড়া ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারে প্রতি বছর চার থেকে দশ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এজন্য বর্জ্যের নেতিবাচক প্রভাব থেকে মানবজাতি ও প্রাণিসম্পদকে রক্ষা করতে আমাদেরকে থ্রি আর নয়, ফাইভ আর, অর্থাৎ রিথিংক, রিফিউজিং, রিইউজিং, রিডিউসিং এবং রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে।”
এবারের বিশ্ব বসতি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার’কে অত্যন্ত ‘সময়োপযোগী এবং মানব সভ্যতা ও মানব অস্তিত্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করেন রাষ্ট্রপতি।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার বক্তব্য দেন।
(বিডি নিউজ)
Discussion about this post