পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
হাট-বাজারে কাঁচামাল বিক্রি করে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে স্বপ্ন বুনেছিলেন এমদাদুল হক নামের এক পিতা। স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে শিক্ষিত হবে, চাকরি নিয়ে অসচ্ছল পরিবারের হাল ধরবে। স্বপ্নের শুরুটাও হয়েছিল বেশ।
বড় ছেলে শেখ ফরিদ (২২) নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিস-সহকারী পদে চাকরি পায়। এতে তার পরিবারে আশার আলো দেখা দেয়। মাস সাতেক যেতে না যেতেই সেই আশার আলো ঘোর অন্ধকারে পরিণত হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ মসজিদ বিস্ফোরণের আগুনে পুড়ে ৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন শেখ ফরিদ।
গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইন্সটিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।
তার অকাল মৃত্যুতে পরিবারের সব স্বপ্ন ভেঙে যেন চুরমার হয়ে গেছে।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে শেখ ফরিদ। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় সে। মাস সাতেক আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে নিয়োগ পায় সে। নিয়োগ পেয়ে কর্মস্থলে থেকেই সে চাকরি করে আসছিল।
গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ পড়তে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয় সে। এতে তার শরীরের প্রায় সবটুকুই পুড়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইন্সটিটিউটে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার বিকালে মারা যায় সে।
শুক্রবার সকাল ৯টায় পাকুন্দিয়া উপজেলার চরআলগী উত্তরপাড়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা ও সকাল ১০টায় চরপাড়াতলা ফকিরবাড়ী গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
শেখ ফরিদের পিতা মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘ভিটেমাটি আর থাকার মতো ভাঙাচোরা একটা ঘর ছাড়া কিছুই নেই। হাটের দিন বাজারে কাঁচামাল বিক্রি করে যা লাভ পাই, তা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলে। শেখ ফরিদ চাকরি পাওয়ায় অভাবের সংসারে আশার আলো দেখা দেয়। কিন্তু তার অকাল মৃত্যুর সঙ্গে নিমিষেই সব স্বপ্ন ভেঙে গেল। ছোট-ছোট চার ছেলেমেয়ে নিয়ে আবারো আমি অন্ধকারে পড়ে গেলাম।’
কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।।
এ সময় তিনি আরো বলেন, শেখ ফরিদের অকালে যাওয়ায় যেমন কষ্ট সইতে পারছি না। অপরদিকে ছোট ছেলেমেয়েগুলোকে নিয়ে কীভাবে সামনের দিনগুলো কাটবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
সরকার যেন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া শেখ ফরিদের অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়। পর্যাপ্ত সাহায্য সহযোগিতা করে সেজন্য সরকারের সুদৃষ্টি চেয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলে নিহতের পরিবারকে সহযোগিতা করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
Discussion about this post