এনএনইউ ডেক্স :
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে ১২ মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করেন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়টি টেনে সেলিম ওসমান বলেন, তাদের সনদ বাতিল হয়েছে এটা লজ্জার বিষয়। হয়তো সনদ দেওয়ার আগে আমাদের ভুল ছিল। যারা এখনো ভুয়া সনদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন তাদের বলছি দ্রুত নিজের উদ্যোগে বাতিলের আবেদন করেন। না হলে রাজাকার হতে বেশি ধিক্কার দেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জে যে সব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে তাদের স্ব উদ্যোগে সনদ বাতিল করতে আহবান জানানোর পর কেউ তা অগ্রহ্য করলে অন্যথায় তাদেরকে ‘পাকিস্তানিদের মত ঘাড় ধরে বের করার’ ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমান। ।
১৫ ডিসেম্বর রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাব প্রাঙ্গণে মুক্তিযোদ্ধাদের শ্যূটিং প্রতিযোগীতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও রাইফেল ক্লাবের সভাপতি জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার নূরুল হুদা, সদর উপজেলা কমান্ডার জুলহাস আহমেদ, রাইফেল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খালেদ হায়দার খান কাজল প্রমুখ।
সেলিম ওসমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা কখনো মরে না মরবেও না। মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধাদের জাতিয় পতাকা ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়ে এটিই একটি বড় সম্মানের। আমি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে প্রত্যেক স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে একজন মুক্তিযোদ্ধা রাখার আহবান করছি।
তিনি আরো বলেন, নানা কারণে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সবাই হয়তো সমাজে একই স্তরে নেই। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কোন দল নাই। আমাদের একটাই পরিচয় আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে কাজ করছি। আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। স্বাধীনতার পর আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর পায়ে অস্ত্র জমা দিয়ে শেষকে উন্নয়ন করার শপথ করেছি। আমরা সেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা তখন কোন সনদ বা ভাতার আশা করি নাই। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের মা বাবার বিয়ে হয়নি তারাও মুক্তিযোদ্ধার সনদের জন্য আবেদন করে তারাই আবার ভাতা নিয়ে হৈচৈ করে। গত ২১টি বছর একটি চক্র ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করেছে। স্বাধীনতার ঘোষককে পরিবর্তনের চেষ্টা করেছে। রাজাকারের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছে। সেই সকল লোকদের আপনারা আশেপাশে রাখবেন না। ছদ্মবেশে মোস্তাক আহম্মেদ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ছিলেন। ঠিক তেমনি ভাবে এরাও ছদ্মবেশে আমাদের সাথে মিশে থাকে আপনারা সে দিকে লক্ষ্য রাখবেন। বঙ্গবন্ধুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করেছেন। মৃত্যুর পর আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হয়, হয়তো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একই রকম কবর করা হবে। এতে করে যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধুর সৈনিক মুক্তিযোদ্ধারা বেচে থাকবেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা সকল মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হলে যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে তাদেরকে প্রতিহত করা আরো সহজ হবে। আগামী জানুয়ারী মাসের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সেখান আমরা সকলে একত্রিত হবো। আমরা আলোচনা করবো। তাহলেই ভুয়াদের চিহ্নিত করা সহজ হবে। ওই অনুষ্ঠানের জন্য আপনারা এক কপি করে ছবি আর ১০টাকা করে দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করবেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, দিনে দিনে জীবিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আমি আপনাদের প্রতি অনুরোধ রাখবো প্রতি উপজেলা এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে ছবি তুলে সেগুলো উপজেলার কার্যালয় গুলোতে টানিয়ে রাখার অনুরোধ করছি। মুক্তিযোদ্ধাদের চেহারা গুলো আমাদের ধরে রাখতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার গড়তে কাজ করে যাচ্ছি। আপনাদের সকলের উচিত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানানো। কেন আমরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে ছিলেন। আপনারা কে কোথায় কিভাবে যুদ্ধ করেছেন। কেন আমরা সেচ্ছায় শহীদ হতে গিয়ে ছিলাম, যারা বেচে ফিরেছি তারা গাজী হয়েছি। এসব কিছুই আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে হবে। যাতে করে আলবদররা বর্তমান প্রজন্মের কাছ থেকে কোন সুযোগ না নিতে পারে। পরাজিত শক্তিরা এখনো শেষ হয়নি যায়নি। ওরা মীর জাফর ও মোস্তাকদের মত আমাদের সাথে মিশে আছে। এদের সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্ম সচেতন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর শততম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা আগামী মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী পালন করবো। বন্দরে দলমত নির্বিশেষে সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা এমন ভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন করবো যাতে করে সারা বাংলাদেশ বন্দর উপজেলাকে অনুসরন করে। আপনারা সেই ভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তাদেরকে জানানোর জন্য অনুরোধ করছি।
Discussion about this post