এনএনইউ রিপোর্ট :
অসামজিক কার্যকলাপের অভিযোগে জেলার বন্দর উপজেলার দক্ষিন কলাবাগ এলাকায় তিন নারীকে অমানুষিক নির্যাতন করার ঘটনা তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। যৌনকর্মী অভিযোগে তিন নারীকে অমানুষিক নির্যাতন ছাড়াও চুল কেটে ফেলা, গাছের সাথে বেধে রাখা ও সবশেষ বাড়ীঘরে লুটপাটের ঘটনায় ধিক্কারের ঝড় উঠেছে । অনেকের অভিযোগ তিন নারী যদি যৌনকর্মী হয়েই থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেতো । পুলিশ প্রশাসন আছে তাদেরকে অবহিত করা যেতো । আইন হাতে তুলে নিয়ে এমন ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ড চালালো কারা ?
এমন প্রশ্নের খোজে অনুসন্ধানে বন্দর দক্ষিণ কলাবাগান নির্যাতিত তিন নারীর একজন ফাতেমার বাড়ি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, ঘরের প্রতিটি আসবাব ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে আছে। দেখলে মনে হবে নির্যাতিত ফাতেমার বাড়ির উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। পুরো বাড়ি ধ্বংস স্তুপে পরিণত। ঘরের মধ্যে আগুনে পোড়া আসবাবপত্রও লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া ঘরের মধ্যে মূল্যবান কোনো আসবাবপত্র নেই। বাড়ির পাশের খালের পাশে গিয়ে দেখা যায় ফাতেমা বেগমের অধিকাংশ সাংসারিক জিনিসপত্র খালে পড়ে আছে। ফাতেমা ওরফে ফতেহ’র ছেলে সোহাগের সঙ্গে কথা হয় ওই প্রতিবেদকের।
সোহাগ জানায়, ‘গতকাল যে ঘটনাটি ঘটেছে তা পূর্ব পরিকল্পিত। আমাদের বাড়িতে লুটপাটের উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনায় আমার পুরো বাড়ি লুটপাট করা হয়েছে। ঘরে থাকা সাড়ে ৬ লাখ টাকা লুট করা হয়েছে। ঘরে থাকা সকল জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। আমার বাড়ি তছনছ করে ফেলেছে।’ অসামাজিক কাজের সাথে সংযুক্ত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে সোহাগ আরো বলেন, ‘হ্যা, আমার মা কিছু অসামাজিক কাজে যুক্ত ছিলো। তবে সে এসব কাজ ছেড়ে দিয়েছে। আমি স্বীকার করি সে অপরাধী। তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য প্রশাসন রয়েছে। কিন্তু গতকাল তার সঙ্গে যা হয়েছে তা খুবই খারাপ। সে যখন অপরাধ করেছে তখন তো কেউ কিছু বলেনি, করেনি। যখন সে কাজ ছেড়ে দিয়েছে তখনই এ ঘটনা কেন?
গত শনিবার ১৬ ফেব্রুয়ারীর ঘটনার মূলে ছিলো একই এলাকার তিন ব্যক্তি রয়েছেন বলেও অভিযোগ সোহাগের। তারা হলেন, একই এলাকার পোল্ট্রি ফার্মের মালিক সুমন, মুদি দোকানদার মুরাদ ও জীবন।
দক্ষিণ কলাবাগান খালপাড় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফাতেমা বেগম দীর্ঘদিন যাবত সুদের ব্যবসা করে আসছিলেন। পরবর্তীতে কিছু অসামাজিক কাজে লিপ্ত হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত একজন এলাকাবাসী জানান, ফাতেমা বেগম দীর্ঘদিন যাবত অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকলেও তার বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রতিবাদ করা হতো না।
এলাকার প্রভাশালী অনেকেই ফাতেমা বেগমের থেকে অর্থ নিতেন। যার ফলে এতোদিন ফাতেমার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তবে ১৫ দিন আগে ফাতেমা বেগমকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হয়। সে সময় তিনি ওয়াদা করেন তিনি আর এসব করবেন না।
তিন নারীকে অমানুষিক নির্যাতনের পর চুল কেটে গাছের সাথে বেধে ও লুটপাটের ঘটনায় বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেটকে বলেন, পতিতাবৃত্তির মতো কোন বিষয় থাকলে থানায় অবহিত করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতাম। এভাবে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। এর জন্য পুলিশ আছে, প্রশাসন আছে। তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনায় আহতের উদ্ধার করে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে তাদের বক্তব্য শুনে তাদের অভিযোগ অনুযায়ী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Discussion about this post