শহরের র্যালী বাগান বস্তিতে মাদকের হাট হিসেবে পরিচিত এলাকার সকল মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অসংখ্য মামলা পরিচালনা করেন এড. লিজা । লিজার সাথে সকল মাদক ব্যবসায়ীদের ছিলো সখ্যতা। এই মাদকের হাটেই টানবাজারের র্যালী বাগান বস্তিতেই বসবাস ছিলো এডভোকেট লিজার । মাদক ব্যবসায়ী চক্র পুলিশের কিছু অসাধু সদস্যদের ম্যানেজ করেই চারিয়ে যাচ্ছিলো কারবার । পুলিশ আর আইনজীবীদের সহায়তা থাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলতে পারতো না । লিজার স্বামী মামুন, দেবর কানা মাসুদ মাদক ব্যবসার মূল হোতা । এমন অভিযোগ তুলেছে নিহত মাদক নির্মূল কমিটির এক সদস্য আরজু বেগমের (৪৫) পরিবারসহ বস্তির অনেকেই।
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাড়া থেকে মন্ডলপাড়াগামী একটি চলন্ত রিক্সায় দুইজন নারী চিৎকার করে কাঁদতে দেখে শহরবাসী অনেকই প্রশ্ন করে এমন কান্নার কারণ কি ? উত্তরে মাকে মেরে ফেলেছে এডেভোকেট লিজা । কোথায় ? র্যালী বাগানে । এমন খবর পেয়ে শহরের অনেকেই হাজির হয়ে দেখতে পায় এডভোকেট লিজার পক্ষের লোকজন আরজু বেগমের (৪৫) লাশ সামনে রেখেই মারামারি চালিয়ে যাচ্ছে । খবর পেয়ে ছুটে আসে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশ ।
শহরের টানবাজারে মাদক বিরোধী সভা চলাকালীন সময়ে মাদক ব্যবসায়ীরা বৈদ্যুতিক শক দিয়ে আরজু বেগম (৪৫) নামের এক নারীকে হত্যা করার অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার। দক্ষিণ র্যালি বাগানের মো. আক্তারের স্ত্রী ও মাদক নির্মূল কমিটির এক সদস্য বলেও জানায় র্যালী বাগানের লোকজন।
এমন ঘটনার ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ অ্যাডভোকেট লিজা তার বোন অ্যাড আসমা, হোসনা ও সর বানুসহ ৫জনকে আটক করেছে সদর মডেল থানা পুলিশ।
নিহত আরজু বেগমের লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছেন পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেল ৪ টার । টানবাজার দক্ষিণ র্যালি বাগানে এই ঘটনা ঘটে। ওই সময় মাদক বিরোধী সভা চলছিল। সভায় হামলা চালিয়ে ওই হত্যা করা হয় বলে জানায় উপস্থিত অনেকেই ।
তাদের আটক করার সময় পুলিশের সাথে সামান্য ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে অভিযুক্তদের শেল্টারে থাকা মাদকের ডিলার বিল্লাল বাহিনীর। তারা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে আটকদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়।
র্যালী বাগান বস্তি দীর্ঘদিন যাবৎ শহরের মাদকে মাদকের হাট হিসেবে পরিচিত। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে একটি মাদক নির্মূল কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির একজন সদস্য হলেন আরজু বেগম। কমিটির তৎপরতায় বাগন থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের বিতাড়িত, গ্রেফতার ও অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয় ইতোপূর্বে । এরপরও চলছিলো মাদকের কারবার । বছর দুই আগে র্যালি বাগান এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাড়ে চার মণ গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ীদের গডফাদার বাদল ও ফরিদকে গ্রেফতার করে। এদেরকে জামিনে ছাড়িয়ে আনেন অ্যাডভোকেট হামিদা ওরফে লিজা তার বোন অ্যাড আসমা। কিন্তু মাদক নির্মূল কমিটি তাদেরকে বাগানে অবাঞ্চিত ঘোষণা করায় তারা কেউ আর এখানে ঢুকতে পারেনি। তবে, তাদের অ্যাডভোকেট হামিদা ওরফে লিজা তার বোন অ্যাড আসমা বাদল ও ফরিদকে বাগানে পুনরায় পুনর্বাসন করতে উঠে পড়ে লাগেন।
স্থানীয়রা আরও জানায়, এই এলাকার সমস্ত মাদক ব্যবসায়ীদের জামিনে ছাড়িয়ে আনার কাজটিই করে থাকেন অ্যাড. হামিদা ওরফে লিজা তার বোন অ্যাড. আসমা । তাদের সাথে সহযোগিতা করেন তাদের আরেক বোন হোসনা। মূলত এ নিয়েই মাদক নির্মূল কমিটির সাথে তাদের দ্বন্দ্ব চলছিলো। আর এই দ্বন্দ্বের জের ধরে এদিন মাদক নির্মূল কমিটির সভাতে তারা স্বদল বলে হামলা চালায়। এসময় হামলাকারী হামিদা ওরফে লিজা তার বোন অ্যাড আসমা, হোসনা, সর বানুসহ তাদের লোকজন আরজু বেগমকে আটকে গায়ে পানি ঢেলে দিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
এদিকে খবর পেয়ে সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদের সাথে বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন অভিযুক্তদের লোকজন। পুলিশ তাদেরকে আটকের চেষ্টা করলে তারা এতে বাধা দেন। ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। এর মধ্য দিয়ে পুলিশ হামিদা ওরফে লিজা তার বোন অ্যাড আসমা, হোসনা, সর বানুসহ ৫ জনকে আটক করে।
অপরদিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে গেলে এতে বাধা দেয় মাদক নির্মূল কমিটির লোকজন । তারা মরদেহটি পুজি করে বিক্ষোভ করার প্রস্তুতি নেন । তবে, পুলিশ তাদেরকে নিবৃত করে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
সদর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) জয়নাল আবেদীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দুই পক্ষের মারামারির ঘটনায় আরজু বেগম নামে একজন নারী বৈদ্যুতিক শকে নিহত হয়েছেন। নিহত আরজু বেগমের লাশ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে । বলা হচ্ছে, তাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে ।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় নিহতের পরিবার এডভোকেট লিজাসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দিচ্ছে । অভিযোগ হাতে পেয়ে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে । লাশ ময়না তদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রয়েছে । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকল ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ ।
Discussion about this post