এনএনইউ রিপোর্ট :
বাঙালি জাতির জীবনে আজ এক আনন্দের দিন। একই সাথে বিশাল কস্ট লুকিয়ে আছে বাঙালির মনে । এমনি এক দিনের প্রতীক্ষায় কেটেছে বাঙালির হাজারো বছর। বহু কাঙ্ক্ষিত সেই দিনটির দেখা মিলেছিল ইতিহাসের পাতায় রক্তিম অক্ষরে লেখা এক সংগ্রামের শেষে ১৯৭১ সালে, ১৬ ডিসেম্বর।
ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ৪৭ বছর আগের এদিনে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হাতের অস্ত্র ফেলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল বিজয়ী বীর বাঙালির সামনে। স্বাক্ষর করেছিল পরাজয়ের সনদে। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়ের দিনটিতে আনন্দের পাশাপাশি বেদনাও বাজবে বাঙালির বুকে। বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় জাতি স্মরণ করবে জানা-অজানা সেসব শহীদকে। যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল ভোগ করে পেরিয়ে গেল ৪৭ বছর। কিন্তু যারা সেই সংগ্রামের উত্তাল দিনে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে হাত মিলিয়েছিল ঘাতক পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে, সেই রাজাকার-আলবদরদের বিচার না করার কলঙ্ক যেন অনেকটাই ম্লান করেছিল জাতির এই শ্রেষ্ঠ অর্জনকে। দিনে দিনে গণদাবিতে পরিণত হয়ে ওঠা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ অবশেষে শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার মাস ২০১০ সালের মার্চে।
মিরপুরের কসাই বলে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করায় সেই কলঙ্কের দায় মুক্তির সূচনা ঘটেছে । জাতির বিজয়ের আনন্দে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা । তবে জাতীয় সংসদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে বিদ্যমান অস্থির পরিস্থিতি এবং যুদ্ধাপরাধের সাজা কার্যকর করার পর থেকে সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের সহিংস তৎপরতা সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। এখনো অব্যাহত আছে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের আস্ফালন ।
বিজয় উৎসব, নির্বাচন, শিল্প কারখানায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃস্টি করতে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র আবার চক্রান্ত করা কালে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন শতাধিক জামায়াত শিবিরকর্মীকে গ্রেফতার করে শনিবার ১৫ ডিসেম্বর আদালতে পাঠায় ।
নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন পরিস্থিতিতেই পালিত হচ্ছে এবার বিজয় উৎসব।
স্বাধীনতা অর্জিত হলেও গত ৪৭ বছর জাতির চলার পথ মসৃণ ছিল না কখনো । মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়া, দারিদ্যর ও দুর্নীতি থেকে মুক্তির সংগ্রামের পাশাপাশি একইভাবে চলেছে সামরিক শাসন, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম, যুদ্ধাপরাধের বিচার, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ আন্দোলন । শত বাধা-প্রতিবন্ধকতাতেও হতোদ্যম হয়নি এ দেশের মানুষ। হারায়নি সাহস। লাল-সবুজ পাতাকা উড়িয়ে অব্যাহত আছে বাঙালির এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত রেখেছে ।
আজ ১৬ ডিসেম্বর প্রথম লগ্ন রাত ১২ টা ০১ মিনিট থেকেই নারায়গঞ্জের পথে নামবে উৎসবমুখর মানুষ। শহীদদের স্মরণ করে বিনম্র শ্রদ্ধায় নারায়ণগঞ্জের মানুষ ভরিয়ে দেবে ফুলে ফুলে। সব বয়সী অগণিত মানুষ সমবেত হবে চাষাড়াস্থ স্মৃতিস্তম্ভে। শ্রদ্ধার ফুলে ঢেকে যাবে স্তম্ভের বেদি।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথম লগ্ন রাত ১২-০১ মিনিটের অনুস্টানের পরিবর্তন করে সূর্যদয়ের শুরুতেই পুষ্পার্ঘ অর্পনের সিদ্ধান্ত নিলেও জেলাবাসী মধ্য রাতেই নানা রঙ্গে ঢাকডোল পিটিয়ে চাষাড়াস্থ বিজয়স্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায় ।
লাল-সবুজ পতাকা উড়বে আজ বাড়িতে ও গড়িতে, সব প্রতিষ্ঠানে। মাথায় থাকবে পতাকার রঙে রাঙা ফিতা। পতাকার রঙের পোশাকও থাকবে উৎসবে শামিল অনেকের পরনে। পতাকায় সজ্জিত করা হবে শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ। আজ সরকারি ছুটি। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবনে করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, শিশুসদন ও কারাগারগুলোতে পরিবেশন করা হবে বিশেষ খাবার।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন ।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো: রাব্বি মিয়া , পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ, জেলা সিভিল সার্জন এহসানুল হক ছাড়াও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদদের স্মরণ করে বিনম্র শ্রদ্ধায় পুস্পস্তবক অর্পন করছেন।
Discussion about this post