নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
অপরাধীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের অপরাধীদের আস্ফলনে অতিষ্ট হয়ে পরেছে নারায়ণগঞ্জবাসী । কোথায় নেই অপরাধীরা ? প্রতিটি পাড়া মহল্লায়, শহরের প্রতিটি এলাকায় মাদক,, জুয়ারী, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যুসহ সকল ধরণের অপরাধীরা যেন আখড়া বাণিয়ে যার যার মতো করে অপরাধ চালিয়েই যাচ্ছে । অপরাধদের দ্যৗড়াত্ম যেন দিন দিনে বেড়েই চলেছে ! নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ অপরাধীদের দৌড়াত্মের কাছে যেন হার মানতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে ।
নিজ নিজ ঘর থেকে বেড়িয়ে ই প্রথমেই মাদক ব্যবসাীদের দৌড়াত্ম, তারপর পারিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য, কর্মক্ষেত্রে নানা ঝক্কি ঝামেলা সহ্য করে ফের বাড়ি ফিরতেই দেখা যায় আবারো মধ্যরাত পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের প্রকাশ্য বেচাকেনা সহ্য করতে হচ্ছে মুখ বন্ধ করেই । কোথায় নেই অপরাধীরা ? এমন প্রশ্ন প্রত্যেক শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের । অপরাধীদের ফিরিস্তি টানতে গিয়ে প্রথমেই দেখা যায় নারায়ণগঞ্জের গুটি কয়েক নেতা এমন নৈরাজ্যের পিছনের কলকাঠি নেড়ে যাচ্ছেন অনবরত । এ যেন এক ভীতিকর পরিস্থিতি । কেউ মুখ খুলতেও সাহস করে না অপরাধীদের বিরুদ্ধে । কোন গণমাধ্যমও স্বচ্ছভাবে কাজ করতে পারে না অপরাধীদের নানা অপকৌশলের কারণে । অপরাধীদের নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান করে জানা যায়, দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জের শহরের কয়েকটি স্থানে প্রকাশ্যে রমরমা জুয়ার আসর চালাতো বিশেষ পেশার নামধারী কয়েকজন নেতা । এই জুয়ার বিরুদ্ধে হাজারো প্রতিবাদ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় নাই । কেন জুয়া বন্ধ করা যায় নাই ? প্রশ্নের উত্তরে পাওয়া যায়, জুয়ার আসর থেকে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি কামরুল সবশেষ দুই লাখ টাকা প্রতিমাসে মাসোয়ারা নিতো । যা প্রকাশ্যেই দেখা গেলেও বিশেষ পেশার লোকজনের নানা চোখ রাঙ্গানী ও ওসির ক্ষমতায় মামলা দিয়ে জেল খাটানোর ভয়ে কেউ মুখ খুলতো না ।
এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দুটি বিশেষ ক্লাবের সভাপতি এম সোলায়মান শহরের টানবাজারের বিদেশী কায়দায় অবিরাম জুয়ার আসর চালাতো । এই জুয়ার আসর থেকে প্রতিদিন আয় হতো কয়েক লাখ টাকা । শহরের বিশাল দুটি জুয়ার আসর পুলিশ সুপার হারুনের কঠোর অবস্থানের কারণে গুটিয়ে দিলেও এখনো শহরের কয়েকটি এলিট ক্লাবে জুয়া মদের আখড়া চলমান রয়েছে । এই এলিট ক্লাবে ২০ লাখ টাকায় সদ্য সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন সদর থানার প্রত্যাহারকৃত ওসি কামরুল । এই ওসি কামরুল ও আরেকজন ওসি সমমান জেলায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা নিজেরাই এলিট ক্লাবের বিশাল মদের চালান প্রতিনিয়ত: পুলিশী নিরাপত্তা দিয়ে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসেন বলে জেলা প্রশাসনের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায় ।
জুয়ার পুরো চক্রটি রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছে বলেও চাউর আছে শহর জুড়ে ।
জুয়ার কয়েকটি আসর গুটিয়ে দেয়ার পর নারায়ণগঞ্জের তেল চোরদের বিরুদ্ধে পুলিশী অবস্থান নেয়ায় একটি চক্র নাখোশ হয়ে উল্টো পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে । তেল চোর চক্রের হোতাদের ভাষ্য থেকে জানা যায়, ফতুল্লার তেল চোর চক্রের হোতা ইকবাল, রহমতউল্লাহ ভান্ডারি, আফসু, পাগলার মেয়ের জামাই ইব্রাহীম, সাবেক এমপি কবরীর ক্যাডার ও পঞ্চবটি ডালডা রোডের হাবিবুর রহমান মুন্সীর ছেলে পাভেল, পঞ্চবটির কোটিপতি বাবু, নূরা সেক্রেটারীর ভাই আবু সালাম, যমুনা ডিপো সংলগ্ন তিতাস মার্কেটের দোকানি ও আলেকের ছেলে রুবেল, একই এলাকার সরদার বাড়ির সাবেক যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম হিরোসহ পুলিশের হাতে আটক রুবেল চৌধুরী, কামাল হোসেন, লোকমান হোসেনসহ অনেকেই তেলচুরি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন । ফতুল্লা ছাড়াও সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জের তেলচোর চক্র আরো বেশী মাত্রায় ভয়ংকর অবস্থান গ্রহণ করে রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে অপরাধ সাম্রাজ্য ।
প্রতিটি পাড়া মহল্লায় মাদকের রমরমা ব্যবসা চললেও মাদক ব্যবসায়ীরা কোন না কোন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতার শেল্টারে চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের পাইকারী কারবার । রাজনৈতিক মঞ্চে সকল নেতারাই মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষনা দিলেও অনেক নেতা রাতের আধারে মাদকের গডফাদারদের সাথে সখ্যতা রেখে মাদকের ভাগভাটোয়ারার হিস্যা ঠিকই গ্রহণ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে । শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অবৈধ পলিথিন ব্যবসা । কি করে চলছে এই ব্যবসা ? এমন প্রশ্ন অনেকের মুখে উচ্চারিত হলেও সকলেই জানেন, জেলা প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু চক্র, পুলিশের কিছু অসাধূ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে নিষিদ্ধ পলিথিনের গডফাদার বাবুল ষ্টোর, জালাল এন্টারপ্রাইজ, সাগরের মালিকানানধীন আজমীরী এন্টারপ্রাইজ, সাকিল এন্টারপ্রাইজসহ শহরের দিগু বাবুর বাজারের অঞ্জন, সিদ্ধিকসহ চারটি নিষিদ্ধ দোকান, খানপুরের বৌ বাজারের পলিথিনের কারখানার মালিক সবুজের কারখানা ও দোকান, নয়ামাটির শ্যামা সুন্দর সাহা দোকান ও কারখানা, টানবাজারের রাজিব কারখানা, লিটনের কারকানা, এক্সপোর্ট ব্যবসায়ী বাদল সাহা অবৈধ কারখানা, জে জে পলি ফ্যাক্টরীর লোকমানের কারখানা, সদর উপজেলার নাগবাড়ী এলাকার কারখানা, জালকুড়ি এলাকায় চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ কর্মকান্ড ।
এই চক্রটির বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস করে না । কারণ এদের সাথে রয়েছে প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তারা । সোহাগ ও বাবুল জেলার প্রতিটি নিষিদ্ধ পলিথিন কারবারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা উত্তোলন করে প্রশাসনের টেবিলে টেবিলে হস্তান্তর করে যাচ্ছে । এই নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবসায়ীদেরকেও নানাভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতারা ।
শহরের ফুটপাত থেকে কারা চাঁদা নেয় ? কি কারণে উচ্ছেদ হয় না এই অবৈধ দখলদারদের তা সকলের অজানা নয় । কোটি কোটি টাকার প্রতিমাসে চাঁদার ভাগবাটোয়ারা অনেক রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে যাবার কারণে ভীতিকর পরিস্থিতির মাঝেও কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না ।
পরিবহণ সেক্টরের নৈরাজ্য কেউ কোন ভাবেই থামাতে পারে নাই । কারণ নগদ টাকার খেলামেলা । শ্রমিক ও পরিবহণ মালিকরা ঠিক মতো টাকা না পেলেও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে প্রতিদিন, প্রতি সপ্তােহ ও মাস শেষে বিশাল চাঁদার ভাটোয়ারা পৌছে দিতে বাধ্য য়ে পরিবহণ সেক্টরের গডফাদাররা । কোন কোন নেতার সহধর্মীনী নিজেরা গুনে গুনে চাঁদার টাকা গ্রহণ করেন বলেও চাউর রয়েছে শহর জুড়ে । সিকি নেতা, পাতি নেতা, পোলাপান নেতাসহ অনেকের হাতেই পৌছে যায় পরিবহণের বিশাল চাঁদা । এ ছাড়াও প্রশাসনের অসাধু কয়েকজন কর্মকর্তা মাস শেষে বিশাল মাসোয়ারা আদায় করেন পরিবহণ সেক্টরের গডফাদারদের কাছ থেকে । জেলায় অসংখ্য পরিবহণ থাকলেও কোন একটি পরিবহণও আইন মেনে পরিবহণ ব্যবসা না করার সুযোগ নিয়ে জেলা প্রশাসন, বিআরটিএ, ট্রাফিক ও স্থানীয় অপরাধী চক্র লুটপাট করে যাচ্ছে পরিবহণ সেক্টরকে । এদের বিরদ্ধে মুখ খুলতে যেমন সাহস করে না কেউ তেমনি গণমাধ্যমকর্মীরা নানাভাবে হয়রানী, হুমকি ধমকির কারণে গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয় না অপরাধীদের নানা নির্লজ্জ কর্মকান্ড ।
এরা কতটা ভয়ংকর তার সামান্য নমুনা হলো ঃ সম্প্রতি শহরের ঐতিহ্যবাহী বোস কেবিন হোটেলে কয়েকটি ডিম কিনে পরিবহণ সেক্টরের এক গডফাদার এক হেলপারকে দিয়ে ভাজতে পাঠায় । বোস কেবিনের বর্তমান পরিচালক তারক বোস কোন অবস্থাতেই ডিম ভেজে দিবেন না বলে জানিয়ে দেন । এমন ঘটনায় তাৎক্ষনিকভাবে হামলার শিকার হয় হোটেলের কর্মচাীরা । এতেও ক্ষান্ত হয় নাই পরিবহণ সেক্টরের নানা অপরাধের হোতারা । ডিম ভেজে না দেয়ার ক্ষোভ থেকে কৌশল অবলম্বন করে জেলা প্রশাসনের ম্যজিষ্ট্রেট পাঠিয়ে চা তৈরীতে ব্যবহৃত পানিতে ময়লা থাকার অপরাধ দেখিয়ে দুই লাখ টাকা জরিমানা করায় পরিবহণ সেক্টরের এক গডফাদার । এমন ঘটনায় শহরের অনেক অভিজ্ঞজনের মন্তব্য করে বলেন, জেলা প্রশাসন ও অপরাধীদের যোগসাজস কতটা এতেই প্রমাণিত হয়েছে ।
শহরের লবন কেলেংকারী, গম কেলেংকারী , সূতা কেলেংকারী, হোটেল রেস্তোরাঁর নৈরাজ্য, ভূমি অফিস গুলোতে নৈরাজ্য, সরকারী হাসপাতালসহ সেবা সংস্থার কর্মকর্তা কর্মচারীদের নানা অপরাধ কর্মকান্ড যেন এক সূতোয় বাধা ।
সকল অপরাধীরাই রাতের আধারে ক্ষমতাসীন দলের অসাধু নেতা ও অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই চালিয়ে যাচ্ছে অপকর্ম ।
Discussion about this post