এনএনইউ রিপোর্ট :
মনোনয়ন যুদ্ধ শেষ হলেও এবার লড়াই হবে ভোটের মাঠে । নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচটি নির্বাচনী আসনে অনায়াসেই এবার জয়ের মালা পরবে কেউ কেউ। আবার নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিতে কোন কোন প্রার্থীর মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও শেষ রক্ষা হবে কি না তা নিয়ে চলছে চুরচেরা বিশ্লেষন।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে শাসক দল আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে চুড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন পাঁচ সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর, নজরুল ইসলাম বাবু, লিয়াকত হোসন খোকা, শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমান।
অপরদিকে বিএনপি নেতৃত্বধীন ঐক্যফ্রন্টের পাঁচ নতুন প্রার্থী কাজী মনির, নজরুল ইসলাম আজাদ, আজাহারুল ইসলাম মান্নান, মুনীর হুসাইন কাশেমী ও এস এম আকরাম।
নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি নির্বাচনী আসনের মধ্যে রূপগঞ্জে নৌকার প্রার্থী গাজী গোলাম দস্তগীরের রয়েছে নিজ দলের চরম বিরোধ। এই আসনে গাজী গোলাম দস্তগীর জয়ী হতে হলে সকল পক্ষকে একত্রিত করে জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরের সাথে ভোটের মাঠে লড়াই করতে হবে।
আড়াইহাজার উপজেলায় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর বিরোধী নিরব ভোটারদের সংখ্যা অনেক। এই আসনে নানা ভাবেই নির্বাচনে কাঁচা প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদ। বিএনপির বিদ্রোহী পক্ষকে সাথে নিয়ে ভোটের মাঠে নামতে পারলে টনক নাড়াতে পারবে সংসদ সদস্য বাবুকে। বিএনপির সকল পক্ষ একত্রিত না হলে ধানের শীষের ভরাডুবি অপেক্ষা করছে আজাদের জন্য।
সোনারগাঁ (না.গঞ্জ-৩) আসেন মহাজোট প্রার্থী সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাকে এবার ভোটের মাঠে লড়াই করতে হচ্ছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এতো সহজে বিনা ভোটে নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিতে পরছেন না তিনি। এবার লিয়াকত হোসেন খোকার বিপরীতে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত কোনভাবেই আর ছাড় দিতে রাজি নয় বলে মন্তব্য করেছেন। কেন্দ্রের কঠোর নির্দেশে কায়সার হাসনাত যদি স্বতন্ত্র প্রার্থীতা প্রত্যাহারও করেন তাহলেও লিয়াকত হোসন খোকার পথ মোটেও সহজ হবে না। ভোটের মাঠে লিয়াকত হোসেন খোকাকে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে মাঠে রয়েছে স্বশিক্ষিত উপজেলার চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করা বিএনপি নেতা আজাহারুল ইসলাম মান্নানকে । মান্নান লেখাপড়া না জানলেও কাকে কি করে ম্যানেজ করতে হয় তা তিনি খুব ভালো করেই জানেন/বুঝেন। ধানের শীষের প্রার্থী হলেও আজাহারুল ইসলাম মান্নান শাসক দল ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে মহাপটু। তাই এই আসনে সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেয়া খুরই কঠিন।
নারায়ণগঞ্জ -৪ (ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জ) জেলার প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমানের নৌকার বিপরীতে লড়াই করছেন অপরিচিত জমিয়তে উলায়েম ইসলামীর নেতা মুফতি মনির হোসেন কাশেমী। এই কাশেমীকে নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ সংবাদকর্মীরাই ঠিক মতো চিনেন না। আর সাধারণ ভোটরগণ অনেকেই এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন, কে এই কাশেমী ? বাড়ী কই তার ? কোথা থেকে এখানে আসলেন ? তাকে চিনে কে ? এমন প্রশ্ন রেখে অনেকেই বলেছেন, শামীম ওসমানের মতো তুখোড় এমন রাজনীতিবিদের সাথে কাশেমীর ভোটের লড়াইয়ের দরকার ই কি ছিলো। ধানের শীষের প্রতীক পেয়েও শিল্পপতি শাহ আলম এক কিং মেকারের গভীর চক্রান্তে রাজনীতি থেকে শেষ পর্যন্ত বিদায় নিলেন অশ্রুসজল নয়নে। দলের পিছনে বিশাল অর্থ ব্যয় করেও শেষ পর্যন্ত টিকতে পারলেন না এই শিল্পপতি। অপরদিকে সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটের মাঠে টিকে থাকার ঘোষনা দিলেও শেষ মূহুর্তে রোববার (৯ ডিসেম্বর) মনোনয়ন প্রত্যাহার করে চমক দেখালেন।
নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাজোটের প্রার্থী ও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের জন্য। এই আসনে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। সাড়ে চার বছরের মাথায় আবারো ঘাম ঝড়ানো নির্বাচনে লড়াইয়ে নামছেন সেলিম ওসমান। ২০১৪ সালের ২৬ জুন উপ নির্বাচনে সাবেক সংসদ সদস্য এসএম আকরামের সাথে নির্বাচন করে জয়ী হন সেলিম ওসমান। উপ নির্বাচনে কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে সেলিম ওসমানকে তা তার ঘনিস্ট জনেরা সাথে থেকে উপলদ্বি করেছেন। আবারো একই প্রার্থী নতুন রূপে নতুন প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে এস এম আকরাম ভোটের মাঠে নেমেছেন চ্যালেঞ্চ করেই। জেলা বিএনপির অনেক নেতা এবারের নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে কাজ না করার ঘোষনা প্রকাশ্যে দিলেও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সাথে ভোটের লড়াইয়ে এস এম আকরামকে কোন ভাবেই ফেলে দেয়ার মতো প্রার্থী না বলেই মনে করেন আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মী।
আকাশের রঙ যেমন মূহুর্তে মূহুর্তে বদলায় ঠিক তেমনি রাজনীতিতে শেষ পর্যন্ত কি হয় তা নির্দিস্ট করে বলাও কঠিন।
Discussion about this post