আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও থামেনি পলিথিনের ব্যবহার। বাসাবাড়ির বর্জ্যের সঙ্গে ফেলে দেওয়া এ পলিথিন পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ। পরিবেশ রক্ষায় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ নগরের এসব পলিথিন সংগ্রহ করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি শুরুর প্রথম ৬ মাসে সিটি করপোরেশন এলাকার ১০০ টন একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন সংগ্রহ করে রিসাইক্লিং সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
বর্জ্য থেকে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন সংগ্রহ করে পুনঃচক্রায়নের এ উদ্যোগ নিয়েছে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার বাংলাদেশ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী অংশীদার হয়ে কাজ করছে ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এবং ই-ওয়াই (আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়ং এলএসপি)। প্রকল্পটির মাধ্যমে আগামী তিন বছরে সিটি এলাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার টন পলিথিন অপসারণের আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এসব পলিথিন থেকে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী পণ্য তৈরি করা হবে।
পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলেন, পলিথিন পচে না, নষ্ট হয় না। বরং মাটি নষ্ট করে দেয়। সেখানে কোনো ফসল হয় না। পলিথিনের বিরুদ্ধে আইন হলেও কার্যকারিতা নেই। একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিনকে বহুবার ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য ইউনিলিভারের মতো অন্য সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরে প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। ২৭টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন এক হাজার টন গৃহস্থালি বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এসব বর্জ্য সংগ্রহে নিয়োজিত ৩০০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তাঁরা গৃহস্থালি বর্জ্য সংগ্রহের পর সেগুলো শহরের আল আমিন নগর, জালকুড়ি, বন্দর ও শিমরাইলে ড্যাম্পিং করা হয়। আগে গৃহস্থালি বর্জ্যের সঙ্গে প্লাস্টিক বোতল সংগ্রহ করতেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। কিন্তু একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন বর্জ্যের মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকত। কিছু পলিথিন নালা দিয়ে নদী-খাল–বিলে গিয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে নালা বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
প্রকল্পের অংশীদার ইএসডিওর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের ২২৮ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য থেকে পলিথিন সংগ্রহে তাদের সঙ্গে কাজ করছেন। প্রতিদিন তাঁরা দেড় টনের মতো পরিমাণ পলিথিন সংগ্রহ করে জমা দেন। প্রতি কেজি পলিথিন জমা দিলে তাঁরা ১০ টাকা করে পান। এ ছাড়া যেসব পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাসে ৬৫ কেজির ওপর যত পলিথিন জমা দেবেন, তাঁদের দেড় টাকা হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়।
তিন বছর ধরে সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবদুর রউফ। তিনি বলেন, আগে বর্জ্য থেকে পলিথিন সংগ্রহ করা হতো না। এখন এ পলিথিন জমা দিয়ে মাসে আয় করছেন অতিরিক্ত ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা। শ্রমিক খালেদা আক্তার বলেন, এ কাজ করতে গেলে সারাক্ষণ মাথাব্যথা, নাক ও ঘাড়ব্যথা করে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (পার্টনারশিপ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) গাজী তাওহীদ আহমেদ বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ইউনিলিভার পলিথিন নিয়ে কাজ করছে। আগে পেট বোতলসহ প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হলেও একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন কেউ সংগ্রহ করে না। গত ছয় মাসে ১০০ টন পলিথিন সংগ্রহ করে রিসাইকেলদারদের কাছে বিক্রি করেছেন তাঁরা। সেগুলো পুনঃচক্রায়নের মাধ্যমে জুতার সোল, মাছ ধরার জালসহ নানা প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর–পরিকল্পনাবিদ মঈনুল হোসেন জানান, প্রতিদিন সিটি করপোরেশনের তিনটি অঞ্চলে এক হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ টন পলিথিন রয়েছে। তাঁরা প্রতিদিন দেড় টনের মতো পলিথিন সংগ্রহ করছেন। এতে পরিবেশ ও জনস্বার্থের উন্নতি হবে, ধীরে ধীরে নারায়ণগঞ্জ একটি বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে।
Discussion about this post