পুুলিশের অনেক ভালো কাজ ম্লান হয়ে যায় কোন কোন ক্ষেত্রে অতি লোভের কারণে, তখন সমাজে পুলিশের দূর্ণাম মারাত্মক প্রভাব ফেলে । এমন ই এক অঘটনের জন্ম দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সদর থানার দারোগা (পিএসআই) আলাউদ্দিন আল আজাদ । শহরের সাহাপাড়ার গৃহবধু বৃষ্টি চৌধুরীর লাশ উদ্ধারের পর থেকে নানা ভাবে হত্যা মামলা দায়ের পর্যন্ত এবং মধ্যরাতে এই মামলার এজাহারভূক্ত এক আসামীকে ছেড়ে দেয়ার তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে শহরজুড়ে । ময়নাতদন্তের আগেই লাশের সৎকার না করেই বিশাল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে দারোগা আলাউদ্দিন আল আজাদ ।
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
শুক্রবার ১২ এপ্রিল মধ্যরাত ১ টা ৫৫ মিনিট । নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সামনে নিহত গৃহবধু স্বজনদের ভীড় । কারণ আসামীদের কে কোন ভাবেই যেন ছেড়ে দিতে না পারে পুলিশ। এতো রাতে কেন থানার সামনে বসে আছেন এমন প্রশ্নে মামলার বাদী মিঠুন চৌধুরী সহ সকলেই বলেন, বৃষ্টি চৌধুরী হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ডেইজী সাহাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । তাকে থানার একটি কক্ষে আটকের পর বসিয়ে রেখেছে । তাকে ছাড়াতে থানায় এসেছে ডেইজীর স্বামী ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার বিএসআরএম এর ডিলার রড় ব্যবসায়ী লিটন সাহা । তাকে ছেড়ে দিতে পারে তাই আমরা পাহাড়া বসিয়েছি ।
এর কিছুক্ষনের মধ্যেই দারোগা আলউদ্দিন আল আজাদ থানা থেকে বেড়িয়ে এসে সকলকে চলে যেতে বলেন একই সাথে প্রতিবেদক কে এতো রাতে থানার সামনে কি করেন ? বলে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে থানার ভিতরে চলে যান।
রাত ২ টা ১০ মিনিট সকলেই যেহেতু থানার গেইটের সামনে অবস্থান নিয়েছে তাই পিছনের গেইট দিয়ে দারোগা নিজেই হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত ৪নং আসামী ডেইজি সাহাকে বের করে এনে লিটন সাহার গাড়ীতে তুলে দিলে দ্রুত টেক্সী চলে গিয়ে অবস্থান নেয় শহরের ২নং রেল গেইট এলাকার আনন্দ রেস্তোরার সামনে।
এ সময় নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেটের সাথে কথা হয় মামলার আসামী ডেইজি সাহার স্বামী লিটন সাহার সাথে । তিনি জানান, দারোগা আলাউদ্দিন আল আজাদ ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায় চাকুরী করেছেন । তাই তার সাথে সম্পর্ক আছে । সেই সুবাধেই সামান্য কিছু দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে গেলাম । আর আমার স্ত্রীকে আসামী করা হলেই তো তাকে আটক রাখতে পারে না পুলিশ । তাই এতো রাতেই বিএসআরএম এ ডিলার হওয়ায় উপর থেকে ফোন করে ছাড়াতে পারলাম । অনেক দর কষাকষি করতে হয়েছে ।
মামলার বাদী মিঠুন চৌধুরী বলেন, আমরা রাত ১১ টা থেকে রাত দুইটা অব্দি পাহাড়া বসিয়েও থানা পুলিশকে থামাতে পারি নাই । তারা পিছনের গেইট দিয়ে হত্যা মামলার আসামীকে ছাড়লো কি করে ? সকাল থেকে হাসপাতালে থেকে আমার বোনের লাশ নারায়ণগঞ্জ মাসদাইর শ্বশানে নিয়ে যাচ্ছি । কি করবো বুঝতে পারছি না ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে সদর থানার কয়েকজন পুলিশ বলেন, এতো ভালো কাজ করে পুলিশ তার পরও এমন আলাউদ্দিনদের কারণে দূর্ণাম যেন পিছু ছাড়ে না পুলিশের । রাতে দেখেছি এক মহিলাকে ডিউটি অফিসারের পাশের কক্ষে বসিয়ে রাখতে। তাকে আবার ছেড়েও দিয়েছে । ধিক্কার জানানোর ভাষাও পাচ্ছি না । কি মন্তব্য করবো বুঝি না । হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত আসামীকে দারোগা আলাউদ্দিন কি করে স্বামীর গাড়ীতে তুলে দিয়ে আসে এ নিয়ে বিব্রত অবস্থায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সকল পুলিশ সদস্যরা ।
গৃহবধু বৃষ্টি চৌধুরী হত্যা মামলার বিষয়ে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দারোগা আলাউদ্দিন আল আজাদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মামলার আসামী স্বদীপ রায় ও তার বাবা সুভাষ রায় কে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হচ্ছে । এই মামলার অপর আসামদের গ্রেফতারের চেষ্টাও হচ্ছে । রাতের আধারে পিছনের হেইট দিয়ে এজাহারভূক্ত আসামী ডেউজীর স্বামীর দরকষাকষির পর কেন গাড়ীতে তুলে দিয়ে আসলেন ? এমন প্রশ্নে দারোগা আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, এজাহার ভুক্ত আসামী হলেই কি তাকে আটক করা যায় নাকি ! তদন্তের পর তাকে আসামী বলা যাবে। তাহলে আটক করেছেন কেন ? এমন প্রশ্নে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে দারোগা আলাউদ্দিন আরো বলেন এ বিষয়ে ওসি সাহেবের সাথে কথা বলেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
থানার পিছনের গেইট দিয়ে মধ্যরাতে হত্যা মামলার আসামী ডেউজি সাহাকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম হতবাক হয়ে বলেন, “বলেন কি ! এমন ঘটনা ঘটেছে ?” আসামী ছেড়ে দেয়ার সকল তথ্য প্রমাণ রয়েছে এমন মন্তব্যের পর প্রতিবেদককে বলেন, আমি এই বিষয়ে জানি না । তবে খোজ নিয়ে দেখছি ।
Discussion about this post